১৪৪ ধারা জারি : বিজিবি মোতায়েন : তদন্ত কমিটি গঠন
নিজস্ব প্রতিবেদক :
কুমিল্লায় দুর্গাপূজার মন্ডপে পবিত্র কোরআন শরীফ অবমাননার পর হাজীগঞ্জে মুসল্লীদের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের বাধা, সংর্ঘষ ও গোলাগুলির ঘটনায় ৪জনের মৃত্যুর খবর করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ৩ যুবক ও ১ কিশোর রয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৩জন বুধবার রাতে ও ১জন বৃহস্পতিবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে মৃত্যুবরণ করেন।
এই ঘটনার পর বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় সংসদের হুইপ, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজিসহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা হাজীগঞ্জ পৌর এলাকায় হামলার শিকার কয়েকটি পূজামন্ডপ পরিদর্শন করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হাজীগঞ্জে অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি দুই প্লাটুন বিজিপি মোতায়েন করা হয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ দুস্কৃতকারীদের ধরতে তৎপর রয়েছে। ইতোমধ্যে ৭জন আটক হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশের গুলিতে হাজীগঞ্জে ৪জন মৃত্যুবরণ করেছে। এর মধ্যে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩জন ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১জন মৃত্যুবরণ করেছে।
নির্মাণাধীন একটি বিল্ডিংয়ের ৮ তলায় পুলিশের গুলিতে শ্রমিক নিহতের ঘটনায় প্রশ্নের জবাবে ডিআইজি বলেন, পুলিশ জনগণের জানমাল ও আত্মরক্ষার্থে গুলি করেছে। সঙ্গত কারণে সেখানে গুলি যেতে পারে।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনার পর হাজীগঞ্জ পৌর এলাকায় বুধবার রাত ১২টার পর থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এ ঘটনা পুলিশসহ অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছেন।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, হাজীগঞ্জে মন্দিরে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবে।
জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ এমপি বলেন, মৌলবাদী ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করার হীন চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, তখনই মৌলবাদী ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ শক্তি দেশের উন্নয়ণে বাধাগ্রস্থ করার হীন চেষ্টা শুরু করে।
তিনি বলেন, কোন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি কখনই অন্য ধর্মের প্রতি আঘাত করতে পারেনা। সবসময় উশৃঙ্খল ও ধর্মান্ধ ব্যক্তিরাই অন্য ধর্মের প্রতি আঘাত করে।
তিনি আরো বলেন, যে সকল উশৃঙ্খল ব্যক্তিরা হাজীগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করছে কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা। সবাইকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আইনের আওতায় আনা হবে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছিরউদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম দুলাল পাটওয়ারী, হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আ স ম মাহবুব-উল আলম লিপন, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল, কচুয়া পৌরসভার মেয়র নাজমুল আলম স্বপন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী মো. মাইনুদ্দীন, হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ¦ হেলাল উদ্দিন মিয়াজী প্রমুখ।
বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার লক্ষ্মী নারায়ণ জিউর আখড়া (ত্রিনয়নী), দি বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠ মন্দির, পৌর মহাশ্মশান, জমিদার বাড়ীসহ কয়েকটি পূজামÐপে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন : টাইলস মিস্ত্রী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সুন্দরপুর বাগডাঙা এলাকার সামছুর ছেলে বাবলু (৩৫), হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার ১১নং ওয়ার্ড রান্ধুনী মুড়ার শুকু কমিশনার বাড়ির তাজুল ইসলামের ছেলে আল আমিন (১৮) ও একই ওয়ার্ডের সেকান্দর বেপারী বাড়ির মো. ফজলুর ছেলে হৃদয় (১৪)। এ ছাড়া কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে পৌরসভাধীন রান্ধুনীমুড়ার বাচ্চুর ছেলে গ্রামের শামীম (১৯)।
বুধবার রাতে হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার একটি মিছিল বের করে। এ সময় সেখান থেকে কে বা কারা মন্দিরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি নিক্ষেপ করে।