জরায়ু কেটে কনডম দিয়ে সেলাই : প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড়

খালেকুজ্জামান শামীম :
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ বাজারস্থ ইসলামিয়া মডার্ণ হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনে জরায়ু কেটে কনডম (বেলুন) দিয়ে সেলাই করায় এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে অধ্যবদী এ ঘটনার কোন সুরাহ না হয়ায় চরম হতাশা ও অনিশ্চিয়তায় ভুগছে পরিবারটি।

হাজীগঞ্জ বাজারে হাজীগঞ্জ টাওয়ার মার্কেটের ২য় তলায় অবস্থিত নানা অনিয়মে জর্জরিত ইসলামিয়া মডার্ণ হাসপাতালে ভুল সিজারিয়ান অপারেশনে জরায়ু কেটে কনডম (বেলুন) দিয়ে সেলাই দেওয়ার মত চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনা ভুল অপারেশনের শিকার প্রসূতি রুজিনা আক্তারের শরীরে রক্তক্ষরণের কারণে মৃত্যুবরণ করে।

নিহত প্রসূতি রুজিনা আক্তার হাজীগঞ্জ উপজেলার ২নং বাকিলা ইউনিয়নের শ্রীপুর ফজর আলী বেপারি বাড়ির ওমান প্রবাসী মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী এবং একই উপজেলার ৪নং কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের বানিয়াচোঁ খান বাড়ির হাসান খার মেয়ে।

প্রসূতির বাবা হাসান খাঁ জানান, (৩১ মার্চ) প্রসূতি রুজিনা আক্তার আত্মীয়দের সহযোগিতায় হাসপাতালের দালাল আমেনা আক্তারের মাধ্যমে ইসলাামিয়া মর্ডাণ হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের নিয়ে আসে।

রুজিনা স্বজনরা আরো জানান, সিজারিয়ান অপারেশন করেন হাজীগঞ্জ গোল্ডেন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. রইসুল ইসলাম রুবেল, এনেসথেসিয়া করান ডা. সাদ্দাম হোসেন। সিজারিয়ান অপারেশনের সময় ডাক্তার রুবেল সন্তান প্রসবের ফুল কাটতে গিয়ে নির্ধারিত অংশের ছেয়ে অতিমাত্রায় জরায়ু কেটে ফেলেন।

এ সময় তিনি শাক দিয়ে মাছ থাকতে জরায়ুর কাটা অংশে বেলুন (কনডম ) বসিয়ে সেলাই করে দেন। ৪ দিন পর প্রসূতি রুজিনা আক্তারকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে বাড়িতে পাঠানো হয়। বাড়িতে গিয়ে অবস্থান করলে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ দেখা দিলে অসুস্থ রুজিনাকে পুনরায় হাসপাতালে নিয়ে আসে। ৪ এপ্রিল মঙ্গলবার ২য় বার ভর্তি হলে রুজিরার শরীরে ৪ ব্যাগ রক্ত প্রয়োগ করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে সুকৌশলে ভুল অপারেশনের দায় থেকে রক্ষা পেতে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে গাইনী বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানতে পারেন জরায়ু কেটে কনডম (বেলুন) বসিয়ে সেলাই করা হয়। যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোন অধ্যায়ের এমন নিয়ম নেই। গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ মেডিকেল বোর্ড জরায়ু কেটে বেলুন প্রতিস্থাপন ঘটনাটি এই প্রথম দেখেছেন । একদিনে প্রসূতি রোজিনা শরীরে প্রচুর পরিমান রক্ত দিয়েও মৃত্যুর হাত থেকে তাকে রক্ষা করতে পারেনি চিকিৎসকরা। চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন প্রসূতি রোজিনা আক্তার।

বুধবার (৫ এপ্রিল) কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে রোজিনা আক্তারের মৃত দেহ নিয়ে ইসলামিয়া মর্ডাণ হাসপাতালের নিচে অবস্থান নেয় স্বজনরা। সেখানে কয়েকজন কর্মচারী ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায়নি।

হাসপাতালের পরিচালক রফিকুল ইসলাম এবং এনেসথেসিয়া করা ডাক্তার সাদ্দাম ওই ভবনের চতুর্থ তলায় বাসায় অবস্থান করলেও ছুটে আসেনি।

ভুল অপারেশনের শিকার নিহতের লাশ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ডাক্তারদের এমন নিষ্ঠুর আচরণে ক্ষুদ্ধ হয়ে লাশ নিয়ে বাড়িতে চলে যায়।

হাজীগঞ্জ প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়ানস্টিক মালিক সমিতির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিসমিল্লাহ হাসপাতার এন্ড ডায়াগনস্টিকের মালিক তোফায়েল আহম্মেদের সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাসে নিহত রোজিনার আত্মীয় স্বজনরা বাড়িতে লাশ দাফন করলেও এখন পর্যন্ত শোকাহত পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

নিহত রোজিনার বোনের ছেলে মো. সোহেল বলেন, আমার খালাকে সিজারিয়ান অপারেশনের পর থেকে ইসলামিয়া মর্ডাণ হাসপাতাল চিকিৎসায় অবহেলা করে আসছে। জরায়ুর গুরুত্বপূর্ণ অংশ কেটে তারা বেলুন দিয়ে সেলাই করে দেয়। দুই দিন পর বেলুন ফেটে যাওয়ার কারণে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ হওয়ার কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালিন অবস্থায় মারা যায়।

এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে বহুবার যোগাযোগ করেও তাদের কাছ থেকে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তারা সংবাদকর্মীদের এড়িয়ে চলছেন।

শেয়ার করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)