রহিম বাদশা :
করোনা রোগী শনাক্ত অনুপাতে মৃত্যুর হারে সারাদেশের মধ্যে চাঁদপুর জেলার অবস্থান সর্বশীর্ষে। এ পর্যন্ত দেশে গড় মৃত্যুহার যেখানে ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ সেখানে চাঁদপুর জেলায় করোনায় মৃত্যু হার প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ। স্বাস্থ্য বিভাগীয় কর্মকর্তারা এ জন্য কিছু কারণ ব্যাখ্যা করেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গতবছর মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত চাঁদপুর জেলায় ৫ হাজার ১৮৭জন কোভিড রোগী ধরা পড়েছে। সরকারি হিসাবে এই জেলায় আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৮৩জনের। মৃত্যু হার ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ, যা দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ।
যদিও চাঁদপুর সিভিল সার্জন অফিসের হিসেব অনুযায়ী, ওই দিন পর্যন্ত চাঁদপুর জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ২৩৫জন আর মারা গেছেন ১২৫জন। এই হিসেবের পার্থক্যেরও ব্যাখ্যা দিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ। সিভিল সার্জন জানিয়েছে, ঢাকাসহ দেশের অন্য স্থানে যারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তাদের সবাইকে চাঁদপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত করেছে অধিদপ্তর। আমরা শুধুমাত্র চাঁদপুরে শনাক্তকৃতদের মধ্যে মৃতদের তালিকা করেছি।
চাঁদপুরের সীমান্তবর্তী জেলা কুমিল্লায় এ পর্যন্ত ১৩ হাজার ৫৯৮জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মারা গেছেন ৬৮৫জন, মৃত্যু হার ৫ দশমিক ০৪ শতাংশ। আর মোট মৃত্যুর সংখ্যার বিচারে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পরেই কুমিল্লার অবস্থান। চাঁদপরের আরেক সীমান্তবর্তী জেলা মুন্সীগঞ্জে মৃত্যুর হার ৪ দশমিক ০৭। এছাড়া সীমান্তবর্তী জেলা শরীয়তপুরে মৃ্ত্যুর হার ২.৭৩, লক্ষ্মীপুরে মৃত্যুর হার ৩.৫৭ এবং বরিশালে মৃত্যুর হার ২.১ শতাংশ। অদূরবর্তী নারায়ণগঞ্জে এই হার ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
চাঁদপুর সিভিল সার্জন অফিসের হিসেব অনুযায়ী, ২৫ জুন পর্যন্ত জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৫ হাজার ২৩৫জন। এর মধ্যে কিছু লোক অন্য জেলারও আছেন। মারা গেছেন ১২৫জন। সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ৭৩৮জন। চিকিৎসাধীন ৩৭২জন। মোট শনাক্তকৃত রোগী প্রায় অর্ধেক (২ হাজার ৪৬১জন) রোগী চাঁদপুর সদর উপজেলার। চাঁদপুরে সর্বোচ্চ ৪৮জন মারা গেছেন সদর উপজেলায়। অর্থাৎ সারা জেলার মধ্যে সর্বাধিক রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর হার সদর উপজেলায়।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজেদা বেগম পলিন বলেন, মূলত করোনা সংক্রমের শুরুর দিকে চাঁদপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ফেরত রোগীর আধিক্য ও মৃত্যুর ঘটনা বেশি ঘটেছে। তাছাড়া উপসর্গে মৃত প্রায় সবার নমুনা সংগ্রহ করে করোনা টেস্ট করিয়েছি আমরা। সব মিলিয়ে এখানে মৃত্যুর হার বেশি ছিল। তবে বর্তমানে মৃত্যুর আর আগের চেয়ে অনেক কম।
চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, মূলত আশপাশের জেলা বিশেষ করে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম থেকে প্রচুর করোনা আক্রান্ত রোগী চাঁদপুরে প্রবেশ করেছে। তাছাড়া ভৌগলিক কারণে চাঁদপুর দেশে বেশ কয়েকটি জেলার নৌ ও রেল ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ কারণে এখানে শনাক্ত ও মৃত্যুর হার তুলনামূলক বেশি ছিল। এখন মৃত্যুর হার অনেক কমেছে। এই জেলায় নমুনা সংগ্রহ বেশি হওয়া এবং উপসর্গে মৃতদের প্রায় সবার নমুনা সংগ্রহ হওয়ায় মৃত্যুর হার বেশি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ আরো বলেন, শুরুর দিকে আমাদের এখানে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন, হাইফ্লো নেইজল ক্যানুলা- কিছুই ছিল না। আবার মানুষজনও বাড়িতে চিকিৎসা নিত, হাসপাতালে আসতে চাইত না। শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে আসতো। সব মিলিয়ে তখন মৃত্যু বেশি ছিল। পিসিআর ল্যাব না থাকায়ও রোগী শনাক্ত ও চিকিৎসা বিম্বলিত হতো। এখন পিসিআর ল্যাব, সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট, হাইফ্লো নেইজল ক্যানুলার ব্যবস্থা হওয়ায় মৃত্যুর হার কমেছে।