বিশেষ প্রতিবেদক :
চাঁদপুরে করোনা রোগী শনাক্তের হার আবার বাড়তে শুরু করেছে। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী চাঁদপুরে করোনা শনাক্তের সপ্তম মাসে (৯ অক্টোবর-৯ নভেম্বর) করোনায় আক্রান্ত হিসেবে মোট শনাক্ত হয়েছে ১৩৮জন।
ষষ্ঠ মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৩৭জন, পঞ্চম মাসে শনাক্ত হয়েছিলেন ২৫৫জন। অর্থাৎ করোনা পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতির পর আবার অবনতির দিকে এগুচ্ছে। বিশেষ করে গত দুই সপ্তাহ ধরে আক্রান্ত শনাক্তের হার বৃদ্ধির দিকে।
এছাড়া অনেকেই এখন করোনার উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ অবস্থায় বাসা-বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তারা নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। এদের মধ্যে কেউ কেউ মারাও যাচ্ছেন।
এসব অসুস্থ ও মৃত লোকজন করোনায় আক্রান্ত কিনা তা অজানাই থেকে যাচ্ছে। অধিকাংশ ক্সেত্রে উপসর্গে মৃতদের এখন আর নমুনা সংগ্রহ করা হয় না। ফলে করোনায় মৃতের প্রকৃত সংখ্যা জানাও অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
স্বাস্ত্য বিভাগের তথ্য মতে, সপ্তম মাসে চাঁদপুরে করোনায় ১জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগের দুই মাসেও (৯ আগস্ট-অক্টোবর) মৃতের সংখ্যা ছিল ১জন করে। মূলত মৃত্যুর সংখ্যা কমার সাথে সাথে জনমনে করোনা নিয়ে অসচেতনতা বেড়ে গেছে।
আসন্ন শীতে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাপ শুরুর আশঙ্কার মধ্যেই জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগ ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কিত।
চাঁদপুর জেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত ও লকডাউনের ৭ মাস পূর্ণ হয়েছে গত সোমবার (৯ নভেম্বর)। জীবনযাত্রা এখন প্রায় স্বাভাবিক। যদিও লকডাউন কাগজে-কলমে এখনো বহাল রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা ভয়াবহ মাত্রায় কমে গেছে।
সামাজিক দূরত্ব মানা ও মাস্ক ব্যবহার একেবারে সীমিত হয়ে পড়েছে। তবে গত ক’দিনের প্রশাসনিক সাঁড়াশি অভিযানে ব্যাপক আটক ও জরিমানার ঘটনায় মাস্ক ব্যবহার বাড়তে শুরু করেছে।
আশঙ্কার কথা হচ্ছে, করোনায় আক্রান্ত ও সুস্থতার সার্বিক ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আবার অবনতির দিকে। বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। গত এক মাসে (৯ অক্টোবর-৯ নভেম্বর) করোনামুক্ত হয়েছেন ১৬১জন। আগের মাসে সুস্থ হয়েছিলেন জেলার ৩১৭জন। এর আগের পাঁচ মাসে করোনামুক্ত হয়েছিলেন ১৮২০জন।
চাঁদপুর সিভিল সার্জন অফিসের ৯ নভেম্বর পর্যন্ত হিসেব অনুযায়ী, চাঁদপুর জেলায় করোনা টেস্টের জন্য মোট সংগৃহীত নুমনার পরিমাণ ১২ হাজার ৬৯৪টি। এখন রিপোর্ট প্রাপ্তির হার শতভাগ। চাঁদপুরে ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ আরটি-পিসিআর ল্যাব চালু হওয়ায় একদিনেই রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে এখন।
চাঁদপুরে করোনা শনাক্তের সপ্তম মাসে চাঁদপুরে মোট নমুনা দিয়েছেন ১১৪০জন। এর মধ্যে ১৩৮জনের রিপোর্ট করোনা পজেটিভ।
বাংলাদেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলেও চাঁদপুরে সন্দেহভাজন লোকদের নুমনা সংগ্রহ শুরু হয় ২৭ মার্চ। ওইদিন ঢাকার আইইডিসিআর থেকে বিশেষ টিম এসে চাঁদপুরের একজনের নমুনা সংগ্রহ করে।
২ এপ্রিল চাঁদপুর সিভিল সার্জন অফিসের তত্ত্বাবধানে চাঁদপুর জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়। প্রথম দিনে চাঁদপুর সদর, হাইমচর, মতলব দক্ষিণ, ফরিদগঞ্জ ও হাজীগঞ্জ থেকে ২জন করে মোট ১০জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। চাঁদপুর প্রবাহের আর্কাইভ সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
উল্লেখিত সূত্রে আরো জানা যায়, চাঁদপুরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৯ এপ্রিল। তার নাম মোঃ সুজন (৩২)। নারায়ণগঞ্জ ফেরত এই যুবক অসুস্থ অবস্থায় মতলব উত্তরে তার শ্বশুর বাড়িতে আসার পর ৬ এপ্রিল নমুুনা দিয়েছিলেন। চিকিৎসার পর তিনি এখন সুস্থ।
প্রথম শনাক্তকৃত করোনা রোগী সুজনের নমুনা টেস্টের পজেটিভ রিপোর্ট আসার দিনেই (৯ এপ্রিল) চাঁদপুর জেলা লকডাউন ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক। ওইদিন সন্ধ্যায় এই লকডাউন কার্যকর শুরু হয়।
চাঁদপুরে করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১১ এপ্রিল চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের কামরাঙ্গা এলাকায়। তিনিও নারায়ণগঞ্জ ফেরত। শ্বশুর বাড়িতে করোনার উপসর্গ নিয়ে তিনি মারা যান। খবর পেয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ তার নমুনা সংগ্রহ করে।
১৫ এপ্রিল তার নমুনা টেস্টের রিপোর্ট আসে করোনা পজেটিভ। এরপর তার শ্বশুর ও এক শ্যালিকা করোনায় আক্রান্ত হন। শ্যালিকা সুস্থ হয়েছেন। আর শ্বশুর করোনা থেকে সুস্থ হয়ে পরবর্তীতে মারা যান।
চাঁদপুরে করোনার আগমন ও সংক্রমণের বাহক হিসেবে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ফেরত লোকদের চিহ্নিত করেছে। প্রথম পর্যায়ে বিদেশ ফেরত লোকদের সন্দেহের শীর্ষে রাখা হলেও এখন পর্যন্ত জেলায় একজন বিদেশ ফেরত লোকেরও করোনা শনাক্ত হয়নি।
চিকিৎসকদের মতে, সারা জেলায় করোনার কমিউনিটি ট্রান্সমিশন চলছে। তবে বর্তমানে চাঁদপুরে করোনা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। বিশেষ করে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ও উপসর্গে মৃত্যুর হার পূর্বের চেয়ে অনেক কমেছে।
সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ ৯ নভেম্বর চাঁদপুর প্রবাহকে জানান, চাঁদপুরে জেলায় বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত ২৪৫৮জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৭৮জন। ইতিমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২২৯৮জন। চিকিৎসাধীন আছেন ৮২জন।
এখন পর্যন্ত আইসোলেশনে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১৩৪২জন। এর মধ্যে ইতিমধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছেন ১৩৩৩জন। বর্তমানে আইসোলেশনে রোগীর সংখ্যা ৯জন।
তিনি জানান, চাঁদপুরে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা মাঝখানে কমে আসলেও অতি সম্প্রতি আবার বাড়ছে। আমাদের সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে। নইলে যে কোনো সময় পরিস্থিতি আবার ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। বিশেষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, নিয়মিত ঘরের বাই মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে।
উল্লেখিত পরিসংখ্যানের বাইরে দেশের বিভিন্ন জেলায় এবং বিদেশে চাঁদপুরের বহু লোক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারাও গেছেন অনেকে। বিক্ষিপ্তভাবে তাদের অনেকের তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও সঠিক পরিসংখ্যান এখনো সরকারি-বেসরকারি কোনো সূত্র জানাতে পারেনি।