নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুর জেলা আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির মাসিক সমন্বয় সভা রোববার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের সভাপতিত্বে সভার শুরুতে গেল অক্টোবর মাসের সিদ্ধান্তসমূহ এবং অগ্রগতিসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক তথ্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন সরোয়ার।
সভায় বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ (বিপিএম-বার), নৌ-পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক একেএম মাহবুবুর রহমান, শাহরাস্তি পৌর মেয়র আব্দুল লতিফ, কচুয়া পৌর মেয়র নাজমুল আলম স্বপন, জেলা নির্বাচন অফিসার তোফায়েল হোসেন, পাসপোর্ট অফিসে সহকারী পরিচালক শরিফুল ইসলাম, জেলা শিক্ষা অফিসার মো. গিয়াস উদ্দিন পাটোয়ারী, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. ইছারুহুল্লাহ, চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক গোপাল চন্দ্র সাহা প্রমুখ। এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে সদ্য যোগদানকারী বিসিএস ক্যাডারের ৮জন সদস্য তাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে ডিস্ট্রিক্ট মিটিং এর কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত হওয়ার জন্য এ সভায় অংশ নেন।
উন্মুক্ত আলোচনায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন, বিভিন্ন রাস্তার সমস্যা, বিভিন্ন মেলা, শহরের যানজট নিরসন, কিশোর গ্যাং অপরাধ, কুয়াশার রাতে বাল্কহেড চলাচল বন্ধ, গণপরিবহণের ভাড়া মনিটর, লঞ্চে লাইফ জ্যাকেট নিশ্চিতকরণ, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর দাম সহনীয় পর্যায় রাখতে বাজার মনিটরিং, পাসপোর্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে বিড়ম্বনা, অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ, অবৈধ ইটভাটা বন্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ অন্যান্য কয়েকটি বিষয়ের উপর আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জেলা প্রশাসক তার বক্তব্যে বলেন, শহরের যানজটের মাত্রা বেড়ে গেছে। রাস্তায় চলাচল করা দায় হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতির পরিত্রাণ প্রয়োজন। তিনি বলেন, রাত ৮টার পর থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত শহরে ট্রাক ঢুকবে। দিনের বেলা শহরে কোন ট্রাক ঢুকতে পারবে না। এ বিষয়ে আগের সিদ্ধান্তই বহাল থাকবে। রেজিস্ট্রেশন বিহীন অবৈধ সিএনজি’র বিরুদ্ধে বিআরটিএ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে। যাত্রীবাহী নৌযান ও যানবাহন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে কিনা তা দেখা হবে এবং মোবাইল কোর্ট চলবে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ তার বক্তব্যে বলেন, শহরে অসহনীয় যানজট সৃষ্টির জন্য দায়ী অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা, অটোবাইক। বৈধর চেয়ে অনেক বেশি গুণ যানবাহন চলাচল করছে। তিনি বলেন, ট্রাক বা অন্য কোন অবৈধ যানবাহনই বলেন আটকাতে আমরা প্রস্তুত, আইনও আছে। কিন্তু যখন এগুলো আমরা ধরি তারপর থেকে তদবীর শুরু হয় ছেড়ে দেয়ার। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে রাজনৈতিক সামাজিক লোকদের কঠোর হতে হবে ও আন্তরিক হতে হবে। পুলিশ সুপার বলেন, চাঁদপুরে নির্দিষ্ট কোন সিএনজি ও অটোস্ট্যান্ড নাই। অটোবাইকসহ অনেক যানবাহনেরও স্ট্যান্ড নাই। অথচ এসব যানবাহনই বেশি। এসবের জন্য স্ব স্ব স্ট্যান্ড যদি থাকতো তাহলে, সড়কে অনেক সমস্যা কমে যেত। তিনি বলেন, গেল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমাদের চাঁদপুরে আইনশৃঙ্খলা অন্যান্য জেলার চেয়ে ভালো ছিল। আমরা জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বিজিবি, অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা লোকজন সবাই সক্রিয় ছিলাম বলেই নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ ভালো ছিল
চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, শহরে মানুষের চলাচল বেশি, গাড়ীও বেশি কিন্তু রাস্তার প্রশস্ত অনেক কম। এটি প্রশস্ত করনে অনেক ধরণের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেটি মোকাবেলা করে আমরা এগুচ্ছি। অনেক রাস্তা আমরা প্রশস্ত করেছি। তিনি বলেন, বিকল্প রাস্তা তৈরি করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। মুখার্জীঘাট থেকে চৌধুরীঘাট পর্যন্ত একটি রাস্তা করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু সড়ককে দুই লেইন করে তা শাহাতলী পর্যন্ত নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ২শ’ কোটি টাকার প্রকল্প প্রণয়ন করেছি। এসব উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য সেটা জুন মাসের মধ্যে হবে এমনটা আশা করছি। তিনি বলেন, চাঁদপুর আমরা ইজিবাইক ডিজিটাল নেমপ্লেট করেছি, সেখানে অবৈধ গাড়ী চলাচলের সুযোগ নাই। তাছাড়া লাইসেন্স শনাক্ত করার সহজ পদ্ধতি রয়েছে। কোন ইজিবাইক নাম্বার ছাড়া পাওয়া গেলে সেটাকে অবৈধ গণ্য করা হবে। চাঁদপুর শহরে ২৬২৭টি ইজিবাইকের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। সিএনজি অটোরিক্সা পৌরসভার অধীনে নয়। শহরের রাস্তাগুলো ২০/৩০ টন লোড নিতে পারে না। কিন্তু দেখা গেছে ৪০ থেকে ৫০ টনের গাড়ি চলে। এতে করে দ্রæত রাস্তা নষ্ট হয়ে যায়। রাস্তা প্রশস্ত করতে হলে বিদ্যুতের খুঁটি সরাতে হয়। বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর কাজে এ পর্যন্ত প্রায় ২ লক্ষ টাকা পৌরসভা ব্যয় করেছে।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ তার বক্তব্যে আরো বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য বাজার মনিটরিং জোরদার করা হবে। তিনি বলেন, শীতের মৌসুমে তথা শুষ্ক মৌসুমে ইটভাটা চালু হচ্ছে। আমি জানতে পেরেছি এ জেলায় প্রায় শতাধিক ইটভাটা অবৈধভাবে আছে। এই অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে প্রতিটি ইটভাটায় যেন অভিযান চালাতে হবে এখনই। পরিবেশ অধিদপ্তর না পারলে জেলা প্রশাসনের সাপোর্ট নিয়ে সেগুলো বন্ধ করা হবে। জেলা প্রশাসক বলেন, যেসব ইটভাটা অবৈধভাবে চলছে তাতে আমাদের পরিবেশ যে পরিমাণ দূষণ হচ্ছে এবং মাটির যে ক্ষতি হচ্ছে তা অনেক বড় ক্ষতি। এত ইটভাটা আমাদের প্রয়োজন আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে।
সদ্য অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচন বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, অন্যান্য জেলার তুলনায় চাঁদপুর সদরে সুষ্ঠু সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হয়েছে। এখানে জনগণ ভোট দিতে পেরেছে, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হয়েছে। তিনি বলেন, ছোটখাটো কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে এই নির্বাচন নিয়ে। আমরা নির্বাচনের আগেই জেলা প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং আইনশৃঙ্খলাকারী বাহিনী নিয়ে সমন্বয় সভা করি এবং তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় আমরা তৈরি করেছিলাম। অনেক জায়গায় চেষ্টা হয়েছে নির্বাচনের ফলাফল যাতে কেন্দ্রে না আসতে পারে, ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপার যাতে রেখে যেতে হয়। সেই চেষ্টা সফল হয়নি। অনেকটা সফলভাবে এ নির্বাচনকে তুলে আনতে পেরেছি। এ জন্য তিনি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রশাসনিক কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্যদের ধন্যবাদ জানান। জেলা প্রশাসক বলেন, আগামীতে যেসব ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আছে সেগুলো যাতে সুস্থ সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে করা যায় সেই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, জহিরাবাদ, ফতেহপুর ও এখলাশপুর ইউনিয়নের সীমানা নিয়ে জটিলতা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন এবং জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাথে এ ব্যাপারে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে যে এখানে নির্বাচন করার উপযোগী পরিবেশ আছে কিনা। করোনা টিকার বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ফাইজারের টিকা এসেছে। ১৮ বছরের নিচে যাদের বয়স শিক্ষার্থীদের আমরা টিকা দেওয়া শুরু করব। এর জন্য আমরা একটি টিকা কেন্দ্র সিলেক্ট করেছি। এ ক্ষেত্রে আমরা আলামিন স্কুল এন্ড কলেজকে ঠিক করা হয়েছে। এর জন্য এখানে এসির ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্কুল সভাপতি ও চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপু তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৬টি টিকা বুথের জন্য ৬টি এসির ব্যবস্থা করে দেয়ায় জেলা প্রশাসক তাকে ধন্যবাদ জানান।
জেলা প্রশাসক বলেন, আমাদের মন্ত্রী মহোদয় যদি সময় পান তাহলে মঙ্গলবার থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের দ্বারা করোনা টিকা দেয়া শুরু করা হবে। প্রথম দিন ২০০জনকে দেওয়া হবে। চাঁদপুরে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, কেবিনেটকে জানানো হয়েছে। আরো কিছুদিন অপেক্ষা করার জন্য বলেছে। কোভিড পরিস্থিতি দেখে তারা সিদ্ধান্ত জানাবে বলেছে। তিনি বলেন, চাঁদপুরে করোনা পরিস্থিতি ভালো অবস্থানে আছে। গত চব্বিশ ঘন্টায় ৮৭জনের স্যাম্পল নেওয়া হলেও তাদের মধ্যে একজনের কোভিড পাওয়া যায়নি। করোনা শনাক্ত ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। তারপরও আমাদেরকে সচেতন সজাগ থাকতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, নিয়মিত মাস্ক পরিধান করা।