কবির হোসেন মিজি/শরীফুল ইসলাম :
চাঁদপুর জেলায় পর্যটনের নতুন মনোলোভা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে টইটুম্বুর, অত্যন্ত আকর্ষণীয় স্পট খুঁজে পেয়েছে ভ্রমণপিপাসু মানুষ। জেলায় প্রধান পর্যটন কেন্দ্র বড়স্টেশন মোলহেডের মতোই আরেকটি দর্শনীয় স্থান এটি।
নতুন এই পর্যটন কেন্দ্রটি ফরিদগঞ্জ উপজেলার গাজীপুর বাজার এলাকায় ডাকাতিয়া নদীর ওপর নবনির্মিত ব্রিজ ও সংলগ্ন বিশাল ঝিলের মাঝখানে সদ্যনির্মিত নতুন সড়ক।
অনেকেই ওই স্থানটির নাম দিয়েছে গাজীপুর মিনি হাওড়। নামটি পরিচিতি পাওয়ার পর থেকে সেখানে প্রতিদিন জেলা এবং জেলার বাইরে থেকে হাজার হাজার পর্যটক ভিড় জমাচ্ছে।
এদিকে করোনা পরিস্থিতি মাথায় রেখে দেশের সকল পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। মানুষ একটানা ঘরে বন্ধি থাকার কারণে একপ্রকার অস্বস্তি ভোগ করছেন। তাই একটু মনোরম পরিবেশ আর প্রকৃতির সন্ধান মেলা মাত্রই এখানে ছুটে আসছেন ভ্রমণপিপাসু মানুষজন।
নগরজীবন ও ব্যস্ত মানুষের একগুয়েমি ভাব কাটাতে একটু ফুসরত নিতে হলে ইট-পাথরের দেয়ালের শহর ছেড়ে গাজীপুর মিনি হাওড়ে একটু ঘুরে আসতে পারেন। ভাল লাগবে নিঃসন্দেহে। মনটাও হয়ে উঠবে ফুরফুরে। সময়টাও কাটবে বেশ ভাল।
জীবনে ক্ষয়ে যাওয়া সময়কে ভুলে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস পেতে হাওরে ছুটে যেতে পারেন। সন্ধ্যে হলে ঝিলের পানিতে সূর্যের স্নানের নয়নাভিরাম দৃশ্যপট নদী কিংবা সমুদ্র সৈকতের চেয়ে কোনো অংশে কম আকর্ষণীয় নয়! সেখানে পাবেন মনোরম বাতাস আর গ্রামের সহজ সরল মানুষ।
গাজীপুর মিনি হাওড়ে যেভাবে যাবেন : আপনি যদি চাঁদপুর জেলা সদরের হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি শহরের যে কোন স্থান থেকে অটোরিক্সা বা সিএনজি করে সেখানে যেতে পারবেন। যদি রিজাব নিয়ে থাকেন, তাহলে ১৫০-২০০ টাকার মধ্যে যেতে পারবেন। আর যদি জন প্রতি যান, তাহলে ৪০/৫০ টাকা লাগবে।
এছাড়া জেলা সদরের বাইরে যারা যাবেন, তাদেরকে ওয়ারলেস বাজার মোড়ে এসে নামতে হবে। সেখান থেকে সিএনজিযোগে ধানুয়া বাজারে নামবেন। তারপর অটো-সিএনজিকে বলতে হবে গাজীপুর ব্রিজ যাবো, আপনাকে সেখানে নিয়ে যাবে। মোট কথা আপনি খুব সহজে ৩০/৪০ মিনিটের মধ্যে খুব কম টাকায় সেখানে ঘুরে আসতে পারবেন।
সেখানে গিয়ে যা দেখবেন : গাজীপুর বাজার ডাকাতিয়া নদীর ওপর ব্রিজ হয়ে ধানুয়া বাজারে যাওয়ার জন্য সুন্দর একটি ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া রাস্তার দু’পাশে রয়েছে বিশাল কয়েকটি ব্যাক্তি মালিকানা ঝিল। আর তার তার দিয়েই বয়ে গেছে ডাকাতিয়া নদী। পুরো তাকাতিয়া ধেকে আছে কচুরি ফেনায়। তাই নজর নেই কারো সেখানে।
ঝিল আর সড়কের দু’পাশে ছোট ছোট সিসি ব্লক বসানোর কারণে সৌন্দর্য্য আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এক কথায় ঝিল আর সরু রাস্তার কারণে চারপাশের প্রকৃতি সেজে আছে। একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস আর বিনোদনের জন্য সেখানে আপনাকে যেতেই হবে।
সেখানে ঘুরে আসা জাহিদ মিলন ও ফারাজানা জানান, করোনাভাইরাসের কারনে মানুষ প্রায় ৩ মাস ধরে ঘর বন্ধি। গত কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গাজীপুর মিনি হাওড় নামে এই স্থানটি ভাইরাল হয়।
তারপর থেকেই এখানে আসার জন্য উদ্যোগ। তবে করোনা পরিস্থিতিতে আমাদেরকে ঝুঁকি নিয়ে এখানে আসা উচিত নয়। যারা আসবেন সকলেই নিজেদেরকে সেভ রেভে আসা উচিত।
গাজীপুর বাজার মিনি ঝিলের মৎস্য ব্যবসায়ী সাইফুল মেম্বার বলেন, এখানে নতুন করে একটি ব্রিজ আর ঝিলে দু’পাশে রাস্তা তৈরি হওয়ার আমরা যেমেন উপকৃত হয়েছি, ঠিক তেমনি বেড়েছে এই এলাকার সৌন্দর্য্য। আমি এখানে দীর্ঘদিন ধরে মাছ চাষ করে থাকি। বছরে ৫/৭ কোটি টাকার মাছ বিক্রি করি।
বর্তমানে মাছের ঝিল আর এই স্থানটি দেখতে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। আমরা চাই এখানে যেন সুন্দর একটি পর্যটন এড়িয়া গড়ে তোলা হয়।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. জাহিদুল ইসলাম রোমান জানান, কিছুদিন আগেই গাজীপুর ব্রিজের কাজ শেষ হয়েছে। তবে ব্রিজ আর ঝিলের রাস্তার জন্য যে পরিবেশ এত সুন্দর হবে, তা আমাদের জানা ছিল না। মানুষ করোনার মধ্যেও এখানে ছুটে আসছেন। ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সেখানে আরো কাজ করা হবে।