সুজন পোদ্দার :
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত দুই সপ্তাহব্যাপী কঠোর লকডাউনে কচুয়া উপজেলার মানুষের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে একযোগে মাঠে নেমেছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রশাসনের কঠোর অবস্থান ও সরকারের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা সত্ত্বেও বিধি-নিষেধের মধ্যেও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। ঘরে ঘরে করোনার উপসর্গ জ¦র সর্দি-কাশি, গলাব্যাথা। কিছুতেই লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না।
সপ্তাহে ৩ দিন (শনি, সোম ও বুধবার) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা নমুনা সংগ্রহ করা হয়। গত শনিবার কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে র্যাপিড এন্টিজেন টেস্টে ১৮জনের মধ্যে ৯জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয় হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়। আর করোনা উপসর্গে শুক্র ও শনিবার ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে মৃতদের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়।
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে চলমান কঠোর লকডাউনে কচুয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা কুলসুমা মনির নেতৃত্বে বিশেষ সচেতনতামূলক অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে গত ৩ দিনে ২০ মামলায় ১১ হাজার ৮শ’ টাকা জরিমানা করা হয়।
এত কিছুর মধ্যেও সংক্রমণের আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধিতে জনমনে নানা শঙ্কা ক্রমশ দানা বাঁধছে। করোনার এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও প্রত্যন্ত এলাকায় জনসচেতনতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে নূন্যতম মাস্ক পর্যন্ত ব্যবহার করছেন না অধিকাংশ মানুষ।
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি বিধি-নিষেধ বলবৎ থাকলেওগ্রাম অঞ্চলে সন্ধ্যার পর চা দোকানগুলোতেও হুমড়ি খেয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। চায়ের দোকানগুলো সামনে থেকে দরজা বন্ধ রেখে ভেতরে চলছে নিয়মিত আড্ডা।
এলাকাবাসী ও প্রত্যন্ত এলাকার গ্রাম্য ডাক্তারের মাধ্যমে জানা যায়, তাদের অধিকাংশ রোগীই জ্বর সর্দি-কাশি ও মাথা ব্যথায় ভুগছেন। অনেকে করোনার ভয়ে নমুনা পরীক্ষা না করে বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারের ফার্মেসিগুলোতে প্যারাসিটামল প্লাস গ্রুপের ওষুধ নাপা এক্সটেন্ড চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। আবার অনেক দোকানে নাপা এক্সটেন্ড উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় অশুভ আশঙ্কায় রীতিমতো আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। বর্তমানে উপজেলার প্রায় অধিকাংশ বাড়িতে করোনা রোগী থাকলেও নমুনা পরীক্ষা না করায় তারা থেকে যাচ্ছেন অগোচরে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.সালাহ উদ্দিন মাহমুদ জানান, তাদের চিকিৎসকরা জীবন বাজি রেখে জনসাধারণকে নিরলস সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে তিনি সবাইকে স্বাস্থবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে মুখে মাস্ক ব্যবহার, সাবান, স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদীপায়ন দাস শুভ জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কচুয়া উপজেলায় কঠোরভাবে পালন করা হচ্ছে লকডাউন। কেউ যেন অপ্রয়োজনে বাইরে বের না হয় এবং ঘোরাফেরা না করে সেটি নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। লকডাউন বাস্তবায়নে জনপ্রতিনিধি, পুলিশ প্রশাসন, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সবাইকে সংশ্লিষ্ট আইন ও সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেছেন তিনি।
উপজেলা চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) সুলতানা খানম সবাইকে ঘরে থাকতে বলেছেন, প্রয়োজন ছাড়া কোনোভাবে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে ও মাস্ক ব্যবহার করতে এবং সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
সর্বশেষ করোনার এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কঠোর বিধি-নিষেধের মধ্যেও মফস্বল এলাকায় সচেতনতা বাড়েনি এতটুকু। উপজেলাসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় জনসাধারণের সামাজিক দ‚রত্ব বেষ্টনী ভেঙে মাস্ক বিহীন অবাধে বিচরণ এর জন্য বহুলাংশে দায়ী বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এমন অবস্থা ঠেকাতে না পারলে করোনা গোটা উপজেলায় আরো ভয়ানক রূপ নিতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।