চাঁদপুর কারাগারে মুক্তির অপেক্ষায় ১৪০ কয়েদী!

মোরশেদ আলম :
করোনা পরিস্থিতিতে করোনা সংক্রমণ এড়াতে স্বল্প মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ১৪০জন কয়েদী মুক্তির অপেক্ষায়! স্বল্প মেয়াদে বিভিন্ন পর্যায়ের সাজাপ্রাপ্তদের তালিকা করে অধিদপ্তরে পাঠিয়েছে চাঁদপুর কারা কর্তৃপক্ষ। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে কিছু কিছু কারাবন্দীর মুক্তির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেই অংশ হিসেবে জেলা কারাগার মুক্তির জন্য ১৪০ কারাবন্দীর তালিকা প্রণয়ণ করে।

চাঁদপুর জেল সুপার মোঃ মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, করোনা সংক্রমণ এড়াতে জেলা কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য স্বল্প মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ১৪০জন কয়েদীর নাম ঢাকায় কারা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এই তালিকা পাঠানো হয়েছে। কারা অধিদপ্তর থেকে এই তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যাচাই-বাছাই শেষে অনুমতি সাপেক্ষে তাদের মুক্তির ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি আরো জানান, প্রায় দেড় হাজার আসামী ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন জেলা কারাগারে পুরুষ বন্দীদের জন্য ৮ কক্ষ বিশিষ্ট ২টি ৪তলা এবং ৪ কক্ষবিশিষ্ট ১টি ২তলা ভবন রয়েছে। অন্যদিকে নারী কয়েদীদের জন্য ৪ কক্ষবিশিষ্ট ১টি ২তলা ভবন রয়েছে। যার মধ্যে ২টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ৬টি কন্ডেম সেল রয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ৪০-৫০জন আসামীকে রাখা যায়। সব মিলিয়ে ফাঁসির আসামীদের জন্য এখানে ১০টি কন্ডেম সেল রয়েছে। ২২ এপ্রিল পর্যন্ত কারাগারে সাজাপ্রাপ্ত ও আন্ডার ট্রায়ালে মোট বন্দী রয়েছেন ৭৪৩জন। যার মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত ২২৯জন, বিচারাধীন ৫১১জন এবং ফাঁসির আসামী ৩জন।

এদিকে করোনা প্রতিরোধে কেমন প্রস্তুতি জেলা কারাগারে নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে জেল সুপার মোঃ মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, এ কারাগারে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সতর্কতামূলক নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিদিনই হয়তো ২/৩জন নতুন বন্দী আসে। তাদেরকে কারাগারের ভেতরে ঢোকানোর আগে প্রধান গেইটে হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ভালোভাবে হাতমুখ ধোয়ানো হয়। পরীক্ষা করা হয় শরীরের তাপমাত্রা। স্প্রে করা হয় জীবাণুনাশক স্প্রে। এভাবে প্রাথমিকভাবে সুস্থতার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর ভেতরে ঢোকানো হয় আসামিদের।

তিনি আরো বলেন, নতুন আসামীদের ক্ষেত্রে আমরা ১৪দিন তাদেরকে আলাদা ওয়ার্ডে রাখি। সেই ওয়ার্ড থেকে আবারো পুনরায় অন্য একটি আলাদা ওয়ার্ডে আরো ১৪ দিন তাদেরকে রাখি। প্রতিদিন সকাল বিকাল দু’বেলা পুরো কারাগার এলাকায় জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটানো হয়। রেডক্রিসেন্টের পক্ষ থেকেও একবার করে জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটানো হচ্ছে। বাইরের দর্শণার্থীরা ভেতরে প্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ। বিকল্প হিসেবে দিনে ৫ মিনিট আসামীদের ফোনে কথা বলার নির্দেশনা রয়েছে।

জরুরী অবস্থা মোকাবেলা প্রসঙ্গে জেল সুপার বলেন, জেলা কারগারে আমরা ৩জন করে মোট ৬জন রাখার মতো ২টি আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত রেখেছি। যা দেখভালে ১জন সহকারী সার্জনসহ কারাগারের মোট ৭৯ জনবল কাজ করছে। কারাগারের রান্নাঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি খাবার ভালোভাবে সিদ্ধ হওয়ার পর পরিবেশন করা হয়। এছাড়াও কারাগারের ভেতরে বন্দীদের মাঝে করোনা সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জামাল হোসেন জানান, করোনা পরিস্থিতিতে জেলা কারাগার ঝুঁকিমুক্ত রাখতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মহিলা কয়েদীদের জন্য ডিপ্লোমা নার্সের শূণ্য পদটি পূরণে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তালিকা প্রেরণকৃত কয়েদীদের মুক্তির ব্যাপারে যাচাই-বাছাই চলছে।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)