অনৈতিহাসিক : বিএনপি এখন নেতৃত্বশূন্য ।। কর্মীরা বিচ্ছিন্ন

মুহম্মদ শফিকুর রহমান :
কয়েকদিন আগে একটি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখলাম দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বলছেন, “বেগম খালেদা জিয়া সরকারের সাথে সমঝোতা না করলে কারাগার থেকে বের হলেন কিভাবে? লেখাপড়া জানেন না নেতৃত্ব দেবেন কি করে?”

অর্থাৎ খালেদা জিয়ার এতদিনের আপোষহীন ভাবমূর্তি (যদিও এটি রাজপথ থেকে উঠে আসেনি, পত্রিকার পাতা থেকে বেরিয়েছে) ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে প্রধান নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা, রাজপথ জমিয়েছে তার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অথচ সেদিনের বৈরী মিডিয়া খালেদা জিয়াকেই তুলে ধরতো প্রধান নেতা হিসেবে। এমনকি যেদিন জনগণ সচিবালয়ের পতন ঘটাল অল-থ্রো সেদিন রাজপথের নেতৃত্বে ছিলেন শেখ হাসিনা। আর খালেদা জিয়া তার তখনকার মহাসচিব ওবায়দুর রহমানসহ হোটেল পূর্বাণীতে অবস্থান করছিলেন। আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে সাফল্যের মুহূর্তে তিনি বেরিয়ে এলেন এবং পল্টনে দলীয় নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য দেন যা পরদিনের অধিকাংশ কাগজে সেদিনের প্রধান খবর হয়। এমনি ভুরি ভুরি উদাহরন আছে ওইসব মিডিয়ার পক্ষপাতের। কিন্তু অন্তিমে বাস্তবে দেশে-বিদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বস্তুত যে দল সরকারও চালাতে পারেনা আন্দোলনও করতে পারে না সে দলের কোনো ভবিষ্যৎ থাকে না এটাই বাস্তবতা। এটাই বিএনপি।

একটা সময় ছিল এক শ্রেণীর মানুষ খামাখাই বিএনপির সমর্থন করতে। কারণ জানতে চাইলে মহিলারা বলতো খালেদা জিয়া ‘কত সোন্দর’ আর পুরুষরা বলতো খালেদা জিয়া আপোষহীন নেত্রী এবং ভারতবিরোধী। এই দল ইসলামে বিশ্বাস করে। গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। ২০০১ সালের অক্টোবর নির্বাচনে এক কোটি ২৪ লাখ ভুয়া ভোট ব্যবহার করে (আর্মি সহায়তা করে) নির্বাচনের রেজাল্ট নিজের পক্ষে নেয় এবং নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হবার আগে থেকেই প্রতিপক্ষের ওপর হামলা শুরু করে। তাদের হামলার শিকার হয় প্রধানত হিন্দুসহ সংখ্যালগু সম্প্রদায় এবং মুসলিম সম্প্রদায় তথা হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে নৌকার ভোটার। তাদের পুকুরের মাছ, গোয়ালের গরু, বনের গাছ কেটে নিয়ে যায়, গ্রামীণ বাজারের দোকানদারদের ওপর চাঁদা দাবী করে নইলে ব্যবসা বন্ধ করে রাখে। বিভিন্ন স্থানে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নেতৃত্বে স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাদের প্রতিরোধ করতে যেয়ে অনেকটা উল্টো মামলার আসামী হতে হয়। এক পর্যায়ে দলীয় নেতাকর্মীরা বাড়ি ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়। মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে লঙ্গরখানা খুলে কর্মীদের দেখাশুনা করেন। ২০০৬ সালে আবার নির্বাচন এলে খালেদা জিয়ার অনুগত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন কে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান-এর অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে নির্বাচন বৈতরণী পার হবার ষড়যন্ত্র করে। এর বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ এর নেতৃত্বে ১৫ দল আন্দোলন করে তাদের পতন ঘটায়।

সামান্য একটা সময়ের ঘটনাবলী বিবরণ থেকে এটা কি প্রতীয়মান হয় বিএনপি একটি বহুদলীয় গণতান্ত্রিক দল? হ্যাঁ খালেদা জিয়ার একটা বাড়াবাড়ি আছে কিছুতেই ক্ষমতা ছাড়বেন না এবং এ জন্য প্রয়োজনে মানুষের চোখ উপড়াতে হয় উপড়াবে, হাতের কবজি কাটতে হয় কাটবে। নির্বাচনে যতরকম কারচুরি আছে করবে। সাথে রয়েছে একাত্তরের ঘাতক-দালাল জামাত-শিবির আলবদর রাজাকার বাহিনী ও তাদের সন্তানরা। আসলে এই দলটির প্রতিষ্ঠাতা মিলিটারি জিয়া যেমন ছিলেন স্বৈরাচার খুনি তেমনি ভূয়া পলিটিশিয়ান “আই উইল মেক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট ফর দ্যা পলিটিশিয়ানস” এই ছিল তাঁর আদর্শ এবং এতে করে জিয়া তার স্ত্রীর জন্যই রাজনীতি ডিফিকাল্ট করে গেছেন। ছেলে এবং তার হাওয়া ভবন আরো অনেক গুণ ডিফিকাল্ট করেছেন যার ফল এখন ভুগছেন।

বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া (চেয়ারপারসন) এবং তদীয় পুত্র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুজনে দুর্নীতির মামলায় ফেঁসে গিয়ে প্রথমজন সম্প্রতি জেল থেকে ছয় মাসের জন্য ছাড়া পেয়েছেন দ্বিতীয়জন দন্ড মাথায় নিয়ে লন্ডনে পলাতক আছেন। এরপর রয়েছে দুজন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও রুহুল কবির রিজভী। আগে তাদের খুব দেখা যেত খবরের কাগজে। সাম্প্রতিককালে খুব একটা দেখা যায় না। গ্রামের দিকে তো তাদের কোন খানা নেই এখন। দু’একজন আছেন চায়ের দোকানে বসে সরকার সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলতে থাকে। এটাকে তারা হুইসপার ক্যাম্পেইন হিসেবে নিয়েছেন। বিএনপির সঙ্গে ছিল ওয়ান ম্যান পার্টির নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না এবং সাইফুল হক এখন সো-কলড ভিপি নুরের সাথে যোগ দিয়েছে। নুর সাবেক হয়ে এখন রাজনৈতিক দল করছেন। মান্না সাইফুলদের খড়কুটো ধরে বাঁচার একটা সুযোগ এসেছে। বিএনপিও নুরের সাথে যোগ দিতে পারে। তবে নূরের অবস্থাও কেরোসিন ধর্ষকের সহযোগী হিসেবে ফৌজদারি মামলার আসামি। ধর্ষিত মেয়েটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এবং সে বিচারের দাবীতে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে অনশন করে চলেছেন। নুর মেয়েটিকে দুশ্চরিত্রা বলে গেরাকলে আটকা পড়েছেন। একাত্তর টেলিভিশন-এর বিরুদ্ধে কথা বলায় সাংবাদিক ইউনিয়ন প্রেস বিবৃতি দিয়ে নূরকে তার বক্তব্য প্রত্যাহার এবং ক্ষমা চাইতে বলেছে। অন্যথায় ইউনিয়ন আরো কড়া পদক্ষেপ নেবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে। তবে তার গায়ে ধর্ষণ না হলেও ধর্ষকের সহযোগীর যে সিল পড়েছে এটা নিয়ে রাজনীতি হবেনা নূর যে তথাকথিত সাধারন ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে “ছাত্র অধিকার পরিষদ” নামে নতুন রাজনৈতিক দল গড়তে যাচ্ছিল আতুড় ঘরেই তার বিনাশ শুরু হয়েছে। নূরসহ তিন নেতা অবাঞ্চিত। বলবে এটা সরকারী দল করিয়েছে। যাই বলুক ধর্ষক বা ধর্ষকের সহযোগীকে কেউ নেতা মানবেনা।

তবে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো কাগজে দেখলাম ধর্ষণের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করছেন। মানববন্ধনে ওই ছাত্রীর ধর্ষকের বিচার না চেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় থেকে চলে যেতে বলেছেন। মামা বাড়ির আবদার আর কি? অথচ শেখ হাসিনাই ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড এই আইন করলেন। এবং এই আইনে ইতিমধ্যে টাঙ্গাইলের ভূয়াপুরে ২০১২ সালে এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে গ্যাং-রেপকারী পাঁচজনকে আদালত মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। নুর বলেছেন দেশ নাকি ফুঁসে উঠেছে। কোথায় ফুঁসে উঠলো রাজধানীর কোন মানুষ দেখলোনা, জানলোনা, নুর আবিষ্কার করলো- এই লোক আবার করবে রাজনীতি। ও ভুলে গেছে ডাকসুর ভিপি হলেই সবাই তোফায়েল আহমেদ হয়না। সেটা স্মরণ করিয়ে দিলাম।

আরো কিছু স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি হাইকোর্ট জামাত-শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর ওই হায়েনার দলও এখন ছারখার বলেই যে যেভাবে পারছে অন্য দলে ঢুকে পড়েছে। তবে ওই হায়েনার প্রথম এবং প্রধান টার্গেট আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠন। তাদের ঘুষ দেবার ফান্ডের কোন অভাব নেই। মধ্যপ্রাচ্যের কোন কোন মুসলিম দেশ ইসলাম প্রচারের জন্য আমাদের মত মুসলিম দেশগুলোকে বেছে নেয় এবং আমাদের দেশে ওদের ফেভারিট দল হল জামাত শিবির। এরও একটা অতীত আছে। ১৯৪১ সালে কায়রোতে হাসান আল বান্না নামে এক ভদ্রলোক মুসলিম ব্রাদারহুড নাম দিয়ে একটি দল গঠন করে। এই দলটি বিভিন্ন নামে বিভিন্ন মুসলিম দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে এর নাম জামাতে ইসলামী বাংলাদেশ। জামাতের প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলী মওদুদী ১৯৪২ সালে মিশর যান এবং হাসান আল বান্নার সাথে দেখা করে ফিরে এসে জামাত গঠন করেন। মুসলিম ব্রাদারহুড বর্তমানে তুরস্কে ক্ষমতায় আছে। আর কোন দেশে নেই। কয়েক বছর আগে মিশরেও ক্ষমতায় গিয়েছিল কিন্তু এক বছরের মাথায় এর পতন ঘটায় এবং মুসলিম ব্রাদারহুড বিরোধী পন্থীরা ক্ষমতায় আসেন এবং এখনো শাসন করছেন। কিন্তু কামাল আতাতুর্কের তুরস্কে তারা জেঁকে বসে আছে। তারা সেই সব দেশে ক্ষমতায় থাকুক আমাদের প্রবলেম কি? কিন্তু এরা আমাদের মতো দেশে ইসলাম প্রচারের নামে ওই সব দলকে বস্তায় বস্তায় টাকা দেয় যা দিয়ে ওরা দল, চাকরী, প্রশাসন কিনবার চেষ্টা করে। খালেদা জিয়ার ক্ষমতাকালেতো (২০০১-২০০৬) ক্ষমতার শেয়ার করে মুক্তিযুদ্ধের শহীদানের রক্তরঞ্জিত জাতীয় পতাকা উড়ায়। তাদের বাড়ি গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়তো তখন। মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবারের সদস্য সন্তানদের সামনে দিয়ে ওই রাজাকার-আলবদররা জাতীয় পতাকা উড়িয়ে যেত। শহীদ সন্তানের বুকটা তখন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যেত। খালেদা জিয়া নাকি মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী অথচ রাজাকারের সংস্পর্শ ছিল তারকাছে আনন্দদায়ক। খালেদাকে তারা অর্থ দিয়ে ওই পতাকা কিনে দিয়েছিল। অবশ্য জিয়া নিজেই ছিল পাকিপন্থী। মুক্তিযুদ্ধের মাঝেও ষড়যন্ত্র করেছে এবং অস্তিমে মোশতাকের সাথে মিশে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক নিষিদ্ধ জামাতকে আবার প্রকাশ্যে রাজনীতিতে নিয়ে আসে।

এইসব বিষয়াবলী বিএনপির রাজনীতির দৈন্যদশার কারণ। দ্বিতীয়তঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা যে উচ্চতায় ধীশক্তি দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন সে তুলনায় খালেদা জিয়া একেবারেই শিশু। লেখাপড়া নেই দল চালাবার যোগ্যতা নেই সরকারে গিয়েও কোন যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারেননি। ফলে যা হবার হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার সাথে সাথে গণবিচ্ছিন্ন হয়ে এখন নিশ্চুপ হয়ে গেছেন। এটাই তাদের নিয়তি। দেশ ও জাতির সাথে বেইমানি করলে এমন পরিণতি বরণ করতে হয় #

ঢাকা – ১৬ অক্টোঃ ২০২০
লেখক – এমপি
সাবেক সভাপতি ও সাঃ সম্পাদক, জাতীয় প্রেসক্লাব
ইমেইল – balisshafiq@gmail.com

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)