ফয়েজ আহমেদ :
শাহরাস্তিতে শ্বশুরের ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে মারা যাওয়া যুবকের মৃত্যু নিয়ে পাল্টাপাল্টি মামলা করেছে উভয় পরিবার। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত অপমৃত্যু, আত্মহত্যার প্ররোচনা ও হত্যার অভিযোগে ৩টি মামলা হয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার টামটা দক্ষিন ইউনিয়নের আজাগরা কবিরাজ বাড়ির সাবের আহমেদের পুত্র ফাহাদ হোসেন (২২) গত ২৬ আগস্ট রাতে শ্বশুরের ঘরে (নিজ বাড়িতে পার্শবর্তী ঘর শ্বশুর বাড়ি) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
জানা যায়, ওই বাড়ির নজরুল ইসলামের কন্যা নাজনিন সুলতানা নূপুর’র (১৮) সাথে প্রেম সংগঠিত কারনে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে একই বাড়ির সাবের আহমেদের পুত্র ফাহাদ হোসেন। বিয়ের পর সাত মাসের অন্তঃস্বত্বা স্ত্রী নূপুরকে নিয়ে নিজ বাড়িতে আসে ফাহাদ।
তার আগে ফাহাদের পরিবারকে মামলা করে হয়রানি করে শ্বাশুড়ি নাছিমা। বর্তমানে ফাহাদ-নূপুরের সংসারে ফাইজা নামে ১১ মাসের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। দুই পরিবারের অমতে ফাহাদ-নূপুরের বিয়েতে কোনপক্ষই সন্তুষ্ট ছিল না।
বিয়ের মাধ্যমে আত্মীয়তার বন্ধন সুদৃঢ় হবার কথা থাকলেও তাদের উভয় পরিবারের মধ্যে দিনদিন সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। নূপুর তার বাবার ঘরে বেড়াতে গেলে ফাহাদকে সেখানে যেতে দেয়া হতোনা মর্মে জানিয়েছে বাড়ির লোকজন। স্ত্রী ও শিশু কন্যাকে না দেখতে পেয়ে হতাশায় ভুগতো ফাহাদ।
ঘটনার পর ফাহাদের পিতা সাবের আহমেদ থানায় গিয়ে তার পুত্র আত্মহত্যা করেছে মর্মে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসার আগেই উভয় পরিবার পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিতে থাকে। ফাহাদের মৃত্যুকে পারিবারিক শত্রুতা উদ্ধারের হাতিয়ার হিসেবে নিয়ে পরস্পর কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি শুরু করে।
ঘটনার পর ফাহাদের পরিবারের পক্ষ হতে অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হলেও ৩ দিন না যেতেই গত ১ সেপ্টেম্বর সকালে ফাহাদের পরিবারের পক্ষ হতে তাদের পুত্রকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে দাবী করে তার স্ত্রী নূপুর, শ্বাশুড়ি বিউটি ও শ্বশুর নজরুল ইসলামকে দায়ী করে তাদের বিচার চেয়ে ওয়ারুক বাজারে একটি মানববন্ধন করা হয়।
একই দিন ফাহাদের পিতা, মাতা ও বোনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগ এনে বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও আমলী আদালত শাহরাস্তি, চাঁদপুর বরাবর একটি মামলা দায়ের করে স্ত্রী নাজনীন সুলতানা নূপুর।
পরদিন একই আদালতে ভিকটিমের মা বাদী হয়ে তার পুত্রবধুসহ ওই পরিবারের ৪ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার লোকজন জানান, ফাহাদের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উভয় পরিবার শত্রুতা উদ্ধারে পরস্পরকে মামলা দিয়ে ঘায়েল করছে।
শাহরাস্তি থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহ্ আলম জানান, প্রাথমিকভাবে বিষয়টি আত্মহত্যা বলে প্রতীয়মান হয়। ভিকটিমের বাবা থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। এ ঘটনায় উভয় পক্ষ আদালতে পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করেছে।