আম্পানের ঝুঁকিপূর্ণ ১৪ জেলার মধ্যে চাঁদপুর : বৃষ্টি দিয়ে প্রভাব শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশের যে ১৪টি জেলায় সুপার সাইক্লোন আম্পান তান্ডব চালানোর আশঙ্কা রয়েছে তার মধ্যে চাঁদপুর জেলা অন্যতম। এ জন্য চাঁদপুর জেলাকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চাঁদপুরের চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ১০ ফুট অধিক উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর এমন পূর্বাভাস দিয়েছে।

পরিস্থিতি বুঝে চাঁদপুর জেলার হাইমচর, চাঁদপুর সদর ও মতলব উত্তর উপজেলার চর ও নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষকে নিকটস্থ আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের। কোনো কোনো চরের মানুষ রাতেই আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে শুরু করেছে। উল্লেখিত তিনটি উপজেলার ১২১টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

চাঁদপুর জেলা আবহাওয়া অফিস থেকে সর্বশেষ জানানো হয়েছে, ঢাকা আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী চাঁদপুর জেলাকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রাথমিক প্রভাব হিসেবে মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে হাল্কা ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। রাতে বৃষ্টির মাত্রা কিছুটা বেড়েছে। চাঁদপুরের আকাশে গুমোট পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

ঘূর্ণিঝড় আম্ফান সম্পর্কে মঙ্গলবার সকাল থেকে চরাঞ্চলের মানুষকে মাইকিং করে সতর্ক করা হয়েছে। দিনভর মাইকিং চলে ওইসব এলাকায়। বিশেষ করে মসজিদের মাইক থেকে ঘূর্ণিঝড়ের আগাম বার্তা প্রচার করা হয়। এছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও প্রস্তুতি নিয়েছে মঙ্গলবার দিনভর। চরের সাইক্লোন সেন্টার ও আশ্রায়ন প্রকল্পগুলো খোলা রাখা হয়েছে ।

অন্যদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ঢাকার আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় আম্ফান উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় (১৯ মে) চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৩০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে ২০ মে বিকাল/সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

আবহাওয়া অফিস আরও বলছে, ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিসহ ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার বেগে দম্কা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ১০ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছাসে প্লাবিত হতে পারে।

মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)