বাইরে ঝুঁকি করোনার, ঘরে দুর্ঘটনার!

করোনাকালে মানবেতর জীবনযাপন পুরাণবাজার ফাঁড়ি পুলিশ সদস্যদের

কবির হোসেন মিজি :
চরম ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে মানবেতর জীবনযাপন করছেন চাঁদপুরের পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা। করোনাকালে বাইরে কর্মকালে আছে করোনায় আক্রান্তের ঝুঁকি আর সরকারি আবাসনে আছে ভবন ধসে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।

কোথাও যেন নিরাপদ নয় তারা! তবুও অন্যের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন এসব পুলিশ সদস্য। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দীর্ঘ বছরের পুরনো একই ভবনের একই কক্ষে চলে আসছে চাঁদপুর পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ির আইনী কার্যক্রম ও সদস্যদের আবাসন।

চাঁদপুরের অন্যান্য আইনি সেবা প্রতিষ্ঠানে এক ভবনে আইনি কার্যক্রম আর পুলিশ সদস্যদের থাকার জন্য আলাদা ভবন থাকলেও পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ক্ষেত্রে তা একেবারেই ব্যতিক্রম। সেখানে সেই প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেখা গেছে, যে কক্ষে আইনি সেবা দেয়া হয় সেই একটি ভবনের একটি কক্ষেই পুলিশ সদস্যদের থাকার স্থান।

পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেই পাকিস্তান আমলের একটি মাত্র পুরনো ভবনের নিচতলায় দীর্ঘ বছর ধরে চলছে পুলিশ ফাঁড়ির সকল কার্যক্রম। দেখা গেছে, যে কক্ষে সাধারণ মানুষকে আইনি সেবা দেওয়া হয়, তার পাশেই পুলিশ সদস্যরা থাকছেন।

যদিও চাঁদপুর মডেল থানা কিংবা অন্যান্য পুলিশ ফাঁড়িসহ যে কোনো আইনী সেবা প্রতিষ্ঠানে আইনি সেবা দেওয়ার জন্য আলাদা আলাদা ভবন এবং পুলিশ সদস্যদের আবাসিকের জন্য আলাদা ভবন রয়েছে। কিন্তু পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়িটি সেই প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই একটি ভবনে তার সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

শুধু তাই নয়, সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে- ফাঁড়িতে বর্তমানে যে ভবনটি রয়েছে সেটি সেই মান্ধাতা আমলের একটি পুরনো ভবন এবং সেটি অনেকটা ঝরাজীর্ণভাবে রয়েছে। তাই যে কোনো মুহূর্তেই ভবনটি ভেঙ্গে পড়ে দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে।

এছাড়া যেখানে অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় তার পাশেই কাপড়ের পর্দা দিয়ে আলাদা কক্ষ তৈরি করে সেখানে সারিবদ্ধভাবে বিছানা পেতে থাকছেন ফাঁড়ির দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা। তারা যেখানে প্রতিদিন ঘুমাচ্ছেন ভবনটি জরাজীর্ণ হওয়ার কারণে নিরাপত্তাহীনভাবেই প্রতিটি দিন-রাত কাটাতে হয় এসব পুলিশ সদস্যদের।

দেখা গেছে, ভবনের উপরের সিলিং থেকে পুরনো আস্তর খসে বিছানায় পড়ছে। অনেক সময় ঘুমন্ত পুলিশ সদস্যদের গায়েও আস্তর খসে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। যেখানে শহরের এমন একটি আইনী সেবা প্রতিষ্ঠানে উন্নত পরিসরে ভালো কিংবা নতুন ভবনের প্রয়োজন সেখানে নিরাপত্তাহীনভাবেই দুর্ভোগের মাঝে প্রতিদিন দায়িত্ব পালন করছেন পুরাণবাজার ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা।

খবর নিয়ে জানা গেছে, চাঁদপুরের পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে সর্বমোট ২২জন পুলিশ সদস্য রয়েছে। এর মধ্যে এসআই ১জন এএসআই ২জন এবং এটিএসআই ১জন। বাকী ১৮জন কনস্টেবলের পদে রয়েছে।

পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ফাঁড়ির আলাদা একটি ঘরে ৩/৪জন এসআই এবং এএসআই থাকলেও অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা পুরনো ভবনটিতেই প্রতিদিন রাত কাটাচ্ছেন। ফাঁড়িতে থাকার জন্য আলাদা কোন ব্যারাক না থাকায় অফিস কক্ষের পাশেই জড়োসরভাবে কোন রকম দিন কাটাচ্ছেন ভুক্তভোগী পুলিশ সদস্যরা।

তাই চাঁদপুরের ব্যাণিজিক এলাকা পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নতুন করে একটি ভবন তৈরি করা খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে। উন্নত পরিসরে নতুন কোন ভবন তৈরি হলে একদিকে যেমন আইনী সেবার কার্যক্রম পরিচালনা উন্নত হবে অন্যদিকে ভবনের কোন এক স্থানে পুলিশ সদস্যরা থাকার জন্য ব্যারাক হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবে।

পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোঃ মাসুদ জানান, পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ির নতুন ভবন তৈরি করার জন্য আবেদন করা হয়েছে। আমি যতটুকু জানি ফাঁড়ির নতুন ভবন তৈরি করার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। হয়তো করোনার কারণে কাজ ধরা হয়নি। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তা ভালো বলতে পারবেন।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন