চাঁদপুরে করোনায় আক্রান্ত বাড়ছে হু হু করে : দশ দিনে আক্রান্ত ২০৩, মৃত ৩

রহিম বাদশা :
চাঁদপুরে করোনা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে। আক্রান্ত রোগী বাড়ছে হু হু করে। বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। সোম ও মঙ্গলবার দু’দিনে জেলায় আরো ৫১জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মঙ্গলবার একদিনে চাঁদপুর সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ১জন করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। অন্যজন প্রচন্ড শ্বাসকষ্টসহ করোনার নানা উপসর্গে ভুগছিলেন।

এছাড়া গত দশ দিনে (২১-৩০ মার্চ) জেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২০৩জন। একই সময়ে মারা গেছেন ৩জন। ধারণা করা হচ্ছে, আক্রান্ত ও মৃত আরো অনেকে স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাবের বাইরে থাকছেন নমুনা পরীক্ষা না করানোয়। চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে এ যাবৎ কালের সর্বাধিক (৩৮জন) রোগজী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে করোনা পজেটিভ ২৫জন ও উপসর্গে আক্রান্ত ১৩জন রয়েছেন। সারা জেলায় চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যাও ২শ’ ছাড়িয়েছে।

সর্বশেষ মঙ্গলবার ভোরে চাঁদপুর সদর হাসপাতালের করোনা বিষয়ক আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রহিমা বেগম (৬৫) নামের এক নারী মারা গেছেন। তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। সোমবার বেলা ১১টার দিকে করোনার উপসর্গ নিয়ে তিনি হাসপাতালে আসেন। তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তির পর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রাতে রিপোর্ট আসে তিনি করোনায় আক্রান্ত। মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) ভোর ৪টার দিকে তিনি মারা যান। তার বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলার মৈশাদী ইউনিয়নের শিলন্দিয়া গ্রামে।

অন্যদিকে করোনার উপসর্গ নিয়ে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টায় সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ইউছুফ ভূঁইয়া (৭০) নামের এক বৃদ্ধ মারা যান। তার বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বহরিয়া গ্রামে। ইউছুফ ভূঁইয়া এ দিন সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটের সময় প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তিন ঘন্টার ব্যবধানে রাত সাড়ে ৯টায় তিনি মারা যান। মৃত্যুর পূর্বে নমুনা সংগ্রহ না করায় স্বাস্থ্য বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার নমুনা আর সংগ্রহ করা হবে না। অর্থাৎ তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কিনা তা আর জানার সুযোগ নেই। করোনায় মৃতের তালিকায় থাকছে না তার নাম।

সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত দুই দিনেই চাঁদপুরে ৫১জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩১৪৮জন। আর মৃত বেড়ে হয়েছে ৯৩জন। সূত্র জানায়, সোমবার জেলায় মোট ২০৫জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ৩৪জনের রিপোর্ট করোনা পজেটিভ। বাকী ১৭১জনের রিপোর্ট করোনা নেগেটিভ। অন্যদিকে মঙ্গলবার দিনভর ১১০জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রাতে প্রাপ্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ১৭জন করোনায় আক্রান্ত, বাকী ৯৩জনের রিপোর্ট করোনা নেগেটিভ।

সূত্র আরো জানায়, সোমবার জেলায় যে ৩৪জনের করোনা শনাক্ত হয় তার মধ্যে রয়েছে- চাঁদপুর সদর উপজেলার ১৬জন, মতলব দক্ষিণের ২জন, মতলব উত্তরের ২জন, ফদিরগঞ্জের ৩জন, হাজীগঞ্জের ৫জন, শাহরাস্তির ৩জন, হাইমচরের ২জন ও কচুয়ার ১জন। অন্যদিকে মঙ্গলবার যে ১৭জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- চাঁদপুর সদর উপজেলার ১২জন, ফরিদগঞ্জের ২জন, মতলব দক্ষিণের ১জন, হাইমচরের ১জন ও শাহরাস্তির ১জন।

তবে গত দু’দিনে জেলার কাউকে করোনামুক্ত ঘোষণা করা হয়নি। নতুন ৫১জনসহ জেলায় আক্রান্তসহ জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩১৪৮জন। মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯৩জন। সুস্থ হয়েছেন ২৮২৮জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ২২৭জন। এর মধ্যে চাঁদপুর সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ২৫জন। বাকীরা হোম আইসোলেশনে আছেন।

চাঁদপুর জেলায় বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত ৩১৪৮জনের উপজেলাভিত্তিক পরিসংখ্যান হলো : চাঁদপুর সদরে ১৪০১জন, ফরিদগঞ্জে ৩৪০জন, মতলব দক্ষিণে ৩২৪জন, শাহরাস্তিতে ২৭৭জন, হাজীগঞ্জে ২৭৮জন, মতলব উত্তরে ২৩৪জন, হাইমচরে ১৮২জন ও কচুয়ায় ১১২জন।

করোনায় জেলায় মোট ৯৩জন মৃতের উপজেলাভিত্তিক পরিসংখ্যান হলো : চাঁদপুর সদরে ৩২জন, হাজীগঞ্জে ১৭জন, ফরিদগঞ্জে ১৪জন, মতলব উত্তরের ১১জন, শাহরাস্তিতে ৭জন, কচুয়ায় ৬জন, মতলব দক্ষিণে ৫জন ও হাইমচরে ১জন।

চাঁদপুর সরকারি জেনারেল (সদর) হাসপাতালের আরএমও ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেল মঙ্গলবার রাতে চাঁদপুর প্রবাহকে জানান, চাঁদপুর সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রেকর্ড সংখ্যক ৩৮জন করোনা রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে করোনা পজেটিভ ২৫জন ও উপসর্গ থাকা ১৩জন। পরিস্থিতি ঘন্টায় ঘন্টায় অবনতি হচ্ছে। রোগীর চাপ সামাল দিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। তিনি আরো জানান, চাঁদপুরে করোনার সংক্রমণ শুরুর পর এত অধিক সংখ্যক করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গ থাকা রোগী আর কখেনোই চাঁদপুর সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল না।

সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ জানান, চাঁদপুরের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। দেশের শীর্ষ সংক্রমণ কবলিত জেলার মধ্যে চাঁদপুরের অবস্থান উপরের দিকে। দিন দিন আক্রান্তের হার বাড়ছে। তবে জনসচেতনতা হতাশাজনক। মাস্ক পড়া ও স্বাস্থ্যবিধি মানার হার খুব কম। তিনি বলেন, ভৌগলিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লে তার প্রভাব পড়ছে চাঁদপুরে। কারণ, এই দু’টি জেলার সাথে চাঁদপুরের মানুষের যোগাযোগ বেশি।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)