সুজন পোদ্দার :
চাঞ্চল্যকর পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার প্রকৃত আসামির পরিবর্তে ভাড়া করে জেল খাটানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে কচুয়া উপজেলার আইনপুর গ্রামের মো. নুরুজ্জামানের ছেলে মো. আবু ইউসুফের সঙ্গে। পুলিশি তদন্তে সত্যতাও মিলেছে এই অভিযোগের।
ইউসুফের বাবা নুরুজ্জামান উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির একজন কর্মচারী। এক ছেলে, দুই মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে স্বল্প বেতনের চাকুরিতে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন। একমাত্র ছেলে ইউসুফের স্বপ্ন ছিল লেখাপড়ার পাশাপাশি ক্রিকেট খেলা। ইউসুফ কুমিল্লা প্রাইভেটে প্যারামেডিক্যাল লেখাপড়ার পাশাপাশি কুমিল্লা জেলার ক্রিকেট দলের একজন নিয়মিত খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে উঠেন।
কিন্তু তার বাবার স্বপ্ন ছিল প্যারামেডিক্যাল পাশ করে সে ডাক্তারি পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করবেন। তার ছেলে ক্রিকেট খেলায় মনোযোগী হয়ে পড়ায় বাবা নুরুজ্জামান অভিমান করে ছেলের আর কোন খোঁজ খবর নিতেন না। তার পাশাপাশি ছেলের থাকা-খাওয়া ও ভরণ-পোষণের টাকাও দিতেন না। ইউসুফও অভিমান করে তার বাবার সাথে যোগাযোগ রাখেনি।
এর’ই মধ্যে ইউসুফ ঢাকা বিকেএসপির ক্রিকেট দলের সদস্য হওয়ার জন্য বিভিন্নজনের সাথে আলোচনা করেন। বিকেএসপির ক্রিকেট দলের সদস্য হওয়ার জন্য ফাঁদে পড়ে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে পড়ে। আমাদের প্রতিবেদকে এ অভিযোগ করেন তার বাবা নুরুজ্জামান।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, নারীদের টোপ হিসেবে ব্যবহার করে বিত্তশালীদের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেয় একটি চক্র। এই চক্রের কবলে পড়েন সিআইডি পুলিশের এসআই মো. মামুন ইমরান খান। এরপর তাকে ধরে নিয়ে হত্যার পর পেট্রোল ঢেলে লাশ পুড়িয়ে গাজীপুর বনে ফেলে দেয় হত্যাকারীরা।
এ ঘটনায় নিহত এসআইয়ের ভাই বাদী হয়ে ঢাকার বনানী থানায় ২০১৮ সালের ১০ জুলাই মামলা করেন। এই মামলায় ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। এরপর ঢাকার ১ নম্বর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচার শুরু হয় মামলাটির। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
এই মামলার ৬ নম্বর আসামি হলেন রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয়। তিনি পলাতক রয়েছেন। কিন্তু তার পরিবর্তে রবিউল সেজে চাঁদপুরের কচুয়ার সন্তান মো. আবু ইউসুফ লিমন গতবছরের ২০ অক্টোবর ঢাকার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
আসামি রবিউলের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া থানার আশুতিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম মতিউর রহমান। অন্যদিকে ইউসুফ রাজধানীর মিরপুর ২ নম্বর সেকশনে এক মেসে ভাড়া থাকতেন। ছোটখাট কাজ করে যা আয় করতেন, তা দিয়ে সিটি ক্লাবে কোচ সবুজের অধীনে ক্রিকেট খেলা শিখতেন।
সেখান থেকে আসামি রবিউলের সঙ্গে পরিচয় ঘটে ইউসুফের। দীর্ঘদিন ছেলের সন্ধান না পেয়ে ইউসুফের বাবা গত ১৪ জানুয়ারি কচুয়া থানায় জিডি করেন। এর কিছুদিন পর তিনি জানতে পারেন, তার ছেলে কাশিমপুর কারাগারে।
ইউসুফের বাবা নুরুজ্জামান বলেন, ‘এ খবর পেয়ে ছেলের সঙ্গে কারাগারে দেখা করি। তার কাছ থেকে জানতে পারি- রবিউল হত্যার হুমকি ও টাকার লোভ দেখিয়ে ইউসুফকে কোর্টে পাঠায়। ইউসুফ আদালতে নিজেকে রবিউল হিসেবে পরিচয় দেয়। এরপর আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়।’
তিনি বলেন, ‘ইউসুফকে এক মাসের মধ্যে জামিন করার কথা বলে কোর্টে নিয়েছিল রবিউল। এরপর আর জামিন মেলেনি ইউসুফের।’
ছেলের মুক্তির জন্য আইনজীবী শামীম সরদারের স্মরণাপন্ন হন নুরুজ্জামান। সব কিছু জানার পর ইউসুফের মুক্তির জন্য ঢাকার আদালতে আবেদন করেন ওই আইনজীবী। এ আবেদনে পুরো ঘটনা বর্ণনা করেন তিনি। আদালত গত ২ মার্চ বিষয়টি তদন্ত করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন। বিষয়টি তদন্ত করে ডিবি পুলিশ গত ২ মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। ওই প্রতিবেদনে ঘটনার সত্যতা মিলেছে।
এ অবস্থায় রবিউলের আইনজীবীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে পুলিশ। এ আবেদনের ওপর আগামী ২ জুন ঢাকার ১ নম্বর অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে আদেশের জন্য দিন ধার্য্য রয়েছে বলে ভুক্তভোগীর বাবা জানান।
ইউসুফের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামীম সরদার বলেন, ‘ইউসুফের বাবার কাছ থেকে বিস্তারিত জানার পর নিজেই অনুসন্ধান শুরু করি। ঘটনার সত্যতা পাওয়ার পর ইউসুফের মুক্তির জন্য আদালতে আবেদন জানাই। আদালত এখন কী আদেশ দেন, সে অপেক্ষায় আছি।’