চাঁদপুরে এবার বাবার মৃতদেহ রেখে এসএসসি পরীক্ষা দিল সুমাইয়া

গাজী মোঃ মহসিন :
সারাদেশে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে গত ৩০ এপ্রিল রোববার। সব শিক্ষার্থী প্রতিদিন মা-বাবার দোয়া নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসে। কিন্তু বাড়িতে বাবার লাশ রেখে চোখে জল নিয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিতে এসেছে সুমাইয়া আক্তার নামে এক ছাত্রী।

ঘটনাটি ঘটেছে চাঁদপুর সদর উপজেলার ৬নং মৈশাদী ইউনিয়নের দক্ষিণ হামানকর্দ্দি গ্রামে। বুধবার (১০ মে) সকাল ৬টার দিকে সুমাইয়া আক্তারের বাবা মোহাম্মদ মিজান গাজী (৪৫) উচ্চ রক্তচাপ হয়ে মারা যান। এদিন সকাল ১০টায় পরীক্ষায় অংশ নেয় সুমাইয়া। পরীক্ষা শেষে বাড়িতে এসে বাবাকে শেষ বিদায় দেয় সে।

মোহাম্মদ মিজান গাজী দক্ষিণ হামানকর্দ্দি নদীর পাড় সংলগ্ন গাজী বাড়ির বাসিন্দা। সুমাইয়া আক্তার চাঁদপুর সদর উপজেলার মৈশাদী ইউনিয়নের হামানকর্দ্দি পল্লী মঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে চলতি বছর মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। বুধবার তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের পরীক্ষা ছিল। এদিন সকালে বাবা মারা যাওয়ায় ভেঙে পড়ে সুমাইয়া। পরে স্বজনদের পরামর্শে পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয় সে। এক হাতে চোখের জল মুছে আর অন্য হাতে কলম চালিয়ে পরীক্ষা দেয় সুমাইয়া আক্তার।

স্থানীয়রা জানায়, বুধবার সকাল ৬টার দিকে স্ট্রোক করে মারা যান সুমাইয়া আক্তারের বাবা মোহাম্মদ মিজান গাজী। বাবাকে হারিয়ে ভেঙে পড়ে এক ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট সুমাইয়া। বাবার মৃত্যুতে বারবার মূর্ছা যাওয়া সুমাইয়ার পক্ষে পরীক্ষা দেওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এ সময় তার পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনরা তাকে বুঝিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পাঠায় এবং সে বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরীক্ষা শেষে বাড়ি পৌঁছার পর তার বাবার লাশ বাদ আসর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

এ বিষয়ে মৈশাদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নুরুল ইসলাম পাটওয়ারী বলেন, মৃত মোহাম্মদ মিজান গাজী গতকালও ভালো ছিল। আজ সকালে হঠাৎ করে পাতলা পায়খানা শুরু হলে মতলব আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে নেয়ার পর ওখানেই স্ট্রোক করে মৃত্যবরন করেন। সকালে তিনি মৃত্যুবরণ করলে তার মেয়েকে পরিবারের সবাই বুঝিয়ে পরীক্ষা দিতে যেতে বলে। সবার কথায় সে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। মেয়ের পড়ালেখার সুবিধার্থে আমরা উক্ত পরিবারটির পাশে থাকতে চেষ্টা করবো। সামনে যাতে সবগুলো পরীক্ষায় সে অংশগ্রহণ করে সেজন্য আমরা তাকে সহযোগিতা করবো। আমি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ৩ মে বুধবার চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহাতলী জোবাইদা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ছাত্রী ফেরদৌসী আক্তার জুঁহিও তার বাবার লাশ বাড়িতে রেখে উপজেলার এম এম নুরুল হক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে আসেন। সে শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের ভাটেরগাঁও গ্রামের বেপারী বাড়ির মুকবুল হোসেন এর মেয়ে। মকবুল হোসেন ঐদিন সকাল ৬টায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন এবং একইদিন বাদ আসর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এই এক সপ্তাহের ব্যবধানে একই রকম দুটি ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সর্বমহলে দেখা দিয়েছে এক কষ্টের নীরবতা।

শেয়ার করুন