শরীফুল ইসলাম :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষাকে পুঁজি করে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। জাতির পিতার আদর্শ ও স্বপ্নে দেশ গড়ে তোলাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। বৃহস্পতিবার সকালে গণভবনে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা মোবাইল আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরাসরি উপকারভোগীদের নিকট প্রেরণ কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এই অনুষ্ঠানে চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষ থেকে ভিডিওকনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিল চাঁদপুর জেলা। এখানে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. নুরুল আমিন রুহুল, জেলা প্রশাসক (ডিসি) অঞ্জনা খান মজলিস, পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহবুবুর রহমান পিপিএম (বার), চাঁদপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ ওচমান গনি পাটওয়ারী, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, চাঁদপুর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রজত শুভ্র সরকার, জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা, মতলব দক্ষিণ উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. রহুল আমিনসহ সরকারি দপ্তরের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসহায় ও দুঃস্থ মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর মতো কঠিন কাজ বাস্তবায়নে নিজের জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য পরিত্যাগ করে কাজ করে গেছেন। মৃত্যুকে সামনে দেখেও তিনি লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি। জাতির পিতার থেকে পাওয়া সে শিক্ষাকে পুঁজি করেই অসহায় মানুষের জন্য কাজ করছি।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, জাতির পিতা যখন সমগ্র বাংলাদেশকে আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার যখন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, তখন তাকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। পরবর্তী সময়ে আমি মানুষের সমর্থন নিয়ে দেশে ফিরে আসি। বাবার মতো দুস্থ মানুষের কষ্ট দেখতে সারা বাংলাদেশ ঘুরে বেড়িয়েছি। মাইলের পর মাইল হেঁটে তাদের কষ্ট দেখেছি। তখন আমরা দলের পক্ষ থেকে মানুষের পাশে থেকেছি। ’৯৬ সালে সরকার গঠনের পর মুক্তিযোদ্ধা, বৃদ্ধ ও স্বামী পরিত্যক্তা মানুষদের সহায়তায় কাজ শুরু করি। পরবর্তী সময়ে প্রতিবন্ধীসহ বিভিন্ন পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করেছি। পরবর্তী সময়ে গৃহহীন মানুষকে ঘর তৈরি করে দেয়ার কাজ করি আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে। বস্তিবাসীদের উন্নয়নেও আমরা কাজ করেছি।
আওয়ামী লীগ ও তিনি মানুষের সেবক হিসেবে কাজ করে যেতে চান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে কেউ ঘরছাড়া থাকবে না এবং কারো ঘর অন্ধকার থাকবে না। সবার ঘরে বিদ্যুতের আলো থাকবে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী জানান, মুজিববর্ষে দেশে এক কোটি গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। তবে এক কোটির বেশি গাছ লাগানো হচ্ছে বলে জানান তিনি। শুধু সরকারি উদ্যোগ নয়, অসহায় ও গৃহহীনদের সহায়তার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান সরকার প্রধান।
বক্তৃতা শেষে প্রধানমন্ত্রী মোবাইলের মাধ্যমে ভাতাভোগীদের কাছে টাকা পৌঁছে দেয়ার প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। পাশাপাশি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হওয়া বিভিন্ন জেলার ভাতাভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। চাঁদপুর প্রান্ত থেকে ভিডিওনফারেন্সের মাধ্যমে দু’জন ভাতাভোগীর সাথে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে চাঁদপুর জেলার পক্ষে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) অঞ্জনা খান মজলিস।
জেলা প্রশাসক বক্তব্যে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিগত ৩ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক হিসেবে ইলিশের বাড়ি খ্যাত চাঁদপুর জেলায় যোগদান করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চাঁদপুর জেলায় আমাকে কাজ করার সুযোগ দানের জন্য আপনার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন ও দোয়া কামনা করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন ভাতাভোগীর সংখ্যা মোট ১ লাখ ৯৫ হজার ২২জন। এর মধ্যে বয়স্ক ভাতাভোগী ১ লাখ ১০ হাজার ২৯৬জন।
বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতাভোগীর সংখ্যা ৪৪ হাজার ৩৭৭জন। অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা ৩০ হাজার ১২০জন। বেদে ভাতাভোগীর সংখ্যা ৮২৩জন। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর ভাতা ৮৬৩জন। হিজড়া জনগোষ্ঠীর ভাতা ২৪জন। প্রতিবন্ধীর শিক্ষা উপ-বৃত্তি ১ হাজার ৪শ’ ৪২জন। বেদে শিক্ষা উপবৃত্তি ২৭৫জন। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উপবৃত্তি ৫৩৪জন। হিজড়া শিক্ষা উপবৃত্তি ১ হাজার ৪৪২জন এবং ক্যান্সার ও বিভিন্ন দূরারোগ্য রোগীদের আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছে ৩৮০জন। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে এ সকল ভাতার মোট আর্থিক পরিমাণ ১শ’ ২৪ কোটি ৮ লাখ ৮২ হাজার ১শ’ টাকা।
জেলা প্রশাসক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার সানুগ্রহ নির্দেশনা মোতাবেক ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে সারাদেশে ১১২টি উপজেলাকে শতভাগ বয়স্ক ও বিধবা ভাতার আওতায় আনা হচ্ছে। তন্মধ্যে চাঁদপুর জেলার ৬টি উপজেলা (হাইমচর, হাজীগঞ্জ, কচুয়া, শাহরাস্তি, মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ) অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় চাঁদপুরবাসীর পক্ষ থেকে আপনাকে অসংখ্যা ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আজ ভিডিওকনফারেন্সের মাধ্যমে আপনি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন ভাতা মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস (নগদ ও বিকাশ) এর মাধ্যমে জি-২ পি পদ্ধতিতে ভাতাভোগীদের নিকট সরাসরি পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগের যে শুভ উদ্বোধন করলেন, তা একটি যুগান্তকারী প্রদক্ষেপ। এর ফলে বিভিন্ন ভাতাভোগীগণকে আর ব্যাংকে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না এবং ভাতা উত্তোলন করতে আর তাদের যাতায়াত খরচ হবে না। তারা তাদের বাড়ির নিকটবর্তী নগদ ও বিকাশের এজেন্টের কাছে গিয়ে খুব সহজেই টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। চাঁদপুর জেলার ১ লাখ ৯৫ হাজার ২২ জন এই ডিজিটাল পদ্ধতির সুবিধাপ্রাপ্ত হবেন।