ছাত্র বিক্ষোভের মুখে অনির্দিষ্টকালের জন্য এমদাদিয়া মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক :
ছাত্র বিক্ষোভের মুখে অনির্দিষ্টকালের জন্য চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজারস্থ ঐতিহ্যবাহী জাফরাবাদ জামিয়া আরাবিয়া এমদাদিয়া (দাওরায়ে হাদীস) মাদ্রাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোডিং বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

গত ক’দিন ধরে সেখানকার শিক্ষার্থীরা একজন মাদ্রাসা শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদ ও অধ্যক্ষের অপসারণের (মুহতামিম) দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ, ভাংচুর ও প্রতিবাদ করে আসছিল।

মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে ব্যর্থ হয়ে রোববার (২২ নভেম্বর) অনির্দিষ্টকালের জন্য মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা করেছে।

আন্দোলনরত ছাত্ররা মাদ্রাসার মুহতামিম জাফর আহমদের অপসারণ দাবিতে অনড় থাকায় উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধান হয়নি। মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়ার পর রোববার বিকেলের মধ্যে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসার হল ত্যাগ করে তাদের বাড়ি চলে যেতে দেখা যায়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মাদ্রাসা এলাকায় ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করে রাখা হয়েছে।

যে কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে মাদ্রাসা আপাতত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীর আলম। তিনি জানান, সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে মাদ্রাসায় অবস্থান করে ছাত্র-শিক্ষকদের বুঝিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত সবাই যাতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখে সে অনুরোধ করি।

একর আগে শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত জাফরাবাদ জামিয়া আরাবিয়া এমদাদিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ, ভাংচুর, বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে ও প্রতিবাদে ফেটে পড়ে এবং তারা এ মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ মনসুর আহমেদকে পুনর্বহালের দাবি ও মাদ্রাসার মুহতামিম জাফর আহম্মেদকে অপসারনের দাবি জানান।

গত বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসার মুহতামিম জাফর আহম্মেদ ও শিক্ষা সচিব মুফতি মাসুম বিল্লাহকে বহিষ্কারসহ ৬ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে মেতে উঠে।

এ বিষয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা জাফর আহম্মেদের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, আমাদের এই মাদ্রাসায় হেফজ বিভাগে ২জন হাফেজ দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এদের মধ্যে হাফেজ মুনছুর আহম্মেদের বাড়ি মাদ্রাসার নিকটে হওয়ায় তিনি প্রতিদিন বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন এবং কিছু হলেই এলাকার লোকজন দিয়ে মাদ্রাসায় প্রভাব বিস্তার করতের।

প্রতিদিনই ছাত্রদের পড়া দিয়ে তিনি বাড়ি চলে যেতেন। এ নিয়ে ছাত্রদের অভিযোগের কারণে আমি কয়েকজন শিক্ষকের উপস্থিতিতে মুনছুর আহম্মেদকে ডেকে সতর্ক করি, যেন বাড়িতে আসা-যাওয়া কম করে। ছাত্রদের পড়ার মান দিন দিন অবনতি হচ্ছে। তা বাড়াতে হবে। এ কথা বলার পর তিনি ১৬ নভেম্বের অব্যাহতিপত্র জমা দেন এবং তিনি আর চাকুরি করবেন না বলে জানিয়ে দেন।

ছাত্ররা জানায়, এর পূর্বেও হঠাৎ করে দু’জন সুযোগ্য হাফেজ নূর মোহাম্মদ ও অত্র এলাকার কৃতি সন্তান যিনি এই মাদ্রাসায় দীর্ঘ ২১ বছর কোরআনের খেদমত করে আসছেন। মাদ্রাসা থেকে চলে যাওয়ার কারণ কি? তারা কি স্বেচ্ছায় গিয়েছেন নাকি যেতে বাধ্য করা হয়েছে?

তারা জানায়, ইতোপূর্বে অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকদের কোন প্রকার নোটিশ ছাড়া বিনা কারণে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করা হল কেন? যেমন মুফতি শাহাদাত হোসাইন কাসেমী, মুফতি ইসমাইল সাহেব (দা:বা) গতবছর পবিত্র ঈদুল আযহার দিন নূরানী বিভাগের একজন ওস্তাদ ক্বারী রফিকুল ইসলাম সাহেবকে চামড়া কম কালেকশন করায় মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করা হয়? মাদ্রাসার শিক্ষকদের বেতন আটকে রাখা হয় কেন? এমন আরও অনেক দাবি নিয়ে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)