বিশেষ প্রতিবেদক :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া এড়াতে এবং নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে ডামি প্রার্থীর কথা বলেছিলেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার আগে গত ২৬ নভেম্বর গণভবনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভা করেন তিনি। সেই সভায় যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন তাদেরকে প্রয়োজনে ‘ডামি প্রার্থী’ রাখার নির্দেশনা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। যারা দলীয় মনোনয়ন পাবেন না তাদের প্রতি নির্দেশনা ছিল দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার।
কিন্তু চাঁদপুরের আসনগুলোতে এর উল্টো হয়েছে। চাঁদপুরের ৫টি আসনের একটিতেও ’ডামি স্বতন্ত্র’ প্রার্থী নেই। প্রতিটি আসনেই একাধিক প্রার্থী থাকায় ’ডামি স্বতন্ত্র’ প্রার্থী রাখার প্রয়োজন হয়নি নৌকা প্রতীক পাওয়া প্রার্থীদের। উল্টো যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন তারা সবাই ‘বিদ্রোহী স্বতন্ত্র’ হিসেবে চিহ্নিত। এসব স্বতন্ত্র প্রার্থী আসলেই ‘ডামি স্বতন্ত্র’ নাকি ‘বিদ্রোহী স্বতন্ত্র’ এ নিয়ে অবশ্য পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত ও আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
অনেকেই মনে করছেন, দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া এসব প্রার্থী মূলত ‘বিদ্রোহী স্বতন্ত্র’ প্রার্থী। কেননা তারা সবাই নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করছেন। এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীর মাধ্যমে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর উপকার হওয়া তো দূরের কথা বলতে গেলে তারাই এখন নৌকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি। আর ডামি প্রার্থী হলে তারা কখনোই নৌকার বিরোধীতা করতেন না এবং পরোক্ষভাবে নৌকার প্রার্থীর জন্য সহায়ক কর্মকান্ড করতেন।
নির্বাচনী বিশ্লেষকদের মতে, ডামি প্রার্থী হলেন এমন একজন প্রার্থী যিনি সাধারণত কোন উদ্দেশ্য বা জয়ের বাস্তবসম্মত সম্ভাবনা ছাড়াই নির্বাচনে দাঁড়ান। ডামি প্রার্থী তার মূল প্রার্থীকে সার্বিকভাবে সহায়তা করেন। ডামি প্রার্থীর মাধ্যমে অতিরিক্ত পোলিং এজেন্ট নিয়োগ, মূল প্রার্থীর সম্ভাব্য নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী/প্রার্থীদের ভোটে ভাগ বসানো ও তাদের বিরুদ্ধে যৌথভাবে নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ পেশ, নির্বাচনী ব্যয় সমন্বয়সহ ঘোষিত-অঘোষিত নানা সুবিধা পেয়ে থাকেন ডামি প্রার্থী রাখা মূল প্রার্থী। অন্যদিকে দল মনোনীত প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও একই দলের অন্য কোনো নেতা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করে দলীয় ভোটে ভাগ বসানো কিংবা দলীয় প্রার্থীর ক্ষতির কারণ হওয়াকে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
বিশ্লেষকদের এসব বিশ্লেষণ অনুযায়ী চাঁদপুরের ৪টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা আওয়ামী লীগ নেতারা মূলত ‘বিদ্রোহী স্বতন্ত্র’ হিসেবে গণ্য। চাঁদপুর-১ আসনেও এমন একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। তার মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় তিনি নির্বাচন করতে পারেননি। বাকী ৪টি আসনেই এবার আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া নেতাদের। তাই এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীকে কোনোভাবেই ’ডামি প্রার্থী’ হিসেবে দেখছেন না আওয়ামী লীগের প্রার্থী কিংবা তাদের কর্মী-সমর্থকরা।
দলীয় প্রার্থী ঘোষণার দিনে ২৬ নভেম্বর গণভবনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী বলেন, দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা সেদিন মূলত যারা দলীয় মনোনয়ন পাবেন তাদের উদ্দেশ্যে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া এড়াতে প্রয়োজনে ডামি প্রার্থী রাখার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আর যারা দলীয় মনোনয়ন পাবেন না তাদেরকে দলীয় প্রার্থী ও নৌকার পক্ষে কাজ করতে বলেছিলেন। তারা আরো বলেন, “শেখ হাসিনা চেয়েছিলেন ’ডামি স্বতন্ত্র’ আর চাঁদপুরে সব ‘বিদ্রোহী স্বতন্ত্র’!”
এদিকে চাঁদপুর-৩ ও চাঁদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া তার বিভিন্ন নির্বাচনী পথসভা ও উঠান বৈঠকে বলে আসছেন ’দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের আলোকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দিতে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।’ তিনি ও তার অনুসারী নেতা-কমীরা এটিও বলতে থাকেন যে ‘নৌকা ও ঈগল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক’। এ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে কিছুটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। তবে চাঁদপুরের নৌকার প্রার্থীদের সাথে ভার্চুয়াল নির্বাচনী জনসভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা চাঁদপুরের ৫টি আসনেই নৌকা প্রতীকের জন্য ভোট চেয়েছেন ভোটারদের কাছে।