একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে

-ফজলুল হক

একুশে ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশের ইতিহাসে রক্তঝরা একটি দিন। ১৯৫২ সালের এই দিনে বাংলার দামাল ছেলেরা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে মাতৃভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ভাষার জন্য জীবন দিয়ে। প্রায় ২০০ বছরের বেনিয়া শাষণের অবসানের পর ১৯৪৭ সালে জন্ম হয় পাকিস্তান নামে একটি নতুন রাষ্ট্র। একাত্তরপূর্ব পাকিস্তান রাষ্ট্রের দুই অংশ, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে কেবল ১৩০০ মাইলের ভৌগোলিক দূরত্ব ছিল তা নয়, এই দুই অংশের মধ্যে অর্থনৈতিক ব্যবধান এবং বৈষম্য ছিল প্রকট। বাংলাভাষী সংখ্যাধিখ্য মানুষের বসবাস পূর্বপাকিস্তানে হলেও শাষণভার থাকে পশ্চিম পাকিস্তানীদের হাতে।

স্বাধীনতা লাভের অল্পদিনের মধ্যেই শাষকদল উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালীদের অধীকার ও স্বাধিকারে আঘাত করে। পূর্বপাকিস্তানের ছাত্র-জনতা এই ঘোষণার প্রতিবাদে রাজপথে নেমে আসে। আন্দোলন দমাতে পাকসরকার ১৪৪ ধারা জারি করে। পূর্বপাকিস্তানের আপামরজনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। সেই মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়াসেল ও গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে রফিক, সালাম, বরকত, জাব্বারসহ অনেকেই শহিদ হয়। আহত হয় অনেক বাঙালি। এভাবে ধারাবাহিক আন্দোলনের ফলে শাসকগোষ্ঠী বাধ্য হয় বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিতে।

এই সাফল্যের পথ ধরেই ‘৫৪র নির্বাচন, ‘৫৯এর গণঅভ্যুত্থান, ৬৬র ছয়দফা আন্দোলন এবং ১৯৭০এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নিরঙ্কুশ বিজয়। কিন্তু সমগ্র পাকিস্তানের নির্বাচিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিবর্তে ২৫শে মার্চ গভীর রাতে পাকবাহিনী পূর্বপাকিস্তানের ঘুমন্ত নিরীহ মানুষকে হামলা করে। ইতিহাসে যা বর্বরোচিত গণহত্যা নামে খ্যাত। ঐ রাতেই তারা শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে পশ্চিমপাকিস্তানের কারাগারে বন্দি করে। গ্রেফতারের আগে এক তার বার্তায় তিনি মুক্তিযুদ্ধের আহ্বান ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

পরবর্তীকালে স্বাধীনবাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে তাঁর পক্ষে এই ঘোষণাপত্রটি একাধিকবার পাঠ করা হয়। যা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের প্রেরণা জুগিয়েছে। বহিঃবিশ্বের সমর্থন ও সহযোগিতার অন্যতম নিয়ামকও ছিল এই ঘোষণা। একুশের উদ্দীপনায় ধারাবাহিক আন্দোলন- সংগ্রামের ফসল আজকের বাংলাদেশ। আর তাই গোটা জাতী একুশে ফেব্রুয়ারিকে উদযাপন করে পরম শ্রদ্ধায়।

লেখক : কবি ও চিত্রসাংবাদিক।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)