বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও গণমাধ্যম


———-মুহম্মদ শফিকুর রহমান———

সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ। ১৬ জুলাই ১৯৭২ সাল। সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রথম বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করলেন, ‘সংবাদপত্রের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে’। বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণার পেছনে সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। কলকাতায় ছাত্ররাজনীতিতে থাকাকালে তৎকালীন আজাদ পত্রিকার সাংবাদিকদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। প্রায়ই তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর প্রেস বিজ্ঞপ্তি নিয়ে আজাদ অফিসে যেতেন। তারপর যখন আবুল মনসুর আহমদের সম্পাদনায় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী (বঙ্গবন্ধু তাকে লিডার বলে ডাকতেন) অর্থানুকুল্যে এবং বঙ্গবন্ধুর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ১৯৪৬ সালে কলকাতায় দৈনিক ‘ইত্তেহাদ’ প্রকাশিত হয় এবং বঙ্গবন্ধু ওই কাগজের পূর্বাঞ্চলীয় করেসপন্ডেন্ট ও সার্কুলেশনের দায়িত্ব পালন করতেন। এ জন্য তিনি মাসে ৩০০ টাকা বেতন পেতেন। যে টাকা তিনি তাঁর রাজনৈতিক কার্যক্রমে ব্যয় করতেন। ১৯৪৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি নিয়ে বঙ্গবন্ধু ঢাকায় ফিরে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলবিতে ভর্তি হন। সেইসঙ্গে রাষ্ট্রভাষা বাংলার আন্দোলনের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং এই কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে। শর্ত দেয় ১৫ টাকা জরিমানা এবং আর রাজনীতি করবেন না মুচলেকা দিলে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধুই, তিনি ফাইনও দেননি মুচলেকাও নয়। ফলে তার আর এলএলবি ডিগ্রি নেয়া হলো না। এর পর থেকে শুরু হয় কারাবরণ। আজ এই জেল তো কাল ওই জেল- এভাবে চলতে চলতে ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ গঠিত হলে নিজস্ব পত্রিকা প্রয়োজন মেটাতে প্রথমে সাপ্তাহিক ইত্তেফাক প্রকাশিত হয়, যা পরে দৈনিকে রূপান্তরিত হয়। সাপ্তাহিক ইত্তেফাক প্রকাশ করার সময় আওয়ামী লীগের সভাপতি মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হন। পরিচালনা পর্ষদে অপর চারজন ছিলেন (সিরিয়ালি) হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবুর রহমান, তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ও আওয়ামী লীগের ট্রেজারার ইয়ার মোহাম্মদ খান। এই তথ্যটি স্বাধীনতা-উত্তর ইত্তেফাক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর কাছে সংরক্ষিত ডকুমেন্টে দেখেছি। তখন ইত্তেফাকে কাজ করি। তবে পত্রিকাটি পরিচালনা ও সম্পাদনায় মূল দায়িত্ব পালন করতেন তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া। ১৯৫৩ সালে ইত্তেফাক সাপ্তাহিক থেকে দৈনিকে রূপান্তরিত হলে সম্পাদক হন তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া।

এই হলো এক দিক। আরেক দিক হলো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক। যেমন মানিক মিয়াকে মানিক ভাই, আবদুস সালামকে সালাম ভাই, কিংবা জহুর হোসেন চৌধুরীকে জহুর ভাই বলে ডাকতেন। তাঁরাও বঙ্গবন্ধুকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেন। ১৯৬৪ সালে পূর্ব বাংলায় বর্তমান বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়। দেখা গেল সকালেই মানিক মিয়া, আবদুস সালাম ও জহুর হোসেন চৌধুরী প্রেসক্লাবে এসে উপস্থিত হন। তখন ক্লাবের মাঝখানের ঘরে (লাল দালান) তিনখানা ইজি চেয়ার ছিল এবং তিন পথিকৃৎ সাংবাদিক তাতে বসলেন। একটু পরেই শেখ মুজিব (তখনো বঙ্গবন্ধু হননি) উপস্থিত হলেন এবং তাদের সঙ্গে চা খেতে খেতে কথা বললেন। এরপরই ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে ‘পূর্ববাংলা রুখিয়া দাঁড়াও’ ব্যানার নিয়ে আওয়ামী লীগের মিছিল বের হয়। এবং পরদিন ইত্তেফাক, অবজারভার, সংবাদ পত্রিকায় ‘পূর্ববাংলা রুখিয়া দাঁড়াও’ শিরোনাম দিয়ে অভিন্ন সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়। দাঙ্গা স্তিমিত হয়ে যায়। এসবই অগ্রজ সাংবাদিকদের কাছে শোনা।

মজার ব্যাপার হলো ফয়েজ আহমেদ, এবিএম মূসা ও এম আখতার মুকুলকে বঙ্গবন্ধু ‘আপদ’ ‘বিপদ’ ‘মুসিবত’ বলে ডাকতেন। তাঁরাও এতে গর্ববোধ করতেন। বঙ্গবন্ধু তো পাকিস্তানের ২৩ বছরের মধ্যে ১৩ বছর কারাগারে কাটিয়েছেন। ওই সময়ে ১৯৬৭ সালে তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দেয়া হয়, যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বলে পরিচিত। ওই সময় আদালতের নিউজ কাভার করার জন্য সাংবাদিকরাও কোর্টে যেতেন। বঙ্গবন্ধু সব সময় একটা চিরকুটে বিভিন্নজনের কাছে দিকনির্দেশনামূলক চিঠি লিখতেন এবং তা কাঠগড়ায় ওঠার মুহূর্তে নিচে ফেলে দিতেন। মরহুম আতাউস সামাদ কাছেই দাঁড়ানো থাকতেন এবং তা তুলে নিয়ে যথাস্থানে পৌঁছে দিতেন। কাজেই ‘সংবাদপত্রের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে’, এটি কথার কথা ছিল না। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের সঙ্গে তাঁর সুদীর্ঘ সুসম্পর্ক ও যোগাযোগ থাকার কারণেই তিনি ওই ঘোষণা দেন, যা তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন। তা ছাড়া, বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে অন্য অনেকের মতো ব্লাফ ছিল না। যা বিশ্বাস করতেন তা বলতেন, তা নিয়ে এগিয়ে যেতেন। এমনি এমনি তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হননি, প্রিয় জাতির পিতা হননি।

যে কারণে বঙ্গবন্ধুই বলতে পারেন-
১) ‘আমরা গণতন্ত্র চাই, উচ্ছৃঙ্খলতা চাই না, কারো বিরুদ্ধে ঘৃণা সৃষ্টি করতেও চাই না। অথচ কোন কাগজে লেখা হয়েছে, ‘মুসলমানকে রক্ষা করার জন্য সঙ্ঘবদ্ধ হও’। যে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আমার দেশের মানুষ রক্ত দিয়েছে, এখানে বসে কেউ যদি তার বীজ বপন করতে চান, তাহলে তা কি আপনারা সহ্য করবেন? আপনাদের যেকোনো কথা বলবার স্বাধীনতা আছে। আপনাদের একটা নীতিমালাও রয়েছে।

২) অনেক কাগজের শিরোনাম আমার কাছে আছে। এই কাগজগুলো ফরমান আলী খানের দয়ায় ঢাকায় বসে নয় মাস কাজ করেছে, কিন্তু তাদের আজও ছোঁয়া হয়নি। অনেক সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। অনেক সাংবাদিক মা-বোন-বউ ঘরে ফেলে অকুল পাথারে ভেসে বেড়িয়েছেন। ফরমান আলীর অনুগ্রহভাজনরা এখানে বসে আরামে খবরের কাগজ চালান এবং হানাদারদের সঙ্গে সহযোগিতা করেন। এরপর স্বাধীনতা পেয়ে তারা রাতারাতি বিপ্লবী হয়ে গেলেন। তারা এখন সরকারের বিরুদ্ধে লেখেন। তাদের সরকার ক্ষমা করতে পারে, জনগণ ক্ষমা করবে কি না সন্দেহ আছে।

৩) ‘ওভারসিজ পাকিস্তান নামে কোনো সংস্থা যদি এখান থেকে খবরের কাগজ প্রকাশ করে তাহলে আমাকে কী করতে হবে? আপনারা সামান্য কিছু লোকের স্বার্থ দেখবেন, না সাড়ে সাত কোটি লোকের স্বার্থ, যে ৩০ লক্ষ লোক রক্ত দিয়েছে তাদের স্বার্থ দেখবেন? বিপ্লবের পরে সংবাদপত্র যে স্বাধীনতা পেয়েছে তা এ দেশে আর কখনো ছিল না। এ জন্যই রাতারাতি খবরের কাগজ বের করেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ ছাপানো হয়, এক লাখ বামপন্থী হত্যা, বিমানবাহিনীর মধ্যে বিদ্রোহ ইত্যাদি। কিন্তু এসব কি লেখা উচিত? এবং এইসব কার স্বার্থে ছাপানো হয়’?

৪) ‘সাংবাদিকতারও এমনই একটা মূলনীতি আছে। আমরা জানি সাংবাদিকদের মধ্যে এমন কেউ কেউ আছে, যারা সামরিক চক্রের হীন কাজে সহায়তা করেছেন। তারাই ধরিয়ে দিয়েছেন সেই সাংবাদিকদের, যারা আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামকে সমর্থন করেছেন। এই তথাকথিত সাংবাদিকদের একজন কোন দৈনিক কাগজে সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ করতেন। তিনি আলবদরের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ছিলেন। এমন সাংবাদিকও আছেন যাদের এই দৃষ্টাতমূলক কাজের নজির আমাদের কাছে আছে। তারা হানাদার বাহিনীকে সংবাদ সরবরাহ করতেন। কিছু কিছু সাংবাদিক নিজেদের প্রগতিশীল বলে দাবি করতেন। কিন্তু তারা স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্যান্টনমেন্টে খবর সরবরাহ করেছেন। আপনারা কি বলবেন যে, তাদের গায়ে হাত দিলে গণতন্ত্র এবং সাংবাদিকদের স্বাধীনতার ওপর আঘাত করা হবে?’

৫) ‘এখানে সাম্প্রদায়িকতার স্থান নাই। রাজাকার, আলবদররা এখন কিছু কিছু বড় বড় প্রগতিশীল নেতার আশ্রয় নিয়ে প্রগতিশীল বনে গেছে। আসলে তারা খুনের মামলার আসামি। তাদের নামে হুলিয়া রয়েছে। এখন তাদের কেউ বলে আমি অমুক নেতার সেক্রেটারি কেউ বলে আমি সম্পাদক। এ ক্ষেত্রে আমার কর্তব্য কী আপনারাই বলুন?’

৬) ‘আপনারা সাংবাদিক। আপনাদের স্বার্থ রক্ষা করতে হলে আপনারা নিজেরাও আত্মসমালোচনা করুন। আপনারা শিক্ষিত, আপনারা লেখক, আপনারা ভালো মানুষ। আপনারাই বলুন কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ। আমরা নিশ্চয়ই আপনাদের সহযোগিতা করব।’

পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের জন্য প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাক্ট করে দিয়ে গেছেন, যার ভিত্তিতে সাংবাদিকরা ওয়েজবোর্ডসহ নানান সুবিধা পেয়ে চলেছেন। বিদেশি দূতাবাসে চাকরিও তখন থেকেই শুরু হয়।

বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ বা বাকশাল কর্মসূচি ঘোষণার পাশাপাশি দেশের প্রধান চারটি পত্রিকা রেখে বাকিগুলো বন্ধ করে দেন। ঠিক যেমন সকল রাজনৈতিক দল এমনকি নিজ দল আওয়ামী লীগকেও বাকশালের অন্তর্ভুক্ত করে অন্যান্য দলকে বাকশালে জয়েন করার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর এই পদক্ষেপ জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে দেশকে রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল করে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। বঙ্গবন্ধু সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন অর্থাৎ উৎপাদন ও বণ্টনে সমতা প্রতিষ্ঠা করা। অর্থাৎ শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু আলজিয়ার্সে জোটনিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান করেন। সেখানে বক্তৃতাকালেও বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বিশ্ব আজ দ্বিধাবিভক্ত শোষক আর শোষিত, আমি শোষিতের পক্ষে’। বঙ্গবন্ধু এ-ও বলেছেন ধারকরা সমাজতন্ত্র নয় আমার সমাজতন্ত্র হবে বাংলার আবহাওয়ায় লালিত। উৎপাদনের ক্ষেত্রে বহুমুখী গ্রাম-সমবায় গঠন করা হবে। কিছু লোক এই গ্রাম-সমবায়-এর বিরুদ্ধে এমন প্রপাগান্ডা করতে শুরু করে যে বঙ্গবন্ধু জমি নিয়ে যাবেন। অথচ গ্রাম-সমবায় কৃষকের জমি কৃষকেরই থাকবে। কেবল সমিতির মাধ্যমে উৎপাদন ও বণ্টন হবে।

একইভাবে চারটি পত্রিকা রেখে বাকিগুলো বন্ধ করার জন্য একটি বোর্ড গঠন করা হয়, যার নাম ‘নিউজ পেপার ম্যানেজমেন্ট বোর্ড’।

যেখানে মুখ্য ভূমিকা ছিল এনায়েত উল্লাহ খান মিন্টু, আব্দুল গনি হাজারী প্রমুখ। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী চারটি পত্রিকা রেখে বাকিগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। সাংবাদিকদের মধ্যে বাকশালে জয়েন করেন গিয়াস কামাল চৌধুরী, রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, ইকবাল সোবহান চৌধুরী। অর্থাৎ নির্মল সেনসহ কয়েকজন ছাড়া গোটা সাংবাদিক সমাজ ব্যানার নিয়ে বাকশালে জয়েন করে। মুখ্য ভূমিকা পালন করেন ওই তিন মহারথী অথচ এই মানুষগুলোই ৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করার পর চেহারা পাল্টে বাকশালের সমালোচক হন। যেমন নির্মল সেন লিখেছেন এনায়েত উল্লাহ খান মিন্টু কি করে লেখেন “now is the time to stand behind BKSAL”. আবার এই এনায়েত উল্লাহ খান মিন্টু বঙ্গবন্ধু হত্যার পর লিখলেন “Now is the time to stand for khondkr mostaq”. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও পিতার মতোই সাংবাদিকদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক লালন করে চলেছেন। তাঁর আমলে সাংবাদিকরা যত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন আর কোনো আমলে তা কেউ দেখেনি। রাজউকের প্লট, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং, বিদেশি দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টারের চাকরি, ওয়াসা, ফিল্ম সেন্সর বোর্ড, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি, তার ওপর একটার পর একটা ওয়েজ বোর্ড, দুস্থ সাংবাদিকদের সাহায্যার্থে কল্যাণ তহবিল, করোনা ভাতা- এমনি বিভিন্নভাবে সাংবাদিকদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে চলেছেন। একটা সময় ছিল যখন একটি সেলফোন কিনতে হতো লাখ টাকা দিয়ে। ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা সেই মোবাইল ফোন দেড় হাজার টাকায় নামিয়ে আনেন। এখন তো সাত-আট হাজার টাকায় স্মার্টফোনও পাওয়া যায় এবং এই স্মার্টফোনে ফেসবুক টুইটারের মাধ্যমে সরকারের সমালোচনা করা হয় মাত্রাহীনভাবে। দেশে কোনো প্রাইভেট টেলিভিশন ছিল না। শেখ হাসিনা প্রথমবার ক্ষমতায় এসেই ব্যক্তি খাতে একুশে টিভির লাইসেন্স দেন। সেই থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত প্রাইভেট টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে প্রায় চল্লিশটি। তন্মধ্যে ২৬টি নিয়মিত সম্প্রচারে আসছে, বাকিগুলো প্রসেজে আছে। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হলো শেখ হাসিনা এই করোনাকালে ভার্চ্যুয়াল কাজকর্ম করেন। কিন্তু টিভির মালিকরা টক শোর নামে শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকারের লাগামহীন সমালোচনা চলায়। ভদ্রসমাজে বলার মতো নয়- এমন কথাও হয়। কতগুলো অনলাইন টিভিও চলছে দেশে-বিদেশে, সেগুলোতে রীতিমতো বকাবকি করা হয়।

অথচ আজকে সকল মিডিয়ার উচিত শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। একবার ভাবুন তো মিডিয়ার এমন বিস্ফোরণ এবং বাংলাদেশ ডিজিটালাইজড না হলে এই করোনার ভয়াবহতার মধ্যে কি অবস্থা হতো? ডিজিটালাইজেশনের সুযোগে শেখ হাসিনার সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে চলেছে। সংক্রমণ ও মৃত্যু এতে মানুষের কোনো হাত নেই। বিশ্বব্যাপী বাঘা বাঘা রাষ্ট্র, নোবেল লরিয়েট বিজ্ঞানী, প্রতিষ্ঠিত রিসার্চ ল্যাবরেটরি- কেউই আজও ভাইরাসটি চিহ্নিত করতে পারেনি। প্রতিষেধক তো দ্বিতীয় পর্যায়ে। এখন শুধু আল্লাহর দরবারে হাত তুলে তওবা ইসতিগফার-এর মাধ্যমে এ থেকে মুক্তির জন্য দোয়া করা ছাড়া আর কি আছে?

অনাগত শিশুকিশোররা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে-

‘আজি হতে শতবর্ষ পরে
কে তুমি কবি লিখিছ কবিতা
পদ্মা পারে বসে
কে তুমি শিল্পী আঁকিছ ছবি
ঐ দেখো ভেসে উঠেছে মুখচ্ছবি
মহাকালের ইতিহাসের মহানায়কের
ঐ যে কাশবন ভেদ করে
ভেসে উঠছে অনিন্দসুন্দর মুখচ্ছবি
ধরিত্রীর আদরের কন্যা
মাতৃভূমির ভ্যানগার্ড শেখ হাসিনা
এইতো আমাদের বাংলাদেশ’।।

ঢাকা ১৯ নভেম্বর ২০২০

-লেখক : এমপি। সদস্য- মুজিববর্ষ জাতীয় কমিটি। সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় প্রেসক্লাব।
ই-মেইল: balisshafiq@gmail.com

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)