অনৈতিহাসিক : স্বাধীনতা-বিরোধীরা চেহারা পাল্টে তৎপর

মুহম্মদ শফিকুর রহমান :
ভেবেছিলাম ইগনোর করবো। এখন দেখছি না, চেহারাটা উন্মোচন হওয়া জরুরী এজন্য যে বড় বড় রথী-মহারথীরা কোথায় হারিয়ে গেছেন অনেকে তাদের খোঁজও জানেনা। আ স ম আব্দুর রব, ডঃ কামাল হোসেন, মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলাদেশের রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন।

তারা আজ কোথায়? তাছাড়াও যারা এই ডাকসুর ভিপি হয় তারা সবাই নিজেকে তোফায়েল আহমেদ ভাবে। বাঘের সাথে গাধার তুলনা। ভিপি নুর নামক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র হঠাৎ গজিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। তিনি রাস্তা ধরেছেন সকলকে পেছনে ফেলার। আর তার টার্গেট হলো বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আর প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার। ছাত্রলীগ নাকি তাকে প্রত্যেকদিন পেটায়।

হাস্যকর নয় কি? ছাত্রলীগ পেটালে তারতো ক্যাম্পাসে থাকারই কথা নয়। তার ভিপির লাঠিতো স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেছে। এখন শুনছি রাজনৈতিক দল করবে। একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না। তোফায়েল আহমেদ আসম আব্দুর রব ষাটের দশকে এক বিশাল শক্তিধর পাকিস্তানি মিলিটারি জান্তার বিরুদ্ধে দুনিয়া কাঁপানো ছাত্র গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণায় ডাকে নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ করে বাঙালির জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন।

তারা ওয়ার্ল্ড মিডিয়ার নায়ক ছিলেন। মাহমুদুর রহমান মান্না ও তাদের দেখাদেখি গণঅভ্যুত্থান ঘটানোর জন্য লাশ খুঁজে বেড়িয়েছেন। এখনতো পাচ্ছেন অনেক। গতকালওতো দেখলাম ৬ জনের ফাঁসি হয়েছে। তা থেকে একটা দুইটা চেয়ে নিয়ে রাজপথে নামতে পারেন। প্রয়োজনে নুরকেও সাথে নিতে পারেন।

একাত্তরে আমরা যখন পাকিস্তানি বর্বরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলাম তখনও পাকিস্তানপন্থী অর্থাৎ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী একটা অপশক্তি পাকিদের পায়রবি করেছে। তাদের বাংলাদেশের মানুষ ভালো করেই চেনে। তাদের অপতৎপরতা আজও শেষ হয়নি।

এখনো সুযোগ পেলেই ছোবল মারতে চায়। তার একটি হল সাম্প্রতিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক কোটা প্রথা বিরোধী আন্দোলন। তখনই আমরা তাদের আইডেন্টিফাই করেছি এটা তথাকথিত কোটা প্রথা বিরোধী আন্দোলন মূলত মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান বিরোধী আন্দোলন। এই আন্দোলনটা মূলত ছিল ছদ্দবেশী শিবিরের আন্দোলন।

এতে যারা অংশ নিয়েছে তারা সবাই যে শিবির ছিল তা বলবোনা। কিছু কিছু ছিল না-বুঝে ঢোলের বাড়ি শুনেছে অমনি বুড়ি নাচতে শুরু করেছে। নূরের চেহারা তো আজকে পরিষ্কার। বিশেষ করে ইউটিউব খুললেই দেখা যাবে ওয়াজের নামে এক শ্রেণীর আলেম কি বলছেন।

একজনতো বলেই ফেললেন “নুর হযরত ওমর (রাঃ) অনুসারী”। এদেরই একজনকে বলতে শুনলাম স্বাধীনতা-উত্তরকালে সবচেয়ে সফল শিক্ষিত দুইজন অ্যাটর্নি জেনারেলের অন্যতম মাহবুবে আলমের ইন্তেকালে বলছেন তিনি সাঈদীর ফাঁসি হয়নি বলে দুঃখ পেয়েছেন আজ সাঈদী বেঁচে আছে তিনি চলে গেছেন।মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর পরও এমনি জঘন্য বিষোদগার করা হয়েছে।

এই লোক গুলোই আবার নূরকে আকাশে তোলার চেষ্টা করেছেন।এরাই যুদ্ধাপরাধী হিসেবে যাবজ্জীবন (আমরন কারাবাস) সাজাপ্রাপ্ত দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর জন্য কথায় কথায় কান্নাকাটি করেন। এইসব তথাকথিত আলেমের কথা শুনলে মনে হবে ইসলামের পোশাক অর্থাৎ আরবীয় পোশাক পরলেই মানুষ ঈমানদার হয়ে যায়। ওই পোশাক পরে রেপ করলেও মাপ। তাদের কাছে কতগুলো প্রশ্ন:
• ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার মিলিটারি বর্বর বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় জামাত এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্র সংঘ (বর্তমান ছাত্রশিবির)। এটি ঐতিহাসিক সত্য। এ কাজটি কি ইসলাম সম্মত ছিল? গণহত্যা নারী ধর্ষন ইসলাম কেন কোন ধর্ম, সভ্যতা কি সমর্থন করে? করেনা।
• দেলোয়ার হোসেন সাঈদী স্বাধীনতার পর ওয়াজ করে বেড়াতো। হঠাৎ করে দেখা গেল তিনি জামায়াতে যোগদান করেছেন এবং জামাতের শীর্ষ নেতৃত্বের নেক্সট টু নাম্বার ওয়ান হিসেবে সিরিয়াসলি দল করতে লাগলেন। তার মানে তিনি একাত্তরের জামাত-শিবিরের পাকিস্তানিদের গণহত্যা নারী নির্যাতন রেপকে অপরাধ মনে করেননা বলেই জামাতের রাজনীতি শুরু করেন। মূলত এই ভদ্রলোক চিরকালই জামাতি ছিল ছদ্দবেশী। মওকা বুঝে প্রকাশ্যে চলে আসে।
• দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বিচার হয়েছে প্রকাশ্য আদালতে এবং তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ছিল এবং তারা তার পক্ষে আদালতে ভূমিকা রেখেছে। এভাবেই তার শাস্তি হয়েছে। আদালত কিন্তু একাত্তরের পাকিস্তানি হানাদার মিলিটারি জামাত-শিবিরের সহযোগিতায় যত্রতত্র গুলি করে যাকে তাকে হত্যা করেনি, রেপ করে নারীদের হত্যা করেনি বা চোখ বেঁধে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের বধ্যভূমিতে গুলি করে ব্যয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেনি। আদালত দেশের প্রচলিত আইন এর ধারা অনুযায়ী বিচার করেছে। তাহলে যারা বলেন ‘জালেম সরকার’ সাঈদীকে জ্বেলে রেখেছে তারা কি ন্যয় সত্যের কথা বলেন?
• ইউটিউব মুসলিম টিভি জাহান টিভি এমনি কিছু মিডিয়ার আবির্ভাব ঘটেছে সেগুলোতে যারা প্রেজেন্টার তাদের পরিচয় কি? তারা মনে করে বাংলাদেশের মানুষ কিছুই বুঝেনা? দেশের মানুষের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিদেশে গিয়ে অনলাইন টিভি চালাচ্ছে। এরা পয়সা পায় কোথায়? এর উত্তরও সোজা স্বাধীনতা বিরোধী বিশেষ করে জামাত-শিবির এদের পয়সার যোগান দেয়।
• একটা দেশ ভালো চলছে। কোভিড-১৯ বা করোনার ছোবল না হলে গত ছয় মাসে দেশ আরো অনেক এগিয়ে যেত। তবুও সঠিক রাষ্ট্রনেতৃত্ব থাকায় দেশ পিছাচ্ছেনা। এগিয়ে চলেছে। যদিও গতি আগের মত নেই।
• এই যে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এটাই তাদের ভালো লাগে না। ইনিয়ে বিনিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলা ওইসব প্রেজেন্টার এবং মোল্লা মৌলভীদের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভাত কাপড়ের অভাব নেই তো? মাদ্রাসার হুজুররা যে হারে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন তাতে করে তাদের মাথা ঘুরে যাবার কথা। আমাদের ছেলে বেলায় দেখেছি ভারতের রামপুর বা দেত্তবন্ধু থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে দেশে ফিরে মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন, বেতন পেতেন মাসে ৩০/৪০ টাকা। তাও একবারে পেতেননা, একেকবার ১০/১৫ টাকা পেতেন। আর আজ দাখিল মাদ্রাসার বেতন সরকারি হাইস্কুল এবং আলেম থেকে আলিয়া পর্যন্ত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কেলে বেতন পায়। অর্থাৎ মাদ্রাসার শিক্ষকরা ২০ থেকে ২৫ হাজার আলেম থেকে আলিয়া ৩০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত বেতন পায়। পদ-পদবীও পাল্টাচ্ছে। তাছাড়াও এখন তারাও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মত প্রভাষক, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, এসোসিয়েট প্রফেসর, প্রফেসর নামে পরিচিত। এমনকি কওমি মাদ্রাসা যারা সরকারের কোনো বেতন ভাতা সাহায্য কিছুই পেতেননা তারাও আজ আলিয়া সিস্টেমের মত সব পায়। পদবী সহ।
• এই সম্মানটা দিলেন শেখ হাসিনা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং বিশ্বনন্দিত রাষ্ট্রনেতা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা।
• এই শেখ হাসিনাই ৭৫ এর ১৫ আগস্ট ট্রাজেডির পর টানা ছয় বছর বিদেশে শিরাশ্রয় অবস্থায় বা অন্যের আশ্রয়ে থেকে দেশে ফিরে প্রথমে মিলিটারি স্বৈরাচারী জঞ্জালের বিরুদ্ধে জয়ী হয়েছেন। তারপর স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগকে নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসে প্রথমে দেশ থেকে দীর্ঘ দিনের জমে থাকা মিলিটারি জঞ্জাল দূর করেছেন। তারপর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে হাত দিয়ে এই কবছরে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত করেছেন। মাঝে ২০০১-২০০৬ এই পাঁচ বছর জামাত শিবিরকে নিয়ে খালেদা জিয়া ক্ষমতা দখল না করলে দেশ আরো অনেক এগিয়ে যেত। এরপরও বলব দেশের প্রধান খাদ্য ঘাটতি মিটিয়ে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছেন, মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছর, গড় আয় ২০০০ মার্কিন ডলার (১৭০০০০ টাকা) ছাড়িয়েছে, সারাদেশ বিদ্যুতায়িত, যেসব দুর্গম এলাকা যেখানে বিদ্যুতের লাইন নেয়া যাচ্ছে না সেখানেও সোলার প্যানেল দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। খালেদা জিয়া’র ২০০৬ সালে মাত্র ৩২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রেখে গেছেন। আজ তা ২৪ হাজার মেগাওয়াট, সারাদেশে আর্সেনিকমুক্ত পানি সরবরাহের ডিপ টিউবওয়েল বসানো হচ্ছে। অর্থাৎ মানুষের যাবতীয় মৌলিক চাহিদা পূরণ করে চলেছেন। তারপরও ওই সব লোকদের ভাল্লাগেনা। একদিন পথ চলতে চলতে দুজন মাদ্রাসা ছাত্রের কথোপকথন শুনছিলাম, একজন মাদ্রাসা শিক্ষকদের মর্যাদা প্রদান ন্যাশনাল স্কেল দেবার বললে অন্যজন বললেন এগুলো কি শেখ হাসিনার বাপের ঘর থেকে এনে দিচ্ছেন সরকারি অর্থে সবকিছু করছেন। কাছে থাকলে একটা প্রশ্ন করতাম এর আগেও খালেদা জিয়াসহ অনেক সরকার গেছে তারা কি তাদের বাপের ঘর থেকে এনে দিয়েছিল?
• এই করোনাকালীন সময়েও দেশব্যাপী নারী নির্যাতন বেড়েছে। এতে ছাত্রলীগের বখাটে কর্মী কেবল নয়, মসজিদের ইমাম মাদ্রাসার শিক্ষকও কম যাননা।
• সর্বশেষ যে কথাটি বলবো তা হলো বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জামাত-শিবির সঙ্গে সঙ্গেই রাজনীতিতে প্রকাশ্যে আসেনি। তখন মাওলানা আব্দুর রহিম নামে একজনকে প্রধান করে ইসলামী ঐক্যজোট নামে একটি জোট গঠন করে ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। তারপর জিয়ার আমলে প্রকাশ্যে রাজনীতিতে উঠে আসে।

দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছে এমনকি খালেদা জিয়ার সাথে রাষ্ট্রক্ষমতা শেয়ার করেছে। পরবর্তীতে হাইকোর্টের রায়ের পর আবার গা ঢাকা দিয়েছে। নুরও তা-ই। কোটা প্রথা বিরোধীতার নামে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতার মাধ্যমে জামাত-শিবিরকে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অচেনা অখ্যাত এক গ্রাম থেকে উঠে আসা এক যুবককে সামনে ঠেলে দিয়ে মাওলানা আব্দুর রহিম বানাতে চাইছে। কিন্তু পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনায় অনেক পানি গড়িয়েছে এই সামান্য কথাটিও তাদের বোঝার মেধা নেই। #

ঢাকা – ০২ অক্টোঃ ২০২০ মুজিববর্ষ
লেখক – সিনিয়র সাংবাদিক ও এমপি
ইমেইল – balisshafiq@gmail.com

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)