ঠিকাদারের কাজ করছে চাঁদপুর সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ!

কবির হোসেন মিজি :
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল (সদর) হাসপাতালে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার থাকা সত্তে¡ও প্রায় ৩ বছর ধরে নিজস্ব আঙ্গিকে ধোপার কাজ পরিচালনা করে আসছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবুও ধোপার সংশ্লিষ্ট জিনিসপত্র নিয়ে প্রায়ই রোগীদের কাছ থেকে নানা অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

এতে একদিকে যেমন সরকারি অতিরিক্ত বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে অন্যদিকে অপচয় হচ্ছে সরকারের দেয়া হুইল পাউডার, ব্লিসিং পাউডারসহ হাসপাতালের নানা জিনিসপত্র। একই সাথে লোকবল সঙ্কট থাকা সত্তে¡ও এক কাজের লোক অন্য কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

জানা যায়, প্রায় তিন বছর পূর্বে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব আঙ্গিকে হাসপাতালে বিছানার চাদর এবং অপারেশন থিয়েটারের বিভিন্ন পোষাকপত্র ধোয়ার জন্য দু’টি ওয়াশিং মেশিন আনেন। তারপর থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ধোপার কাজ না দিয়ে হাসপাতালের চতুর্থ তলায় প্রতিদিন ধোপার কাজ সম্পন্ন করা হয়। এতে প্রতিদিন ২ থেকে ৩জন লোক ধোপার কাজ করে থাকেন।

যে দুটি ওয়াশিং মেশিন আনা হয়েছিল সেই ওয়াশিং মেশিন দু’টি বছরখানেক পূর্বে নষ্ট হয়ে যায়। তারপর থেকে হাসপাতালে আয়ার দায়িত্বে থাকা লোকজন হাসপাতালের বিছানার চাদর এবং অপারেশন থিয়েটারের বিভিন্ন জিনিসপত্র ধোয়ার কাজ করেন। কিন্তু যে অভিযোগের কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার থাকা সত্ত্বেও তাদের নিজস্ব আঙ্গিকে ধোয়ার কাজ নিয়ে আসেন সেই অভিযোগ রোগীদের কাছে থেকেই গেল।

প্রায় সময়ই হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে রোগীদের কাছে অভিযোগ পাওয়া যায়, তারা ঠিকমতো বিছানার চাদর বা বালিশ পাননি। অনেক রোগী জানান, তাদেরকে হাসপাতাল থেকে যে বিছানার চাদর দেওয়া হয় সেইসব চাদর একেবারে অপরিষ্কার এবং বিভিন্ন দাগ পড়ে থাকে।

অপরিষ্কার এবং দাগযুক্ত চাদর ব্যবহার করার ইচ্ছে জাগে না। তাই অধিকাংশ রোগী ও রোগীর লোকজন হাসপাতাল থেকে চাদর নিয়ে তার উপরে মার্কেট থেকে ক্রয় করে কিংবা নিজ নিজ বাসা থেকে আলাদা চাদর এনে হাসপাতালে ব্যবহার করে থাকেন।

যে অভিযোগের কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ধোপার কাজ না দিয়ে নিজেরাই সে ধোপার কাজ পরিচালনা করছেন অথচ প্রতিনিয়ত রোগীদের কাছ থেকে চাদর ঠিকমতো না পাওয়া এবং অপরিষ্কারের সেই একই অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

এ বিষয়ে হাসপাতালে বিভিন্ন পদে দায়িত্বে থাকা বেশ কয়েকজনের সাথে আলাপকালে তারা জানান, গত কয়েক বছর এবং বর্তমানেও একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ধোপার টেন্ডার রয়েছে। কিন্তু তিনি সময় মতো হাসপাতালে চাদর না দেওয়ায় এবং ভালোভাবে চাদর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না হওয়ার কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ধোপার কাজ না দিয়ে গত কয়েক বছর ধরে হাসপাতালের নিজস্ব লোকজন দিয়ে ধোপার কাজ পরিচালনা করে আসছেন। তবে এ বিষয়ে তবে এই খাতে সরকারিভাবে কোন বিল পরিশোধ করা হয়নি। এটি হাসপাতালের লোকজনকেই বহন করতে হচ্ছে।

জানা যায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব আঙ্গিকে এই ধোপার কাজ দেখিয়ে হাসপাতালে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা খাতে বিভিন্ন বিল আদায়ের জন্য কয়েকটি আবেদন করেন। কিন্তু এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোন খাতে এধরনের কোন বিলের জন্য আবেদন করেননি বলে জানান।

এ বিষয়ে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হাবিব-উল-করিম জানান, ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি সময় মতো বিছানার চাদর, বালিশের কভারসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র না দেয়ায় এবং ভালোভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না হওয়ার কারণে এটি অনেক আগে থেকেই হাসপাতাল হাসপাতালের নিজস্ব আঙ্গিকে পরিচালনা করে আসছে। এখন হয়তো বা নতুন বছরে নতুন করে টেন্ডার হলে আমরা সেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দিয়েই ধোপার কাজ পরিচালনা করবো।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)