সৈয়দ আহমেদ ভুঁইয়া, সৌদি আরব থেকে :
শুধুমাত্র সৌদি আরবে বসবাসকারী বিভিন্ন দেশের অধিবাসী ও দেশটির নাগরিকদের সমন্বয়ে দশ হাজার মানুষ এবার হজ্ব পালন করবেন। তারপরও প্রস্তুতিতে কোনো ধরনের কমতি নেই সৌদি কর্তৃপক্ষের।
রোববার থেকে এবারের হজ্বে অংশ নেওয়া হজ্বযাত্রীরা ৭ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকা শুরু করেছেন। এর মধ্য দিয়ে বলা চলে হজের আনুষ্ঠানিকতার প্রথম ধাপ শুরু হলো।৭ দিনের কোয়ারেন্টাইন শেষে ৩ জিলহজ্ব মক্কায় এসে আরও ৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন করবেন তারা।
এরপর ৮ জিলহজ্ব বাদ ফজর রওয়ানা হবেন মিনায়। মিনাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয় হজ্বের মূল আনুষ্ঠানিকতা। ১২ জিলহজ পর্যন্ত মিনা, মুজদালিফা, আরাফাতের ময়দান ও মক্কায় হজ্বের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হয়।
চলতি বছর বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে হজ্বযাত্রীদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার স্বার্থে বেশ কিছু নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ওই পদক্ষেপের আওতায় প্রত্যেক হজযাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে, দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন।
রোববার ভোর থেকে মক্কার নির্দিষ্ট এলাকাসহ মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসব স্থানে অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া কেউ প্রবেশ করলে তাকে ১০ হাজার সৌদি রিয়াল জরিমানা করা হবে।
এসব এলাকার পবেশ পথে কড়া নিরাপত্তা ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা সড়কে টহল দিচ্ছেন। মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাতের প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। জিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৯ কিংবা ৩০ (৮ জিলহজ) জুলাই থেকে হজ্বের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে, চলবে ৫ দিন।
হজ্বের কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের বিধিনিষেধ জারি থাকবে। কোভিড পরিস্থিতির কারণে হজ্বযাত্রীদের মধ্যে যাতে ভাইরাস ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্যে এ ধরনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে সৌদি আরবের হজ্ব ও উমরা মন্ত্রণালয় নিবন্ধিত হজ্বযাত্রীদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠিয়েছে। এসব সামগ্রীর বাইরে অন্য কিছু বহন করতে পারবে না হজ্বযাত্রীরা।
প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে- চিপলাগানো একটি স্মার্ট ব্রেসলেট, দুই সেট ইহরামের কাপড়, ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি, জামারাতে নিক্ষেপের জন্য জীবাণুমুক্ত কঙ্কর, জুতা, ফোনের চার্জার, জায়নামাজ, জুতার ব্যাগ, হাতব্যাগ এবং হজ্বের বিধি-বিধানসহ প্রাসঙ্গিক বই-পত্র ও স্বাস্থ্যবিধি সম্বলিত হজ্ব নির্দেশিকা।
যাতায়াতের জন্য প্রতি ২০জন করে একটি দল করা হয়েছে। প্রত্যেক বাসে বিশজন করে হজ্বযাত্রী চলাফেরা করবেন।
এদিকে মিনা, জামারাত, মুজদালিফা ও আরাফাতের ময়দানে যে অংশ হাজিরা অবস্থান করবেন, সেসব স্থান জীবাণুমক্ত করা হয়েছে। মসজিদে হারামের ভেতরে ও বাইরের অংশে নামাজের কাতারে নামাজের সময় শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য স্টিকার লাগানো হয়েছে।
এবার হাজিরা মিনার তাঁবুতে থাকবেন না। মিনার নির্দিষ্ট ভবনগুলোতে তারা অবস্থান করবেন। এছাড়া তাওয়াফের সময় কাবা শরীফ স্পর্শ ও হাজরে আসওয়াদে চুমো দেওয়া যাবে না। নির্দিষ্ট দূরত্বে থেকে তাওয়াফ ও সায়ী সম্পন্ন করতে হবে।
তাওয়াফের সময দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। নামাজের জামাতেও দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াতে হবে। সর্বাবস্থায় হজযাত্রীদের জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক।
হজযাত্রীরা বাইরে থেকে কোনোপ্রকার খাবার বা পানীয় নিয়ে হজের রীতিনীতি পালন করতে পারবেন না। সব হাজির জন্য খাবার ও পানি কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করবে।
কোরবানি সম্পন্ন করতে হবে ব্যাংকের মাধ্যমে। কোনো হজ্বযাত্রী নিজে কোরবানির পশু ক্রয় কিংবা জবাই করতে পারবেন না। হজ্ব ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত পরিবহন শ্রমিক, খাবার সরবরাহকারী ও স্বেচ্ছাসেবকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
হজ্বযাত্রী ও হজ্ব ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করা হবে। কারো মাঝে করোনার লক্ষণ প্রকাশ পেলে তাকে আইসোলেশনে পাঠানো হবে।
হারামাইন প্রেসিডেন্সি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এবারের হজের খুতবা ৫ ভাষায় অনুবাদ করে সম্প্রচার করার। ভাষাগুলো হলো- ইংরেজি, ইন্দোনেশিয়ান, উর্দু, ফ্রেঞ্চ ও ফারসি।
হজ্ব একটি ফরজ ইবাদত। সামর্থ্যবান নারী-পুরুষের জন্য জীবনে একবার হজ্ব পালন ফরজ। হজ্বের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে রয়েছে- ৮ জিলহজ্ব জোহর থেকে ৯ জিলহজ্ব ফজর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় আদায় ও রাতযাপন। এটা সুন্নত আমল।
৯ জিলহজ্ব আরাফাতে অবস্থান করা ফরজ। ওইদিন সূর্য অস্ত যাওয়ার পর আরাফাত থেকে মুজদালিফার উদ্দেশে রওয়ানা এবং মুজদালিফায় পৌঁছে মাগরিব ও এশার নামাজ এক আজানে দুই ইকামতে আদায় করা। মুজদালিফায় অবস্থান ওয়াজিব।
মুজদালিফায় ফজরের নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ অবস্থান শেষে মিনায় পৌঁছে বড় শয়তানের প্রতি ৭টি পাথর নিক্ষেপ করা। তামাত্তু বা কিরান হাজি হলে হজ্বের কোরবানি আদায় করা। মাথা মুণ্ডানো ও ইহরামমুক্ত হওয়া।
১০ জিলহজ্ব থেকে ১২ জিলহজের মধ্যে মক্কায় যেয়ে (হজের ফরজ তথা রুকন) তাওয়াফে জিয়ারত করা।
১১ জিলহজ্ব সূর্য দুপুরে পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়লে প্রথমে ছোট তারপর মেজ অতঃপর বড় শয়তানের প্রতি ৭টি করে পরপর ২১টি পাথর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। ১০ ও ১১ জিলহজ দিবাগত রাত মিনায় অবস্থান করা সুন্নত।
১২ জিলহকজ্ব সূর্য দুপুরে পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়লে ১১ জিলহজ্বের নিয়মে তিন শয়তানের প্রতি ২১টি পাথর নিক্ষেপ করে মক্কা মোকাররমার উদ্দেশে সূর্যাস্তের আগে মিনার সীমানা ত্যাগ করা।
১২ জিলহজ্ব মিনায় অবস্থান করে ১৩ জিলহজ্ব ১১ ও ১২ জিলহজ্বের মতো তিন শয়তানের প্রতি ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করে মিনা ত্যাগ করা সুন্নত। কিন্তু ১২ জিলহজ্ব মিনা ত্যাগ করা প্রচলন হয়ে গেছে। অতএব হজ্বের কার্যক্রমে ১৩ তারিখের কথা তেমন আসে না।
এবারের সীমিত হজ আয়োজনে সৌদি আরব ছাড়া থাকছে ১৬০ দেশের নাগরিকদের অংশগ্রহণ।