চাঁদপুরে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি : এক মাসে ১জনের মৃত্যু

রহিম বাদশা :
চাঁদপুরে গত এক মাসে (৯ আগস্ট-৯ সেপ্টেম্বর) করোনায় ১জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগের মাসে (৯ জুলাই-৯ আগস্ট) জেলায় করোনায় মৃত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৯জন। ৯ আগস্ট যেখানে মৃত্যুর শতকরা হার ছিল ৩.৮০ ভাগ এখন তা নেমে এসেছে ৩.৪৮ ভাগে। উপসর্গে মৃত্যুর ঘটনাও একেবারেই কমে এসেছে।

কমেছে করোনায় আক্রান্তের হারও। গত এক মাসে (৯ আগস্ট-৯ সেপ্টেম্বর) চাঁদপুর জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৫৫জন। এই সময়ে প্রতিদিন গড়ে ৮.৫জন করে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন।

এক মাস আগেও যেখানে নমুনা পরীক্ষা করা লোকের মধ্যে শতকরা ২৬.৩০ ভাগের করোনা শনাক্ত হয়েছে এখন সেখানে শনাক্তের হার কমে দাঁড়িয়েছে ২২.৬৪ ভাগে। যদিও কমেছে নমুনা সংগ্রহের পরিমাণও।

চাঁদপুর জেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত ও লকডাউনের ৫ মাস পূর্ণ হয়েছে বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর)। জীবনযাত্রা এখন প্রায় স্বাভাবিক। যদিও লকডাউন কাগজে-কলমে এখনো বহাল রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা ভয়াবহ মাত্রায় কমে গেছে। সামাজিক দূরত্ব মানা ও মাস্ক ব্যবহার সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে।

আশার কথা হচ্ছে, করোনায় আক্রান্ত, মৃত ও সুস্থতার সার্বিক ক্ষেত্রে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ব্যাপক হারে বেড়েছে সুস্থতার হার। গত এক মাসে (৯ আগস্ট-৯ সেপ্টেম্বর) করোনামুক্ত হয়েছেন জেলার ৪৭০জন। এর আগের চার মাসে করোনামুক্ত হয়েছিলেন ১৩৪৫জন।

চাঁদপুর সিভিল সার্জন অফিসের ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিসেব অনুযায়ী, চাঁদপুর জেলায় করোনা টেস্টের জন্য মোট সংগৃহীত নুমনার পরিমাণ ৯৭৫৪টি। এর মধ্যে রিপোর্ট এসেছে ৯৬২৬টি। রিপোর্ট অপেক্ষমান থাকা ১২৮টি নমুনা ওই দিন সকালে সংগ্রহ করা হয়েছিল। রাতে এসব রিপোর্টের ফলাফল সিভিল সার্জন অফিসে প্রেরণ করা হলেও ঘোষণা হয় বৃহস্পতিবার।

ফলে কার্যত এখন কোনো রিপোর্ট অপেক্ষমান নেই। এখন রিপোর্ট প্রাপ্তির হার শতভাগ। চাঁদপুরে ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ আরটি-পিসিআর ল্যাব চালু হওয়ায় একদিনেই রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে এখন।

বাংলাদেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলেও চাঁদপুরে সন্দেহভাজন লোকদের নুমনা সংগ্রহ শুরু হয় ২৭ মার্চ। ওইদিন ঢাকার আইইডিসিআর থেকে বিশেষ টিম এসে চাঁদপুরের একজনের নমুনা সংগ্রহ করে। ২ এপ্রিল চাঁদপুর সিভিল সার্জন অফিসের তত্ত্বাবধানে চাঁদপুর জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়। প্রথম দিনে চাঁদপুর সদর, হাইমচর, মতলব দক্ষিণ, ফরিদগঞ্জ ও হাজীগঞ্জ থেকে ২জন করে মোট ১০জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। চাঁদপুর প্রবাহের আর্কাইভ সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

উল্লেখিত সূত্রে আরো জানা যায়, চাঁদপুরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৯ এপ্রিল। তার নাম মোঃ সুজন (৩২)। নারায়ণগঞ্জ ফেরত এই যুবক অসুস্থ অবস্থায় মতলব উত্তরে তার শ্বশুর বাড়িতে আসার পর ৬ এপ্রিল নমুুনা দিয়েছিলেন। চিকিৎসার পর তিনি এখন সুস্থ।

প্রথম শনাক্তকৃত করোনা রোগী সুজনের নমুনা টেস্টের পজেটিভ রিপোর্ট আসার দিনেই (৯ এপ্রিল) চাঁদপুর জেলা লকডাউন ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক। ওইদিন সন্ধ্যায় এই লকডাউন কার্যকর শুরু হয়। সরকারের কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে অনেকটা শিথিল পর্যায়ে লকডাউন এখনো বহাল রয়েছে কাগজে-কলমে।

চাঁদপুরে করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১১ এপ্রিল চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের কামরাঙ্গা এলাকায়। তিনিও নারায়ণগঞ্জ ফেরত। শ্বশুর বাড়িতে করোনার উপসর্গ নিয়ে তিনি মারা যান। খবর পেয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ তার নমুনা সংগ্রহ করে। ১৫ এপ্রিল তার নমুনা টেস্টের রিপোর্ট আসে করোনা পজেটিভ। এরপর তার শ্বশুর ও এক শ্যালিকা করোনায় আক্রান্ত হন। শ্যালিকা সুস্থ হয়েছেন। আর শ্বশুর করোনা থেকে সুস্থ হয়ে পরবর্তীতে মারা যান।

চাঁদপুরে করোনার আগমন ও সংক্রমণের বাহক হিসেবে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ফেরত লোকদের চিহ্নিত করেছে। প্রথম পর্যায়ে বিদেশ ফেরত লোকদের সন্দেহের শীর্ষে রাখা হলেও এখন পর্যন্ত জেলায় একজন বিদেশ ফেরত লোকেরও করোনা শনাক্ত হয়নি। চিকিৎসকদের মতে, সারা জেলায় করোনার কমিউনিটি ট্রান্সমিশন চলছে। তবে বর্তমানে চাঁদপুরে করোনা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। বিশেষ করে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ও উপসর্গে মৃত্যুর হার পূর্বের চেয়ে অনেক কমেছে।

চাঁদপুর সরকারি জেনারেল (সদর) হাসপাতালের করোনা বিষয়ক ফোকালপার্সন ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেল বৃহস্পতিবার চাঁদপুর প্রবাহকে জানান, চাঁদপুর জেলায় দিন দিন করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। আক্রান্তের হার অনেক কমেছে, মৃত্যুর ঘটনা এখন নেই বললেই চলে। এক কথায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

তিনি বলেন, চাঁদপুরে আরটি-পিসিআর ল্যাব হওয়াতে দ্রুত রোগী শনাক্ত হচ্ছে এবং তাদের আইসোলেশন করা যাচ্ছে। তবে সদর হাসপাতালে উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর চাপ এখনো আছে। গত এক মাসে এই হাসপাতালে করোনার উপসর্গে ৩জন মারা গেলেও সবার রিপোর্ট করোনা নেগেটিভ এসেছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলেও সবাইকে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। মুখ ও নাক ঠিকভাবে মাস্ক দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। নইলে পরিস্থিতি আবারও খারাপ হতে পারে।

সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ বৃহস্পতিবার চাঁদপুর প্রবাহকে জানান, চাঁদপুরে জেলায় বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত ২১৮৩জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৭৬জন। ইতিমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৮২০জন। চিকিৎসাধীন আছেন ২৮৭জন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশনে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৯২৯জন। এর মধ্যে ইতিমধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৯০৮জন। বর্তমানে আইসোলেশনে রোগীর সংখ্যা ২১জন।

তিনি জানান, চাঁদপুরে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসলেও আমাদের সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে। নইলে যে কোনো সময় পরিস্থিতি আবার ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, নিয়মিত ঘরের বাই মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা জরুরী।

উল্লেখিত পরিসংখ্যানের বাইরে দেশের বিভিন্ন জেলায় এবং বিদেশে চাঁদপুরের বহু লোক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারাও গেছেন অনেকে। বিক্ষিপ্তভাবে তাদের অনেকের তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও সঠিক পরিসংখ্যান এখনো সরকারি-বেসরকারি কোনো সূত্র জানাতে পারেনি।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)