হাইমচরে পানিতে ভেসে গেছে পানচাষীদের স্বপ্ন

তালহা জুবায়ের :
হাইমচরে পানিতে ভেসে গেছে পান চাষীদের স্বপ্ন। বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে চাষীরা। জমিতে জমে থাকা পানিতে পচে গেছে পানের লতা। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে অধিকাংশ পানের বোরজ। কৃষকরা এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়েছেন।

পানের জন্য বিখ্যাত চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা। এই উপজেলার প্রায় ৫ হাজার কৃষক পান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু হঠাৎ করে আসা মেঘনা নদীর জোয়ারের পানি আর অতি বর্ষণের ফলে পানের বোরজে পানি জমে যায়। এতে পানের লতায় পচন ধরে উজার হয়ে যাচ্ছে অসংখ্য পানের বোরজ। পানিতে ভেসে যাচ্ছে কৃষকের বুনা স্বপ্ন।

হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী, মহজমপুর, আলগী উত্তর, আলগী দক্ষিণসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের এবার পান চাষে লোকসান গুনতে হচ্ছে সব চেয়ে বেশি।

হাইমচরের মহজমপুর এলাকার পান চাষী মো. রওশন আলী ঠাহদার জানান, এবছর আড়াই লাখ টাকা ব্যায়ে পাঁচ গোন্ডা জমিতে পানের বোরজ করেছেন। এর মধ্যে দুই লক্ষ টাকা স্থানীয় একটি সমিতি থেকে ঋণ নিয়েছেন। কিন্তু মেঘনা নদীর জোয়ারের পানি এবং অতিবৃষ্টির ফলে পানের বোরজে পানি জমে পানের লতা সব পচে গেছে। তিনি এখন দিশেহার এই ক্ষতি সামাল দিতে।

রওশন আলীর মত একই অবস্থা মহজনপুর গ্রামের পান চাষী আ. রহিম ও মো. দেলোয়ার হোসেনের। তারা বলেন, হাইমচরের অধিকাংশ কৃষকই পান চাষ করে থাকেন। এই এলাকা পানের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু এই বছর পানিতে তাদের পানের বোরজ তলীয়ে যাওয়ায় ব্যপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন পান চাষীরা। তবে এই সংকটময় সময়েও কৃষি বিভাগের লোকজন তাদেরকে কোন পরামর্শ দিতে আসেননি।

তারা বলেন, বিভিন্ন এনজিও ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে ঋণ করে পান চাষ করেছে অনেক কৃষক। এই দুঃসময়ে সরকারকে তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, চাঁদপুরে মোট ২শ’ ৩৭ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়। এর মধ্যে হাইমচর উপজেলার ২শ’ ২০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়। হাইমচরে মহানলি, চালতা বোটা ও নলডোগ নামের তিন জাতের পান চাষ হয়ে থাকে। জলাবদ্ধতায় এবার ১শ’ হেক্টর জমির পান নষ্ট হয়ে গেছে। এতে কৃষকরা আর্থিকভাবে অন্তত ১০ কোটি টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

হাইমচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবব্রত সরকার বলেন, এবছর মেঘনা নদীর জোয়ারের পানি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়ে অনেক ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে পানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে পানের বোরজে পানি জমে পানের লতা মরে গেছে।

উপজেলার অন্তত ১ হেক্টর জমির পানের বোরজ ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পান চাষীদের পরামর্শ প্রদানের পাশাপাশি সরকারিভাবে সহায়তা প্রদানের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রস্তাবনা পাঠাবো। কৃষকদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের স্বল্প লোকজন নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। তাই হয়তো কোথাও কৃষকদের কাছে যেতে একটু দেরি হতে পারে। তবে আমরা আমাদের স্বাধ্যমত কাজ করে যাচ্ছি।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)