অনৈতিহাসিক : কবিতা নয় গদ্যও নয়

মুহম্মদ শফিকুর রহমান :

কবি হেলাল হাফিজ একবার ছোট্ট কবিতা লিখেছিলেন- “এমন কেউ কি আছেন/আকাশটাকে একটু উপরে/তুলে দিন/আমি দাঁড়াতে পারছিনা”। যদ্দুর মনে পড়ে এই টুকুই কবিতা। এই কবি অবশ্য লেখেন কম। যা লেখেন প্রাণ ছুঁয়ে যায়, হৃদমাঝারে ঝড় ওঠে। আমি কবিতা লিখিনা, কবিতা লিখতে জানিনা, কবিতা বুঝিওনা, তাই পদ্যও নয় গদ্যও নয়, কিছু মনের কথা লিখে পাঠালাম:
যদি হেলাল হাফিজের মত
একটি কবিতা লিখতে
পারতাম
বলতাম
কে আছেন এমন
রাস্তাটা কোভিড মুক্ত
করে দিন
অফিসে যাবার সময় এখন
ফিরে এসে কবরস্থানে
যেতে হবে
ক্যানো জ্লতে চান?
একে একে মনীষার তিরোধান
বয়সের নেই ব্যবধান
ছেলে-বুড়ো সব কভিডে
আক্রান্ত
হতে
হতে
হতে
এই শ্যামল পিথ্বি
বিবর্ন ফুলের বাগান।।
বাড়ি-ঘর শূন্য হতে
কে কখন দেখেছে
কত বড় বড় যুদ্ধ হয়েছে
১৯১৭
১৯৪৫
১৯৭১
লাখো কোটি মানুষ মরেছে। এমন বিরাণভূমি আগে কেউ কি কখনো দেখেছে?
আমেরিকা
রাশিয়া
কানাডা
নেদারল্যান্ড
অস্ট্রেলিয়া
যেখানে মানুষের চেয়ে গাছ বেশি। উর্বর আবাদীভূমি পড়ে আছে, চাষবাস নেই।সামাজিক দূরত্বের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য ঘোষণা দিতে হয়না। পুলিশ মিলিটারি নামতে হয়না। প্রকৃতি সামাজিকদূরত্ব সাজিয়ে রেখেছে। তবু কি কোভিড ফিরে গেছে? যায়নি, বরং আরো নিরাপদ আশ্রয়। প্রবেশদ্বার উন্মুক্ত। ক্ষণে ক্ষণে নিস্তেজ হচ্ছে জীবন-জীবিকা। আকবর বাদশাহর সাথে হরিপদ কেরানির কোন তপাত নেই। সব একাকার।

নুরুল ইসলাম বাবুল, লতিফুর রহমান সম্পদের পাহাড় গড়ে ছিলেন। কিন্তু আমাদের আনিসুজ্জামান স্যার, ডিপি বড়ুয়া, জামিলুর রেজা চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, সাহারা খাতুনের মত একই খাটিয়ায় চলে গেলেন। “ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন”। সারা পৃথিবী ঘুরে মনি মুক্তা সংগ্রহ করে বাড়ি বানালেন, ফুল দিয়ে সাজালেন সব ভেস্তে গেল, how much land does a man require টলস্টরের মত সাড়ে তিন হাত মাটির ঘর। বাতি নেই, ফ্যান নেই, এয়ার কুলার নেই, সামনে পরীক্ষা “মান রাব্বুকা”।

রেজাল্ট আউট হলে দেখা যাবে পাশের হার কত? গোল্ডেন ফাইভ কত, জিপিএ ফাইভ কত? আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ক’দিন আগে একটি কথা বলেছেন ‘যত বাড়ি-ঘর ব্যাংক ব্যালেন্স বানাইনা কেন, ভুলে গেলে চলবেনা, এর কিচ্ছু নিয়ে কবরে যাওয়া যাবেনা। মইরা গেলে বাতি নাইরে করবে’।

এই অন্ধকারে পোকামাকড়ে শরীরটাকে খেয়ে সাবাড় করে দেবে। আত্মা বা রুহ কোথায় যাবে একমাত্র রাব্বুল আলামিন জানেননা। আর কেউ জানেনা। আর এবার তো কবরেরই পরিবেশ।
শূন্য বাড়ি ঘর
জঙ্গলে গাছের পাতা
ফুল ফল
ঝরতে
ঝরতে
ঝরতে
বছর মাস
কত দেশ
গ্রাম নগর
নদী সাগর জলাশয়
মখলুকাত শূন্য
কত আর শূন্য ঘরে
থাকা যায়
হে বন্ধু বিদায়।।
দাওনা একটা কবিতা লিখে বন্ধু হেলাল
“খোকা ঘুমালো
পাড়া জুড়ালো
বগি এলো দেশে
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে
খাজনা দেব কিসে?”
সব বাড়ি ঘর শূন্য হয়ে যাবে। মানুষের সাজানো ঘর-সংসার, রঙ্গিন ড্রয়িং রুম সব দখল করে নেবে বনের পশুরা। কিন্তু পশুদের তা কখনো পছন্দ নয়। বন্যেরা বনে সুন্দর। বনে খাবার আছে, নিরাপদ বিছানা। বনে বসবাস ওদের জন্মগত অভ্যেস। ওরা বনে থাকে বনে শিকার করে কাঁচা মাছ মাংস খায়, ওদের এনে সাজানো ঘরে রাখা গেলে তারা পছন্দ করেনা, বরং যে যেভাবে পারে খাঁচা ভেঙ্গে বেরিয়ে আবার বনে জঙ্গলে চলে যায়।

এখন সৃষ্টি সেরা মানুষেরও
একই পরিবেশ
আবার যদি
হয় দেখা কখনো
কুশল বিনিময় হবে
ছেলে-মেয়েরা
কেমন আছে?
প্রিয়তমা স্ত্রী ভালো আছে তো?
প্রতিদিন গরম চা
লেবু পানি
ভিটামিন সি
দেয় তো?
এখন এসবের বড় প্রয়োজন
কি জবাব দেবে
আর দেব
পাঁচ দশকের সংসার
কোথাও কেউ নেই
নেই
নেই
নেই
শূন্য ঘরে একা
এত লাশ বহিবার শক্তি দাও
দয়াময়
‘গাফুরুর রাহিম’
‘রহমানুর রাহিম’
ইয়া শাফিয়ুল মুজনেবিন
আমিন
আমিন
বন্ধুবর কবি দাওনা একটা কবিতা
লিখে
চেয়ে দেখ রাস্তার কুকুরেরা
করোনায় আক্রান্ত
ফুটপাথে শুয়ে কাতরাচ্ছে
পেটে খিদে
ডাস্টবিনগুলো বর্জ্য শূন্য
এক দানা শস্য নেই
কাকেরা এখান থেকে ওখানে
এ ডাস্টবিন থেকে ও ডাস্টবিনে
উড়ে বেড়াচ্ছে
পরিবেশবাদীরা আইসোলেশনে
কোয়ারেন্টাইনে
কুকুরের জন্য কোন
হাসপাতাল নেই
কোয়ারেন্টাইন নেই।।

আনিসুজ্জামান স্যার আর কোনদিন প্রেসক্লাবে এসে আমার খোঁজ করবেন না। গোলটেবিলে টক শো’তে এসে জামিলুর রেজা চৌধুরী মোহাম্মদ নাসিম এমাজুদ্দীন আহমদ স্যার ক্লাব সভাপতির কক্ষে বসবেন না। চা খাবেন না, জানতে চাইবেননা কেমন আছো?

এখন অবশ্য সভাপতি সাইফুল আলম, যুগান্তরের সম্পাদক, সেও তার কেবিনের দরজা বন্ধ করেননা। প্রিয়ন মাহবুবকে বলা আছে সম্মানীয় মানুষরা এলে চা-কফিতে আপ্যায়ন করতে। ডিপি বড়ুয়া আমাদের বড়ুয়া দা লাঠি ভর দিয়ে অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে আর আসবেননা, বলবেন না শফিক কেমন আছেন? আবু জাফর পান্না, কবি মাশুক চৌধুরীর মিষ্টি হাসি আর দেখা যাবেনা।

প্রেসক্লাবের কোনের টেবিলটি
কেমন আছে জানিনা
ভালো নেই এটা বলতে পারি
খন্দকার মোজাম্মেল হক
গেদু চাচার চিঠি খ্যাত সেই
সাংবাদিক বন্ধুটি আর
কোনের টেবিলে আসবেন না
বসবেন না
মিষ্টি মিষ্টি কথা দিয়ে
মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলে
সবাইকে মুগ্ধ করে রাখবেন না
বিনয়ী
সব সময় আমার ও কামরুলের
উল্টো দিকে বসতেন
আমরা ডেকে পাশে বসাতাম
যার যেখানে জায়গা।।
সস্ত্রীক আতিয়ার রহমান
জেলাস দ্য গমগম
শামসুদ্দিন পেয়ারা, জাহিদুজ্জামান ফারুক
জাফর ওয়াজেদ
মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল
মোল্লা জালাল
কুদ্দুস আফ্রাদ
ফরাজী, শামীম, মধু
সোমা, এলিস, মিনু, দুলাল
পি আর, কবি মোশাররফ, ফারুক
খোকন, আরজু, তরুণ তপন
গোলাম মহিউদ্দিন খান
কামরুল ইসলাম চৌধুরী
মাহমুদ শফিক, দুলাল আচার্য
বেয়ারা মুসলিম
কারো কারো খবর জানি
সবার জানিনা
আবার যদি দেখা হয়
জানতে চাইবো
কেমন আছেন?
আমি ভালো আছি।।
স্বপ্ন দেখতে হবে
এ পি জে আবদুল কালাম বলেছেন
“ভালা-এ-তুম ভুকে হুঁ না কিঁউ
ফিরভী স্বপ্ন দেখনা চাহিয়ে
সুয়ে হুয়ে স্বপ্না
কুই স্বপ্না মেহি
স্বপ্না উহো হ্যায়
জু হুশ ও হাওয়াস মে দেখতা হায়”
আমিন

ঢাকা- ১৭ জুলাই ২০২০
লেখক- এমপি, সাবেক সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব
ই-মেইল- balisshafiq@gmail.com

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)