অনৈতিহাসিক : খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে পৃথিবী

মুহম্মদ শফিকুর রহমান :
১৯৭১ সাল মুক্তিযুদ্ধের কাল। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহর। পাকিস্তানী সামরিক জান্তা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। তার আগেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলেন- “This may be my last message, from today Bangladesh is independent, I call upon the people of Bangladesh wherever you might be and with whatever you have to resist the army of occupation to the last. Your fight must go on until the last soldier of the Pakistan occupation army is expelled from the soil of Bangladesh and final victory is achieved (বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র তৃতীয় খন্ড ১৯৮২ পৃষ্ঠা ১)
তবে যেটি দিবালোকের মতো ঐতিহাসিক সত্যতা হল আমরা বঙ্গবন্ধুকেই আমাদের হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি এবং রাষ্ট্রনেতা হিসেবে তার কথাতেই যুদ্ধে গেছি এবং দেশ হানাদার মুক্ত করে স্বাধীনতাকে নিরংকুশ করেছি। এটি ইতিহাস। এর বাইরে কোন কথা নেই কোনো ইতিহাস নেই। বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে যে ঘোষণাটি দেন তাও আগেই ড্রাফ্ট করা ছিল। অর্থাৎ তিনি প্রস্তুত ছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাতেই ২৩ বছরের নির্যাতিত শোষিত রক্ত ঝরানো বাঙালি রাতারাতি সশস্ত্র হয়ে প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু যুদ্ধের জন্য চাই উপযুক্ত প্রশিক্ষণ অস্ত্র এবং গোলাবারুদ। সে ব্যবস্থাও বঙ্গবন্ধু করে গিয়েছেন। কোথায় যেতে হবে কার সাথে দেখা করতে হবে সব ঠিক করে রেখেছেন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের নায়ক বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ তোফায়েল আহমেদ এর কন্ঠে শুনেছি বঙ্গবন্ধু তাকে এবং মনি ভাইকে (শেখ ফজলুল হক মনি) আগেই বলে দেন কলকাতায় কোন বাড়িতে যেতে হবে কার সাথে দেখা করতে হবে। কলকাতায় যার সাথে দেখা করতে হবে তিনি চিত্ত সুতার। একইসঙ্গে সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দিন আহমেদকেও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে যান।

বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণাটি দেন ২৫-২৬ মার্চ রাত সাড়ে বারোটায়। ঘোষণাটি তৎকালীন ইপিআর (বিজিবি) এর মাধ্যমে দেশে-বিদেশে প্রচারিত হয় যার স্বাক্ষর রয়েছে ২৬,২৭ মার্চের গ্লোবাল মিডিয়ায়। তারপরও কিছু বেয়াদব (তারেক রিজভী) বলে বঙ্গবন্ধু জাতিকে অরক্ষিত রেখে পাকি আর্মির কাছে ধরা দিয়েছেন। এদের মুখও আলমের পচা সাবান দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। নইলে দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকবে।

এতক্ষণ ছিল ভূমিকা
এবার মুল আলোচনায় যাব। বঙ্গবন্ধুর ২৩ বছরের সংগ্রাম নির্যাতনের চূড়ান্ত পর্যায়ে স্বাধীনতার ঘোষণায় আগেই বলেছি নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালি রাতারাতি যে যেভাবে পেরেছে অস্ত্র জোগাড় করে প্রতিরোধ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় যা মুক্তিযুদ্ধে রূপ নেয়, মুখে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগান। পাকিস্তানি মিলিটারিরা ২৫ মার্চ সন্ধ্যার পরপরই ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নাম দিয়ে গণহত্যা নারী নির্যাতন শুরু করে। দলে দলে বাঙালি সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পাড়ি জমায় এক কোটি শরণার্থী হয়। বাঙালি তরুণ বিশেষ করে ছাত্রলীগ যুবলীগ শ্রমিক লীগ এবং গ্রাম-গ্রামান্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তরুণরা দল বেঁধে কেউ আগরতলা হয়ে কেউ কলকাতা হয়ে মেঘালয় আসাম আগরতলা উত্তর প্রদেশসহ বিভিন্ন সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সমবেত হয়। সে এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা। তাছাড়া বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে ও ইপিআর পুলিশ লাইন থেকে বেরিয়ে আসা সদস্যরা দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। ভারতে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীরা প্রশিক্ষণ শেষে দলে দলে দেশের অভ্যন্তরে প্রতিরোধ যুদ্ধে বা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। গ্রামে গ্রামেও স্থাপিত হয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র অর্থাৎ ইন্ডিয়া ট্রেইনড এবং লোকাল ট্রেইনড নামে পরিচিতি লাভ করে। কিন্তু সবার সাথেই ছিল ভারতীয় অস্ত্র এস এল আর এসএমজি এলএমজি গ্রেনেড ব্যায়নেট ইত্যাদি। ছাত্রলীগ তখন এসএলআর এর নাম দেয় শেখ লুৎফুর রহমান গান বা এসএমজির নাম দেয় শেখ মুজিব গান। কলকাতার পার্কস্ট্রিটে স্থাপন করা হয় স্বাধীন বাংলার বিপ্লবী সরকারের অফিস। একে জয়বাংলা অফিসে বলা হত। এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। মূলত তখন বাংলাদেশের মানুষকে বলা হতো জয় বাংলার লোক এমনকি তখন চোখ ওঠা রোগ দেখা দিয়েছিল এটির নাম ছিল জয় বাংলা’ রোগ। মুক্তিযুদ্ধের মাঝে বিবিসি সংবাদ প্রবাহ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের চরমপত্র সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল। ভারতীয় জাতীয় মিডিয়া আকাশবাণীর দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, নীলিমা শ্যামল, অনিল চট্টোপাধ্যায় এদের সংবাদ পাঠও ছিল মুক্তিযোদ্ধা ও জনগণের মধ্যে জনপ্রিয়। “শোনো একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের..”। “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি”। “কারার ঐ লৌহ কপাট ভেঙ্গে ফেল কররে লোপাট”। “পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল রক্ত লাল”। “মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি” ইত্যাদি গানগুলো ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল। সেইসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ বাজতো স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র আকাশবাণীতে ‘বজ্রকণ্ঠ’ শিরোনাম দিয়ে। এই সব আয়োজন-এর পেছনে ভারতীয় সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী এবং ইন্দিরা প্রশাসন কাজ করেছে।
এই গেল একদিক আরেক দিক হলো সীমান্ত অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধারা যত যুদ্ধ করেছে সব যুদ্ধেরও পেছন থেকে সমর্থন সহযোগিতায় ছিল ভারতীয় আর্মি। পশ্চিম সীমান্তে ও পাকিস্তান আক্রমণ করলে ভারতীয় বাহিনী পাল্টা আক্রমণ করে পাকিস্তানকে হটিয়ে দেয় এমনকি লাহোর পর্যন্ত ঢুকে পড়েছিল। এইভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ১৩০০০ নিয়মিত সেনা মতান্তরে ১৭০০০ শহীদ হন। অর্থাৎ আমাদের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত এবং ভারতীয় শহীদ মিত্রবাহিনীর রক্ত এক হয়ে মিশে যে ঐতিহাসিক মৈত্রী বন্ধন রচিত হয়েছিল অর্ধশতাব্দী আগে তা কোনদিন মুছে যাবার নয়।
দ্বিতীয়ত ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী গান্ধী, এই মহীয়সী নারী ঐ নয়মাসে মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের কাছে মাতৃরূপেণ ভূমিকা পালন করে বাঙালির আপমনন হয়ে ওঠেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের মাঝে তিনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে ৩০-এর ওপর রাষ্ট্র ভ্রমণ করেন আমেরিকাসহ। আমেরিকা সফরকালে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল কেন পাকিস্তানের অভ্যন্তরীন ব্যাপারে ভারত হস্তক্ষেপ করছে? মনে পড়ে (সংবাদ) ইন্দিরা গান্ধী জবাব দিয়েছিলেন আমি গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে নির্যাতিত মানবতার পক্ষে সমর্থন দিয়েছি। বাংলাদেশে এখন গণহত্যা চলছে। আমেরিকাও এক সময়ে ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে হস্তক্ষেপ করেছে। একইসঙ্গে মিসেস গান্ধী বিভিন্ন দেশ সফরকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের কারাগার থেকে সুস্থ শরীরে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে জনমত সৃষ্টি করেন। মিসেস গান্ধী এও বলেছেন বঙ্গবন্ধু মুজিব গণতান্ত্রিকভাবে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনে পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টির নেতা কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক সরকার তার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পার্লামেন্ট না ডেকে রাতের আধারে গণহত্যা শুরু করে। মানুষ প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত দিয়ে লক্ষ কোটি ভারতে প্রবেশ করেছে, শরণার্থী হিসেবে মানবেতর জীবনযাপন করছে। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারেনা। প্রখ্যাত সাংবাদিক কলামিস্ট একুশের গানের রচিয়তা শ্রদ্ধেয় আবদুল গাফফার চৌধুরী তার এক লেখায় উল্লেখ করেছেন ৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা শেখ হাসিনার স্বামী প্রখ্যাত অনু বিজ্ঞানী ডঃ এম-ওয়াজেদ আলী মিয়া ও সন্তানদের নিয়ে ভারতে যেয়ে ইন্দিরা গান্ধীর আশ্রয়ে ওঠেন। ইন্দিরা গান্ধীই তাদের জার্মানি থেকে তার কাছে যাবার জন্য বলেন। সে সময় তাদের দেখাশোনা করার জন্য ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের আরেক অকৃত্রিম বন্ধু ও বাংলাদেশের জামাইবাবু (নড়াইলে বিয়ে করেন) শ্রী প্রণব মুখার্জিকে দায়িত্ব দেন। প্রণব বাবু কদিন আগে প্রয়াত হয়েছেন।
তৃতীয়তঃ দেশ শত্রুমুক্ত হবার সাড়ে তিন মাসের মধ্যে ভারত আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করে দিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের মাঝে আমরাই অনেক পুল কালভার্ট উড়িয়ে দিয়েছি পাকিদের যাতায়াতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে। যেমন চাঁদপুরের পূর্বপাশে মধুরোড রেল ব্রিজটি আমরা জহুরুল হক পাঠানের নেতৃত্বে উড়িয়ে দিয়েছিলাম। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে ভারতের সাথে যেসব সমস্যা ছিল যেমন গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি, ছিটমহল সমস্যা, সমুদ্রসীমা সমস্যা, তিস্তার পানিবণ্টন ইত্যাদি কেবল শেষেরটা বাদ দিয়ে শেখ হাসিনার ড্রাইনামিক নেতৃত্বে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হয়েছে। এতে করে আমাদের বাংলাদেশের আয়তন ১ লক্ষ ৪৮ হাজার বর্গকিলোমিটার থেকে বেড়ে ২ লক্ষ ৪৮ হাজার বর্গকিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে।

অন্যপ্রসঙ্গ : বদলে যাচ্ছে পৃথিবী
বাংলাদেশের বাজারে চীনের নিম্ন মানের জিনিসও দেদারছে পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশের বহু প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ দিন দিন বেড়ে চলেছে। চীন এখন বাংলাদেশের ডেভেলপমেন্ট পার্টনার বা উন্নয়ন সহযোগী। এ নিয়ে নানান মহলে নানান কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। অবশ্য স্নায়ু যুদ্ধের যুগও অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এখন চলছে অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীতার যুগ এবং এ প্রতিদ্বন্দিতায় বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে, এমনকি উপমহাদেশেতো বটেই, গোটা এশিয়ায়ও বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এখন রোল মডেল। শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপরিচালনায় যে ঈর্ষণীয় নেতৃত্বের নজির সৃষ্টি করেছেন তাতে বাংলাদেশ সবদিক থেকে নিরাপদ। তার কাছে বাংলাদেশ-ভারত ঐতিহাসিক সম্পর্ক বা বাংলাদেশ চীন সম্পর্ক আয়নার মত পরিস্কার। সবচেয়ে বড় কথা দেশের স্বার্থ তার কাছে সবার আগে। তবে কোভিড-১৯ বা করোনার প্রভাব বাংলাদেশের উন্নয়নে কিছুটা ভাটা পড়লেও দূরদর্শী প্রধানমন্ত্রী আস্তে আস্তে উত্তরণ ঘটাচ্ছেন। যারা চীনের বিনিয়োগে ভয় পাচ্ছেন বা ভারতের বিরুদ্ধে অযথা বাংলাদেশের অবস্থান কল্পনা করছেন তারা কিন্তু ঘরে ঘরে চীনা টাইলস লাগাচ্ছেন চীনা এয়ার কুলার ব্যবহার করছেন। বড় বড় প্রজেক্টে পার্টনার হয়েছে, যেমন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র নির্মাণ থেকে শুরু করে পদ্মা সেতুতে, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরে, চীন সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ তিস্তা মহাপরিকল্পনা দৈনিক জনকণ্ঠের গত ৩রা সংখ্যায় প্রধান শিরোনাম ও নিউজ ছিল এভাবে যে ‘মুজিববর্ষে উত্তরাঞ্চলের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার’।

এটি মেগা প্রকল্প এবং এতে ব্যয় হবে ৮ হাজার কোটি টাকা। চীনা প্রতিষ্ঠান এতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় গড়ে তোলা হবে ওয়াটার রিজাভয়ার তিস্তার দুই পাড়ে ২২০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ, বাদের দুই পাশে থাকবে সমুদ্র সৈকত-এর মত মেরিন ড্রাইভ, ওই রাস্তা দিয়ে পণ্য পরিবহন নদীপারের দুই ধারে গড়ে তোলা হবে হোটেল-মোটেল রেস্টুরেন্ট এককথায় পর্যটন কেন্দ্র। তিস্তা পার হয়ে উঠবে সুইজারল্যান্ড সিঙ্গাপুরের মতো মনোরম নগরী। এছাড়াও সৌর বিদ্যুৎ আধুনিক সেচ প্রকল্প কৃষি খামার গড়ে তোলা হবে। কয়েকদিন আগে লেখক-গবেষক মানবাধিকারকর্মী শাহরিয়ার কবিরের আয়োজনে ও সঞ্চালনায় একটি ভার্চুয়াল টকশোর আয়োজন করা হয় তাতে আমি শ্যামল দত্তসহ বেশ কয়েকজন জুমের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করি। তাতে বলা হয় কোনোভাবেই আমরা ১৯৭১ ভুলে যাইনা ভুলে যাবোনা। কেননা যে অস্ত্র দিয়ে আমরা একাত্তরে যুদ্ধ করেছি তা ছিল ভারতীয় এবং যে অস্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি তা ছিল চীনা অস্ত্র। এমনকি চীন স্বাধীনতার পর আমাদের জাতিসংঘ সদস্যেপদ প্রাপ্তির পস্তাবে ভিটো দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় তারা আমাদের স্বীকৃতি দেয়নি, দিয়েছে পরে জিয়া এসে যখন আবার দেশকে পাকিস্তান বানানোর পথে হাটতে শুরু করে তখন চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। এইসব মন থেকে যাবেনা কোনদিন। তবে এখন পৃথিবী দ্রুত বদলে যাচ্ছে। কে যে কার সাথে হাত মেলাচ্ছে সেটা বলা মুশকিল। বঙ্গবন্ধুও শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাথে চীন সফর করেন এবং সেই সফরের ওপর একটি মূল্যবান ভ্রমণ কাহিনী রচনা করেছেন। গ্রন্থটি এখনো আমার পড়ার সুযোগ হয়নি। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পরপরই চীন সফর করেন এবং তখন থেকেই চীনের আগ্রহ বাড়তে থাকে।
বস্তত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের জন্য রক্ষাকবচ হিসেবে বিবেচিত। কারণ ভারতের সাথে তিস্তার পানিবণ্টন সংকট সমাধান হয়নি এবং এই একটি সংকট সমাধান জরুরি। ভারত তিস্তার উজানে গজলডোবায় একটি সেচ প্রকল্প তৈরি করে। এতে বর্ষায় আমাদের দুই কুল ভাসিয়ে নিয়ে যায় আবার শুল্ক মৌসুমে তিস্তা শুকিয়ে পানির অকাল হয়। এবং উত্তরবঙ্গের লালমনিরহাট রংপুর নীলফামারী গাইবান্ধা কুড়িগ্রাম প্রভৃতি অঞ্চলে সেচ ব্যাহত হয়। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে আর সেই সংকট থাকবেনা বন্যা প্রতিরোধ করবে তেমনি শুল্ক মৌসুমে সেচের জন্য পানির অভাব হবেনা। আগেই বলেছি এটি উত্তরবঙ্গের জন্যে আশীর্বাদ।

এটি সম্পূর্ণরূপে উন্নয়নশীল বাংলাদেশের উন্নত অর্থনীতিতে দ্রুত এগিয়ে যাবার পদক্ষেপ। মহাপরিকল্পনা। একে কেন্দ্র করে যে বা যারা বাংলাদেশকে কোনো পক্ষে নিয়ে যাবার কথা বলে তারা সূক্ষ্মভাবে বর্তমান সরকার তথা বাংলাদেশের বিপক্ষে কথা বলে।।

ঢাকা – ৪ সেপ্টেম্বর ২০২০
লেখক – এমপি এবং সিনিয়র সাংবাদিক
সাবেক – সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব
ই-মেইল – balisshafiq@gmail.com

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)