হার্ডহিটার শামীম পাটোয়ারীর হাত ধরে বিশ্বকাপে চাঁদপুর

তালহা জুবায়ের/শরীফুল ইসলাম :
বাংলাদেশের জার্সি গায়ে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। জিম্বাবুয়ের মাটিতে ২৩ জুলাই অভিষেকের পরে মাঝখানে দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ। ৯ সেপ্টেম্বর নিউজিল্যান্ড সিরিজ চলাকালেই এলো সেই আরোধ্য ক্ষণ। নিজের সামর্থের জানান দিয়ে জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়ার্ডে। বলছি বাংলাদেশের নতুন সেনসেশন, প্রতিশ্রুতিশীল হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান চাঁদপুরের শামীর পাটোয়ারীর কথা।

শামীমের হাত ধরেরই ঘুচেছে চাঁদপুরের ক্রিকেটাঙ্গনের বন্ধ্যাত্ব। বিশ্বকাপ দূরে থাক, তার আগে যে কোন খেলোয়াড়ই নাম লিখাতে পারেনি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের নামের খাতায়। শামীমের সাফল্যে জারপরানই উচ্ছ্বসিত চাঁদপুরবাসী।
বৃহস্পতিবার দুপুরে টি-টুয়েন্টি বিশ^কাপের স্কোয়াডে শামীমের নাম ঘোষণার পর থেকেই আনন্দে উদ্বেলিত তার পরিবার, স্বজন, ক্রিয়াঙ্গন পাড়ার মানুষসহ গোটা চাঁদপুরবাসী।

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া গ্রামের বাবা আব্দুল হামিদ ও মা রীনা বেগমের ছেলে শামীম হোসেন পাটোয়ারী। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে শামীর সবার ছোট।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ধানুয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায় আনন্দের বন্যা বইছে শামীমদের বাড়িতে। পাড়াপ্রতিবেশী ও গ্রামের মানুষ উৎসবমূখর পরিবেশে শামীমের পরিবারের সদস্যদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করছেন। এই খুশির দিনে শামীমের প্রথম কোচ চাঁদপুর ক্লেমন একাডেমী প্রতিষ্ঠাত ও বিসিবির চাঁদপুর জেলা কোচ শামীম ফারুকীও উপস্থিত হয়ে আনন্দে সামিল হয়েছেন তাদের সাথে। শামীমের এমন অর্জনে গর্বিত তার এলাকার মানুষজন।

এক সময়ে শামীরে খেলার সাথী স্থানীয় কিশোর সুজন গাজী বলেন, শামীম ছোট বেলা থেকেই খুব ভালো খেলতো। আমরা তার খেলা দেখে মুগ্ধ হতাম। অনেক জায়গা থেকেই শামীমকে হায়ার করে নিয়ে গিয়ে খেলাতো। আমরা ছোট বেলা থেকেই বিশ্বাস করতাম শামীর খুব ভালো কিছু করবে। আজকে শামীম জাতীয় দলে জায়গা করে বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছে। আমরা তার জন্য অনেক গর্বিত।

আগের কিশোর মানিক বলেন, শামীম ভাইয়ের খেলা দেখতে আমরা মাঠে যেতাম। তিনি অনেক বড় বড় ছয় মারতেন, আমরা ছোটরা সেই বলগুলো কুড়িয়ে আনতাম। ভাইয়ের সাফল্যে আমরা সবাই অনেক আনন্দিত। আশাকরি ভাই বিশ্বকাপেও অনেক ভালো করবেন, দেশের জয়ে অবদান রাখবেন।

শামীমের বাবা মো. আবদুল হামিদ পাটওয়ারী বলেন, আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া। আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না কিযে আনন্দ লাগছে আমার। আমার ছেলে দেশের জন্য খেলবে, দেশের মানুষের জন্য খেলবে, এরচে খুশির আর কি হতে পারে। আমি সকলের কাছে দোয়া চাই শামীম যেন মূল একাদশে জায়গা করে নিতে পারে এবং বিশ^কাপে ভালো ফলাফল করতে পারে।

মা রীনা বেগম বলেন, শামীম নিচে আমাকে ফোন দিয়ে এই খুশির সংবাদ দিয়েছে। আমি যেন আসমানের চাঁদ হাতে পাইছি। আমি সব সময় নামাজ পড়ে আমার ছেলে জন্য দোয়া করি। আমার ছেলে যেন আরো অনেক দূরে যেতে পারে, দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনতে পারে। সকলে তার জন্য দোয়া করবেন।

শামীমের প্রথম কোচ শামীম ফারুকী বলেন, প্রথম দেখাতেই বুঝতে পেরেছিলাম ছেলেটা প্রতিভাবান। তারে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। আজ বাস্তবেও তা পূরণ হয়েছে। শামীমের হাত ধরে চাঁদপুরের কোন খেলোয়াড় প্রথম বারের মত জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়েছে। শুধু তাই নয়, বিশ্বকাপেও খেলার সুযোগ পাচ্ছে। আমি আশাকরি শামীম বিশ্বকাপেও সফল হবে।

তিনি বলেন, শামীম খুব ভালো হিট করতে পারে। কোন অবস্থাতেই সে ভয় পায় না। ডরভয়হীণ খেলাই শামীমের ট্রেডমার্ক। একই সাথে শামীমে শক্তির জায়গা হচ্ছে তার ফিল্ডিং। তাকে বাংলাদেশের জন্টিরোডস বললে একটুও বাড়িয়ে বলা হবে না। এতোটাই ভালো ফিল্ডার শামীম। তবে বল চয়েজের বিষয়ে আরেকটু কাজ করতে হবে। জাতীয় দলের কোচদের পরামর্শ মেনে খেলতে পারলে শামীম দীর্ঘ সময় বাংলাদেশ দলতে সার্ভিস দিতে পারবে বলে আশা করেন তিনি।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন