দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও স্বনির্ভর চাঁদপুরের হাফেজ ইব্রাহিম খলিল

কবির হোসেন মিজি :
চাঁদপুরে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী (অন্ধ) হয়েও বিভিন্ন ধরনের স্বাভাবিক কাজ করে চলেছেন কোরআনে হাফেজ ইব্রাহিম খলিল। অন্ধত্ব জীবনযাপনে চলেফেরা করে ইমামতি এবং ফ্ল্যাক্সিলোডসহ নানা কাজ করে সংসার চালিয়ে আসছেন এই দৃষ্টিহীন কোরআনে হাফেজ।

দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে দেখা গেছে, এই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী খলিলুর রহমান শহরের বিভিন্ন স্থানে কারো সহযোগিতা ছাড়াই হাটাচলাও করছেন।

পাশাপাশি জীবন-জীবিকার টানে দৃষ্টিহীনভাবেই বিভিন্নজনকে মোবাইলে ফ্ল্যাক্সিলোড করে থাকেন। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো- এই অন্ধ হাফেজ চোখে দেখতে না পেলেও বিভিন্ন পরিচিতজনের মোবাইল কল রিসিভ এবং কল দিয়ে থাকেন।

কারো কারো কণ্ঠ একটু শুনেই ওই পরিচিত ব্যক্তির নাম বলে দিতে পারেন। এছাড়া তিনি যখন যেখানে যান তখন অন্য কারো সহযোগিতা ছাড়াই রাস্তায় চলাফেরা করে থাকেন। আর এভাবেই তিনি দীর্ঘ বছর ধরে চাঁদপুরে জীবনযাপন করে চলেছেন

চাঁদপুরে যাকে অধিকাংশ লোকই অন্ধ হাফেজ খলিলুর নামে চিনে। খবর নিয়ে জানা গেছে, ইব্রাহিম খলিলুর রহমান বর্তমানে চাঁদপুর সদরের ভূমি অফিস জামে মসজিদে ইমামতির দায়িত্ব পালন করছেন। এর পাশাপাশি তিনি চাঁদপুর ডিসি অফিস, জজ কোর্ট, পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস, চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ এবং শিক্ষক অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কর্মরত বিভিন্নজনকে ফ্ল্যাক্সিলোড করে থাকে।

শুক্রবার এবং শনিবার সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন তার গড়ে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকার ফ্ল্যাক্সিলোড হয়ে থাকে। এতে তার দৈনিক এক থেকে দেড়শ টাকা আয় হয়।

ইব্রাহিম খলিলুর রহমান জানান, ঢাকা থেকে বিশেষ ট্রেনিং নিয়ে তিনি এ ফ্ল্যাক্সিলোড করে থাকেন। ফ্ল্যাক্সিলোড করতে গিয়ে কখনো কখনো নাম্বার ভুল হয়ে যায়। কিন্তু সে টাকা আর ফেরত পাওয়া যায় না বেশির ভাগ ক্ষেত্রে।

হাফেজ মোঃ ইব্রাহিম খলিলুর রহমান ১৯৮৬ সালে চাঁদপুর শহরের দক্ষিণ বিষ্ণুদী এলাকার জিটি রোডে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মোহাম্মদ আলী আহমদ মিয়াজী। তিনি জানান, জন্মের পাঁচ বছর পর টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তিনি দৃষ্টিহীন হয়ে পড়েন।

তারপর তিনি স্কুলজীবন শুরু করে ২০০০ সালে চাঁদপুর প্রতিবন্ধী স্কুল থেকে এসএসসি পাস এবং ২০০৫ সালে কোরআনে হাফেজ সম্পন্ন করেন। ২০০৯ সালে সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে তার সংসার জীবনে দুই মেয়ে এবং এক ছেলে রয়েছে।

খলিলুর রহমান মসজিদে ইমামতি এবং বিভিন্নজনের মোবাইলে ফ্ল্যাক্সিলোড করেন। এভাবেই তার সংসারের হাল টেনে আসছে। এছাড়া তিনি বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলেও বক্তব্য দিয়ে থাকেন বলে জানান।

এই দৃষ্টিহীন জীবনে কিভাবে সে এত কাজ করা সম্ভব- এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, তিনি একাই বিভিন্ন জায়গায় চলাফেরা করে থাকেন এবং ঢাকা থেকে বিশেষ ট্রেনিং নিয়ে মানুষকে ফ্ল্যাক্সিলোড করেন ও বিভিন্নজনের কল রিসিভ এবং কল ব্যাক করে থাকেন। এতে তার চলাফেরা তেমন কোন সমস্যা না হলেও রাস্তা পারাপারের সময় মানুষের সহযোগিতা নিতে হয়।

তবে একা চলার ক্ষেত্রে কারো সহযোগিতা পেলে একটু ভালো হয় বলে জানান। যখন তিনি দূরে যান তখন সাদাছড়ি ব্যবহার করে থাকেন। এভাবেই দৃষ্টিহীন হয়ে অন্ধত্ব জীবনযাপন করে কর্মের মাধ্যমে এগিয়ে চলছে অন্ধ হাফেজ ইব্রাহিম খলিলের জীবনতরী।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)