আব্দুস সালাম আজাদ জুয়েল :
চাঁদপুর জেলায় সমাজসেবার ডিজিটাল সেবা পাচ্ছেন ১ লাখ ৮৯ হাজার ভাতা ভোগী অসহায় মানুষ। দেশের এই মহামারী কভিড ১৯ এর কারণে লকডাউনেও চাঁদপুর জেলার মানুষের হাতে ভাতার টাকা পৌঁছে দিচ্ছে সমাজসেবা অধিদফতর।
ভাতার টাকা তুলতে এখন আর লাইনে দাঁড়িয়ে কষ্ট করতে হবে না কাউকে। ভাতার টাকা চলে যাচ্ছে নিজ নিজ মোবাইলে । আর এই কাজটি করছেন “নগদ” ও ব্যাংক এশিয়া।
সমাজসেবা অধিদফতরের সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম বাস্তবায়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এড়াঃ. ঃড় ঢ়বৎংড়হ (এ২চ) পদ্ধতিতে ভাতা বিতরণ করার সময়োপযোগী ও যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন শেখ হাসিনার সরকার।
সেই প্রেক্ষিতে চাঁদপুর জেলার ৪টি উপজেলা (কচুয়া, শাহরাস্তি, মতলব উত্তর এবং মতলব দক্ষিণ) ও চাঁদপুর পৌরসভায় জিটুপি পদ্ধতিতে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডার ‘নগদ’ ও ৪টি উপজেলায় (সদর, ফরিদগঞ্জ, হাইমচর ও হাজীগঞ্জ) এজেন্ট ব্যাংকিং ‘ব্যাংক এশিয়া’র মাধ্যমে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯২১ জন বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে ১২৪ কোটি ৩৭ লাখ ৯৪ হাজার টাকা ভাতা ভোগী অসহায় মানুষ পাচ্ছেন এই সুবিধা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে সরাসরি ভাতাভোগীর কাছে প্রেরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
এতদিন সামাজিক নিরাপত্তার কর্মসূচির আওতায় ভাতার টাকা প্রচলিত ব্যাংকের মাধ্যমে প্রদান করা হতো। ফলে ভাতাগ্রহীতাদের ব্যাংকে নিজ খরচে গিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে ভাতার টাকা গ্রহণ করতে হতো। এতে ভাতাভোগীরা চরম ভোগান্তি পোহাতেন এবং আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হতেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বর্তমানে এজেন্ট ব্যাংকিং ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে ভাতার অর্থ দেওয়া হচ্ছে। আগামী ৩০ জুনের মধ্যেই সব ভাতাভোগীর টাকা হাতের মুঠোয় পর্যায়ক্রমে পৌঁছে যাবে।
এ কাজটি সম্পাদনের জন্য সমাজসেবা অধিদফতরের ভাতা ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিষ্টেম গওঝ এ প্রথমে ভাতাভোগীদের জাতীয় পরিচয়পত্র/অনলাইন জন্ম নিবন্ধন ভেলিডেশন এর মাধ্যমে ডাটা এন্ট্রি করা হয়েছে। এরপর ডাটাসমূহ যাচাইবাছাই, ভেলিডেশন, মোবাইলে বা এজেন্ট ব্যাংকিং হিসাব খোলা এবং সবশেষে পে-রোল প্রেরণ করা হয়েছে। এরপর সমাজসেবা অধিদফতর কর্তৃক ই-বিল দাখিল করা হয়েছে। অর্থবিভাগের আইবাস প্লাস প্লাস (রনধং++) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊঋঞ (ঊষবপঃৎড়হরপ ঋঁহফ ঞৎধহংভবৎ) এর মাধ্যমে ভাতাভোগীর একাউন্টে পৌঁছে যাচ্ছে ভাতার টাকা।
কাজটি সম্পাদনে জনপ্রতিনিধি, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় সরকার বিভাগ, ইউডিসি, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আমাদেরকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন। তবে বয়স্ক ভাতার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী যাঁদের বয়স (পুরুষ ৬৫, মহিলা ৬২) হয়নি অথবা যারা বয়স টেম্পারিং করে এতদিন ভাতা পেয়েছেন তারা সিষ্টেম থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাদ পড়ে গেছেন।
আবার একই পরিবারের সদস্য বা নিকটাত্মীয়ের মধ্যে একই মোবাইল নম্বর যাঁরা একাধিক ভাতাভোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন তাদের মধ্যে একজন ছাড়া অপর ভাতাভোগীর ভাতা উক্ত মোবাইল নম্বরে যাবে না। সেক্ষেত্রে তাঁকে স্বশরীরে ভাতার বইসহ নিজ নামে নিবন্ধনকৃত মোবাইল সীম নিয়ে অনতিবিলম্বে সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে হবে। তখন তিনিও নিজ বাড়ীতে বসে মোবাইলে পেয়ে যাবেন ভাতার টাকা।
চাঁদপুর জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার (উপ-পরিচালক) রজত শুভ্র সরকারের তথ্য মতে, জেলার ৮টি উপজেলার ভাতা ভোগীদের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হলো- কচুয়া উপজেলায় মোট ভাতা ভোগীর সংখ্যা ৩২৯৫৭জন। এর মধ্যে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন ১৮১৮৩, বিধবা ভাতা ভোগী ৮৩৮০, প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগী ৬২৪২, প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি পাচ্ছেন ১৫২জন।
মতলব দক্ষিণ উপজেলার মোট ভাতা ভোগী হলো ১৭৮৫৬জন। এর মধ্যে বয়স্ক ভাতা ভোগী ১০৫০০ জন, বিধবা ভাতা ভোগী ৫১৬৫ জন, প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগী ২১১৮জন, প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি পাচ্ছেন ৭৩জন।
মতলব উত্তর উপজেলায় মোট ভাতা ভোগী ২৮৬০৪জন। এর মধ্যে বয়স্ক ভাতা ভোগী ১৭২৫৪জন, বিধবা মহিলা ভাতা ভোগী ৭৪৫৬জন, প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগী ৩৮০৬জন, প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি ভাত পাচ্ছেন ৮৮জন।
শাহরাস্তি উপজেলায় মোট ভাতা ভোগী ২১৩৭৫জন। এর মধ্যে বয়স্ক ভাতা ভোগী ১১৪৪৯জন, বিধবা মহিলা ভাতা ভোগী ৫৭৩৮জন, প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগী ৩৯৮৭জন, প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি পাচ্ছেন ২০১জন।
চাঁদপুর পৌরসভায় মোট ভাতা ভোগী হলো ৫৩৭৭জন। এর মধ্যে বয়স্ক ভাতা ভোগী ৩১১৫জন, বিধবা মহিলা ভাতা ভোগী ৮২৯জন, প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগী ১৩৮৫জন, প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি পাচ্ছেন ৪৮জন।
চাঁদপুর সদর উপজেলায় মোট ভাতা ভোগী ১৮৯৪৩জন। এর মধ্যে বয়স্ক ভাতা ভোগী ১১৭২৪জন, বিধবা ভাতা ভোগী ৩১৭৩জন, প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগী ৩৯৪৪জন, প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি পাচ্ছেন ১০২জন।
ফরিদগঞ্জ উপজেলায় মোট ভাতা ভোগী ২৫০৫৬জন। এর মধ্যে বয়স্ক ভাতা ভোগী ১৫৯৩৩জন, বিধবা ভাতা ভোগী ৪৩৮০জন, প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগী ৫১০৩জন, প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি পাচ্ছেন ১৮০জন।
হাইমচর উপজেলায় মোট ভাতা ভোগী ১১২৭০জন। এর মধ্যে বয়স্ক ভাতা ভোগী ৬৬৯০জন, বিধবা ভাতা ভোগী ৩১৬০জন, প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগী ১৩৭২জন, প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি পাচ্ছেন ৪৮জন।
হাজীগঞ্জ উপজেলায় মোট ভাতা ভোগী হলো ২৮৪৮৩জন। এর মধ্যে বয়স্ক ভাতা ভোগী হলো ১৫৯৮৮জন, বিধবা মহিলা ভাতা ভোগী হলো ৮০৯৬জন, প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগী হলো ৪২৭২জন, প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি পাচ্ছেন ১২৭জন। এই সুবিধাভোগীরা জিটুপি পদ্ধতিতে ভাতা পাচ্ছেন।