শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বপ্ন হল সত্যি

-অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ হাসান খান

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয়তু শেখ হাসিনা। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে অর্জিত হল আরেক বিজয়। সব জল্পনা-কল্পনার সমাপ্তি ঘটিয়ে ১০ ডিসেম্বর বসল পদ্মা সেতুর সর্বশেষ স্প্যান। দৃশ্যমান হল স্বপ্নের সেতু পদ্মা সেতু। দেশের সর্ব বৃহৎ সেতুটি তৈরি হল আমাদের টাকায়। নিন্দুকের মুখে ছাই দিয়ে পদ্মার দুই পারের মানুষের বন্ধন তৈরি হল। জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার কথা বললেন, তখন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, এই সেতু তৈরি হবে না, এই সেতু দিয়ে কেউ হাঁটবে না। জননেত্রী শেখ হাসিনা কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী। কাজ করে আরেকবার প্রমাণ করলেন বাংলার মানুষ চাইলেই পারে। এর মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যার দূরদর্শী নেতৃত্বের কথাও আরেকবার প্রমাণিত হল। উন্নত দেশগুলিও এখন বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করছে।

আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণের শুরুর ইতিহাস ভুলে যাইনি। বিশ্ব ব্যাংকের কথা ভুলে যাইনি। বিশ্ব ব্যাংক বলেছিল পদ্মা সেতুর প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে, তারা ঋণ দিবে না। তদন্ত কমিটি হল, তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি, রিপোর্ট হল পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয় নাই। জননেত্রী শেখ হাসিনা বললেন, বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ লাগবে না নিজেদের অর্থায়নে হবে পদ্মা সেতু। দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু কন্যার উপযুক্ত জবাব। শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্তে অনেকেই ঘাবড়ে গিয়েছিলেন সেদিন। আমরা জানতাম, নেতৃত্বে যখন বঙ্গবন্ধু কন্যা তখন জয় আমাদের হবেই হবে। আল্লাহ ভরসা।

পদ্মা সেতুর মূল কাজ শুরু হয় নভেম্বর, ২০১৪। আনুষ্ঠানিকভাবে কাজের উদ্বোধন করা হয় ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর দুপুর ২টায়। ২০১৭ সালে ৩০ সেম্পেম্বর পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বসানো হয়। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর সর্বশেষ স্প্যান বসানো হলে ৬.১৫ কি.মি. দীর্ঘ স্বপ্নের পদ্মা সেতুর পুরোটাই দৃশ্যমান হয়। পদ্মা সেতুর সর্বশেষ প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০১৯৩ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতুর ৯১ পার্সেন্ট কাজ শেষ হয়েছে। ২০২২ সালের মার্চে জনসাধারণের জন্য পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হবে। ৩০১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের সবচাইতে বড় সেতু নির্মিত হল, তাও নিজস্ব অর্থায়নে এই করোনার মধ্যে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব এবং মনোবলকে এখন নিন্দুকরাও স্যালুট জানাবে।

পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে, অর্থনীতিবিদগণ এই কথা জোর দিয়ে বলছেন। কারণ এই সেতুটি হওয়ায় রাজধানী ঢাকার সাথের দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১টি জেলার যোগাযোগ সহজ হবে। পদ্মা সেতু চার লেনের (২২ মিটার চওড়া যানবাহন চলাচলের পথ), এর স্প্যানের ভিতর দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পর্যালোচনা করে বলেছে : পদ্মা সেতু হলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উন্নীত হবে ১০ পার্সেন্টে। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অর্থনীতিতে জিডিপি এক পার্সেন্টেরও বেশি বাড়াবে। এখন বিশ্ব ব্যাংক বলছে, পদ্মা সেতু জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ পার্সেন্ট করে বাড়বে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে পদ্মা সেতু চালু হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রতিবছর ৩৫০০০ কোটি টাকার যোগ হবে। এই হিসাব থেকেই বুঝা যায়, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বদলে দিবে, উন্নয়নের গতি বহু গুণ বাড়াবে।

অর্থনীতির কথা গেল, সাধারণ মানুষের কথা বলছি। পদ্মা সেতু চালু হলে প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হবে ৩ কোটি মানুষ, অর্থাৎ দেশের প্রায় ৫ পার্সেন্ট মানুষ। এই কথা গবেষণা করে বলেছে বিশ্ব ব্যাংক। আবার রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ অঞ্চলের ১০০ কিলোমিটারের দূরত্ব কমবে। এতে করে ব্যবসা বাণিজ্যে আসবে উন্নতি, সময় বাঁচবে ভোগান্তি কমবে। নতুন শিল্পায়ন হবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, বহু লোকের মুখে হাসি ফুটবে। সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটাতেই তো কাজ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। এটাই তাঁর রাজনীতির একমাত্র লক্ষ্য, পিতা বঙ্গবন্ধু থেকে তিনি এই শিক্ষাই পেয়েছেন।

আজ ১২ ডিসেম্বর ২০২০ খ্রি. আমি ভাবি, বাংলাদেশের উন্নয়নে পদ্মা সেতু একটি মাইলফলক। করোনায় যখন পৃথিবীর অর্থনীতির ভঙ্গুর দশা সেখানে বাংলাদেশ পদ্মা সেতুর কাজ করেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হওয়ার মুহুর্তে পদ্মা সেতু আমাদের বড় অর্জন। যা সম্ভব হয়েছে কেবলমাত্র বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার শক্ত মনোবলের কারণে। বিশ্বব্যাংক যখন পদ্মা সেতুর অর্থায়ন করবে না বলেছিল, তখন দেশ বিরোধীরা মুচকি হেসেছে। যেন পদ্মা সেতু শেখ হাসিনা নিজের জন্য করতে চাচ্ছেন, মানুষের এতে উপকার হবে না। বিএনপির লোকজন ব্যঙ্গ করেছে, তারা বলেছে, শেখ হাসিনা মানুষকে মিথ্যা স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। তারা ভুলে গেছেন জননেত্রী জাতির জনকের কন্যা, জাতির জনক থেকে তিনি রাজনীতি শিখেছেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, পাকিস্তানের দালালরা ভেবেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা আকাশ-কুসুম কল্পনা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করে বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন সত্যি করেছেন। আজ তাঁর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাও বাংলার জনগণের বড় একটি স্বপ্ন সত্যি করলেন। যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা।

আজ আমরা অত্যান্ত আনন্দিত। বঙ্গবন্ধুর কন্যার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার দেশ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে সপরিবারে হত্যা করা হল নির্মমভাবে। প্রবাসে থাকায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বেঁচে যান। অনেক আন্দোলন- সংগ্রামের পর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এল। এখন পরপর তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করছে। নেতৃত্বে থেকে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশের হাল শক্ত হাতে ধরেছেন, এই কারণে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে সকল বাধা অতিক্রম করে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে অনুকরণীয়, শেখ হাসিনা বিশ্বের প্রভাবশালী নারী নেত্রী। কোন অপশক্তি অশুভ তৎপরতা, পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা বাংলাদেশকে থমকে দিতে পারবে না। পদ্মা সেতু হয়েছে, আরও অনেক স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা বাকি আছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সোনার বাংলা গড়ার কাজ শেষ হবেই ইনশাল্লাহ।

-লেখক : অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ হাসান খান, সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, চাঁদপুর জেলা।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)