মানবেতর জীবন-যাপন করছেন চাঁদপুরের সাংস্কৃতিক শিল্পীরা

করোনা ভাইরাসের কারণে স্থবির চাঁদপুরের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশব্যাপী করোনা ভাইরাসের কারণে চাঁদপুর জেলা শহরের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বন্ধ রয়েছে। যার কারণে চাঁদপুর জেলা শহরের প্রায় ৪০টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রায় ২ সহস্রাধিক সাংস্কৃতিক সংগঠক, নাট্যশিল্পী, সঙ্গীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পী ও আবৃত্তি শিল্পীরা নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করছেন। এরা বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য। কিন্তু কারো কাছে মুখ খুলে বা হাত পেতে খাদ্য সামগ্রী ও আর্থিক সহযোগিতা চাইতে পারেনি। সে কারণে এ সকল শিল্পী মানবেতর জীবনযাপন করছে। কেউই তাদের খোঁজ খবরটুকুও এখন পর্যন্ত নেয়নি।

সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো হচ্ছে : অনন্যা নাট্যগোষ্ঠী, বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠী, চাঁদপুর ড্রামা, অনুপম নাট্যগোষ্ঠী, বর্ণমালা থিয়েটার, মেঘনা থিয়েটার, স্বরলিপি নাট্যদল, নবরূপা নাট্য সংগঠন, অরূপ নাট্য সংগঠন, শিশু থিয়েটার, সঙ্গীত নিকেতন, চাঁদপুর ললিত কলা, সপ্তসুর সঙ্গীত একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমি, সুরধ্বনি সঙ্গীত একাডেমি, উদয়ন সঙ্গীত বিদ্যালয়, আনন্দ ধ্বনি সঙ্গীত শিক্ষায়তন, নৃত্যাঙ্গন, নৃত্যধারা, সপ্তরূপা নৃত্য শিক্ষালয়, চতুরঙ্গ সাংস্কৃতিক সংগঠন, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী চাঁদপুর, রংধনু সৃজনশীল নৃত্য সংগঠন, রক্সি মিউজিক্যাল গ্রুপ, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা, নতুন কুঁড়ি সাংস্কৃতিক সংগঠন, স্বদেশ সাংস্কৃতিক সংগঠন, স্বপ্নকুড়ি নৃত্য শিক্ষালয়, রঙ্গের ঢোল সাংস্কৃতিক সংগঠন, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক ফোরাম, বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ, খেলাঘর আসর, কচি কাঁচার মেলা, চাঁদের হাট, মোহন বাঁশি স্মৃতি সংসদ, বিশ্ববঙ্গ সাংস্কৃতিক সংগঠন চাঁদপুর শাখা।

চাঁদপুরের সাংস্কৃতিক শিল্পীদের অবস্থার বেগতিক দেখে থিয়েটার ফোরাম চাঁদপুরের সভাপতি ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির নির্বাহী সদস্য শহীদ পাটোয়ারী চাঁদপুরের জেলা প্রশাসনের কাছে বিষয়টি অবহিত করেন। অবহিত হওয়ার পর তালিকা প্রণয়নের মাধ্যমে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান ১শ’ শিল্পীর সহায়তায় ১ মে. টন চাল দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিলেন। চাঁদপুরের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা-২০১৯ কর্তৃপক্ষ চালের পাশাপাশি কিছু সামগ্রী নিয়ে এগিয়ে আসলেন। তারা অর্ধলক্ষ টাকার সামগ্রী প্রদান করেন।

অবশেষে শতাধিক শিল্পীর মাঝে চালের পাশাপাশি ডাল, তেল, আটা, চিনি, ময়দা ও লবনসহ কিছু খাদ্য সামগ্রী দেয়া হয়েছে। যা গত ৮ এপ্রিল জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তন থেকে এ ১শ’ শিল্পীর বাসা-বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়। এ কাজে সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন থিয়েটার ফোরামের সভাপতি শহীদ পাটোয়ারী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তপন সরকার ও সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. বদিউজ্জামান কিরন, চতুরঙ্গের মহাসচিব হারুন আল রশিদ ও চাঁদপুর সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্রের সদস্য সচিব ইয়াহিয়া কিরন।

সাংস্কৃতিক সংগঠকরা জানান, চাঁদপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের এ সকল মধ্যবিত্ত শিল্পীদের পরিবার-পরিজন কীভাবে চলছে তা কেউই খবর রাখেনি। এরা না পারছে কাউকে কিছু বলতে, না পারছে কারো কাছে হাত পাততে। ওই ১শ’ শিল্পীর বাইরেও হাজারো মধ্যবিত্ত পরিবারের শিল্পী এখন করোনা ভাইরাসের কারণে বাসা বাড়িতে খোলাখুলি ভাবেই বলা যায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। অথচ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বেশ কয়েকটি ভিডিও কনফারেন্সে সরাসরি বলেছেন, মধ্যবিত্ত পরিবারের কেউ যেন না খেয়ে না থাকে। তিনি এও বলেছেন, প্রয়োজনে প্রয়োজনে এ সকল মধ্যবিত্ত পরিবারের তালিকা করে খাদ্য সহায়তা যাতে পৌঁছে দেয়া হয়। অপ্রিয় হলেও সত্য, এত বড় দুর্যোগে চাঁদপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গন নিয়ে কোন সরকারি বিভাগ, জনপ্রতিনিধি এমনকি এ শহরের বিত্তবানদের কোন মাথাব্যাথা নেই।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)