হাসান মাহমুদ :
সোমবার পবিত্র ঈদুল আযহা। যথাযোগ্য মর্যাদা, বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ত্যাগের মহিমায় কোরবানীর ঈদ পালিত হবে। ঈদের দিন সারাদেশের সকল মুসলমান ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করবেন এবং নামাজ শেষে মহান রবের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানী দিবেন।
আল্লাহর রাহে নিজের জানমাল ও প্রিয়তম জিনিস সন্তুষ্ট চিত্তে বিলিয়ে দেয়ার এক সুমহান শিক্ষা নিয়ে প্রতিবছর ঈদুল আযহা আমাদের মাঝে ফিরে আসে। ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী কোরবানী করা ওয়াজিব। পবিত্র কোরআনের সূরা কাউসারে বলা হয়েছে, ‘অতএব তোমার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড় ও কোরবানী কর।’
কোরবানীর ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন। সৃষ্টির প্রথম মানব হযরত আদম (আ.) এর দু’পুত্র হাবিল ও কাবিল সর্বপ্রথম কোরবানী করেন। এ প্রসঙ্গে সূরা মায়েদায় ২৭ নম্বর আয়াতে উল্লেখ রয়েছে, ‘আপনি তাদেরকে আদমের দুই পুত্রের বাস্তব অবস্থা পড়ে শোনান। যখন তারা উভয়েই কিছু কোরবানী করেছিল তখন তাদের একজনের কোরবানী কবুল হয়েছিল, অপরজনেরটি হয়নি।’
কোরবানী মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর সুন্নাহ। আল্লাহ তার কুদরতী পরিকল্পনায় ইব্রাহীম (আ.)কে তাঁর শেষ বয়সে প্রিয়তম পুত্র ইসমাইল (আঃ)কে কোরবানী করার নির্দেশ দেন। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ৮৫ বছর বয়সে হযরত ইসমাইল (আঃ) কে পান। এ অবস্থায় ছেলেকে কোরবানী দেয়া এক কঠিন পরীক্ষা। কিন্তু তিনি তাঁর মহান রবের হুকুমে নত হলেন।
নিষ্পাপ পুত্র ইসমাইল (আ.)ও নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন। একপর্যায়ে পিতা তাঁর পুত্রকে জবাই করতে যখন উদ্যত ঠিক তখনই মহান আল্লাহর কাছে ঈমানের কঠিন পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হলেন। চোখ বাঁধা অবস্থায় তিনি জবাই করেন। চোখ খুলে দেখেন তাঁর প্রিয় পুত্র অক্ষত রয়েছে আর কোরবানী হয়েছে এক চতুস্পদী দুম্বা।
আল কোরআনে এই মহিমান্বিত ত্যাগের ঘটনার বর্ণনায় বলা হয়েছে, ‘অতঃপর সে (ইসমাইল) যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হলো তখন ইব্রাহীম (আ.) তাকে বললেন, হে বৎস! আমি স্বপ্ন দেখেছি তোমাকে জবাই করছি। এখন তোমার অভিমত কি?
সে বললো, হে পিতা, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে তাই করুন। আল্লাহ চাইলে আমাকে ধৈর্য্যশীল পাবেন। যখন পিতা-পুত্র উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করলো এবং ইব্রাহীম (আ.) তাকে জবাই করার জন্য শায়িত করলেন তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইব্রাহীম তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে। আমি এভাবেই সৎকর্মীদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। নিশ্চয়ই এটা সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তার পরিবর্তে জবাই করার জন্য দিলাম এক মহান জন্তু।’
হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর অনুপম ত্যাগের অনুসরণে হাজার হাজার বছর ধরে বিশ্ব মুসলমানরা কোরবানী করে আসছে। তাঁরই নিদর্শন স্বরূপ প্রতিবছর হজ্ব পালনকারীরা কোরবানী দিয়ে থাকেন।
শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, কোরবানীর পূর্বশর্ত আল্লাহ ভীতি ও একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আকাঙ্ক্ষা। হাদীস শরীফে আছে, ‘মানুষের আমলের প্রতিফল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’
সূরা হজ্বে বলা হয়েছে, ‘এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না কিন্তু তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে যায়।’ প্রত্যেক আর্থিক সামর্থ্যবান মুসলমানের ওপর কোরবানী করা ওয়াজিব। রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানী দিল না, সে যেন আমার ঈদগাহে না আসে।’ (মুসনাদে আহমদ)
জিলহজ্ব মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখের যে কোন একদিন কোরবানী করা যায়। গরু, মহিষ, উট, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা এ শ্রেণীর প্রাণী দ্বারা কোরবানী করা যায়। কোরবানীকৃত পশুর তিনভাগের একভাগ গরীব-মিসকিন, একভাগ আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হয়। পুরোটাও বিলিয়ে দেয়া যায়।
এদিকে ৯ জিলহজ্ব ফযর নামাযের পর থেকে ১৩ জিলহজ্ব আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরয নামাযের পর তাকবীরে তালবিয়া পাঠ করা ওয়াজিব। তালবিয়াহ হলো, ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।’