অনৈতিহাসিক— শেখ হাসিনা : জন্মদিনের শুভেচ্ছা


মুহম্মদ শফিকুর রহমান :
দুর্যোগে দুঃসময়ে জাতি যখন ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছিল তখনো একজন মানুষ ইস্পাত-কঠিন দৃঢ় প্রত্যয় দিয়ে দাঁড়িয়ে যান। জাতিকে পথ দেখান। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা বা বেঁচে থাকা দুই সন্তানের একজন। আসছে ২৮ সেপ্টেম্বর তার ৭৪ তম জন্মদিন। অর্থাৎ ৭৩ পার করে ২৮ সেপ্টেম্বর ৭৪ বছরে পা রাখবেন। প্রার্থনা করি তিনি দীর্ঘজীবী হোন সুস্থ শরীরে জাতির সেবা করুন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের ক্ষমা করবেন আমরা নিজেদের স্বার্থে আপনার সেবা আশা করি। ভোগ করে বিনিময় কাজের স্বীকৃতিটুক দিতেও কার্পন্য করি। এটি আমাদের জাতিগত স্বভাব কিনা জানিনা তবে এই দুঃখজনক আচরণটি আমাদের বাঙালি সমাজে আছে।

শেখ হাসিনা ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পাঁচ বছর, ২০০৯ থেকে ২০২০ টানা তৃতীয়বারে ১২ বছর মোট ১৭ বছর প্রধানমন্ত্রী তথা রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রধান হিসেবে নজিরবিহীন সাফল্যের সাথে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন এবং বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরেও ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে জিয়া-এরশাদ-খালেদা স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলনে জনগণকে সাথে নিয়ে নেতৃত্ব দিয়ে মিলিটারি স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। জেনারেল মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনকে যথাসময়ে নির্বাচন দিতে বাধ্য করেছেন।

বাংলাদেশ আজ শক্ত ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এটা ঠিক কোভিড-১৯ বা করোনার কারণে রাষ্ট্রের শক্ত ভিত নড়বড়ে না হলেও কাজের গতি স্লথ হয়েছে। এটি বৈশ্বিক সংকট। এক্ষেত্রে কোন দেশেরই করার কিছু নেই। এ এমন এক মানব বিধ্বংসী দানব যে বড় বড় মিলিটারি পাওয়ার বা উন্নত অর্থনীতির দেশও অসহায়। অসহায় বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীগন। মানুষকে কেবল আইসোলেশনে কোয়ারেন্টাইন করে মাক্স গ্লাভস ব্যবহার করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হচ্ছে। এরই মধ্যে বহু মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে কোভিড, এখনো কেড়ে নিচ্ছে। একদিকে জীবন কেড়ে নিচ্ছে অপরদিকে মানুষ কর্ম হারিয়ে বা রোজি রোজগার হারিয়ে দিশেহারা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ-সাহায্য প্রেরন করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছেন। আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে সামনে শীত আসছে। প্রধানমন্ত্রী সকলকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন শীতে দ্বিতীয় দফা করোনার প্রাদুর্ভাব হতে পারে। এখন পর্যন্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ বলেছেন বাইরে বা জনসমাগমে সামাজিক দূরত্ব খুবই জরুরী সেইসঙ্গে চোখ নাক মুখ এই তিনটি অর্গান মাক্স চশমা দিয়ে ঢেকে বাইরে বেরোতে হবে।

তবে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো গত সোমবার আমি আমার নির্বাচনী এলাকা ফরিদগঞ্জে গিয়েছিলাম উপজেলা যুবলীগের বর্ধিত সভায় অ্যাটেন্ড করতে। দেখলাম সামাজিক দূরত্ব দূরের কথা মঞ্চে অডিয়েন্সে গায়ে গা লাগানো চেয়ার দেয়া হয়েছে এবং তাতে শতকরা ৯০ জনের বেশি মুখে মাক্স নেই। আমি বলেছি অন্তত সবাই মাক্সটি ব্যবহার করবেন হ্যান্ডশেক করা কোলাকুলি করা থেকে বিরত থাকবেন। আমাদের অবশ্যই এরমধ্যেই চলতে হবে করোনার প্রতিষেধক প্রতিরোধক আবিষ্কার হবার জন্য। তারপরও মানুষ লড়াই করছে বিভিন্নভাবে। আমার নির্বাচনী এলাকার সদরে বসবাসকারী পরেশ পাল বিশাল এক হাসপাতাল চালু করেছেন। ঢাকার বড় বড় হাসপাতালের মতো এতে আধুনিক মেশিনারিসহ সব ব্যবস্থা রয়েছে।

পিতা বঙ্গবন্ধুর মতোই শেখ হাসিনার জন্ম এক অজ পাড়া গাঁয়। দক্ষিণ বাংলার ছায়া সুনিবিড় গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায় বনেদি শেখ বাড়িতে। নদী খাল বিল চরাচর আবহমান বাংলার যে গ্রামীণ ছবি আজও আমাদের স্মৃতিতে সাহিত্যে রয়েছে তারই অপরূপ চিত্র এই টুংগীপাড়া। একদিকে মধুমতি আরেকপাশে বাইগার নদী এই দুই নদীর সংযোগ খালের পাড়ে শেখ বাড়ি। এখানে আজও বঙ্গবন্ধু শুয়ে আছেন। পিতার মত শেখ হাসিনার শৈশব কেটেছে এই গ্রামীণ পরিবেশে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তারপর একদিন বঙ্গবন্ধু যেমন গোপালগঞ্জ সদর হয়ে কলকাতা যান উচ্চশিক্ষা গ্রহণে তেমনি শেখ হাসিনাও উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ঢাকায় এসে প্রথমে আজিমপুর গার্লস হাই স্কুল তারপর ইডেন গার্লস কলেজ (যা এখন বদরুন্নিসা আহমেদ কলেজ) ও পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন।

কিন্তু পিতার মতোই তিনিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ ডিগ্রিটি নিতে পারেননি। পিতা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জনের (১৯৪৭ সালে) পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এল এল বি তে ভর্তি হন কিন্তু অল্প দিনেই সরকারবিরোধী আন্দোলন করার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন। বলা হয়েছিল আর আন্দোলন করবেন না মচলেকা দিলে ১৫ টাকা ফাইন করে রাষ্ট্রিকেশন উইথড্র করা হবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জেলে গেছেন তবু মুচলেকা দেননি। একইভাবে শেখ হাসিনাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েশন করার পর ১৯৭৫ সালে এমএ ফাইনাল দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার কারণে আর পরীক্ষা দেয়া হয়নি। ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের অল্প ক’দিন আগে ছোট বোন শেখ রেহানা কে নিয়ে জার্মানি বেড়াতে যান। শেখ হাসিনার স্বামী প্রখ্যাত অনুবিজ্ঞানী ড. এম ওয়াজেদ আলী মিয়া তখন জার্মানিতে গবেষণারত ছিলেন।

১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পর ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু পরিবারের বন্ধু শ্রীমতি ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী গান্ধীর আমন্ত্রণে দিল্লিতে যান এবং তার আশ্রয় থাকেন দীর্ঘ ৬ বছর। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হবার পর ছেলেমেয়েকে শেখ রেহানার কাছে রেখে দেশে ফিরে আসেন এবং জনগণের সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক মুক্তির হাল ধরেন। তার এই ফিরে আসার পথে তৎকালীন সেনাশাসক মিলিটারি জিয়া নানানভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। শেখ হাসিনা জাতির পিতার কন্যা তাকে রুখবে এমন সাহস কার। ১৯৮১ সালের ১৭ মে প্রবল ঝড় বৃষ্টি মাথায় করে তখনকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তেজগাঁও নামলে অর্ধ কোটিরও বেশি মানুষ বিমানবন্দর থেকে মানিক মিয়া এভিনিউ হয়ে ধানমন্ডি পর্যন্ত চোখের জলে তাকে সংবর্ধনা জানায়।

১৫ আগস্ট-এর সেই রাতে খুনি মিলিটারি জিয়া মুস্তাক ফারুক-রশীদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সাথে হত্যা করে তার আমরন সহধর্মিনী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নিসা মুজিব, তিন পুত্র মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল ও তাদের নবপরিণীতা বধু আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্রীড়াবিদ সুলতানা কামাল রোজী জামাল এবং ছোট ছেলে শিশু রাসেল কেও হত্যা করে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে। এখানে আরো হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ছোট ভাই শেখ নাসের বঙ্গবন্ধুর মিলিটারি সেক্রেটারি কর্নেল জামিল। অপর বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে এবং মেধাবী ছাত্র ও যুব নেতা শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনিকে এবং আরেক বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি কৃষক নেতা মন্ত্রী আব্দুর রব সেবানিয়াবাত ও তার চার বছরের নাতি সুকান্ত বাবুসহ অনেককে হত্যা করে। স্বজন হারানোর বেদনার অশ্রু বঙ্গবন্ধুর রক্তের মতই বৃষ্টির জলে মিশে বাংলার মাটি পবিত্র করে দিয়েছিল। মানিক মিয়া এভিনিউ নজিরবিহীন বিশাল সমাবেশে বলেছিলেন-
“হত্যার বদলে হত্যার প্রতিশোধ আমি বিশ্বাস করিনা। বঙ্গবন্ধু বাংলার গরীব দুঃখী মানুষের আর্থ সামাজিক রাজনৈতিক মুক্তির জন্য জীবন দিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর সেই গরীব দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা কাইম করব এবং এটিই হবে আমার প্রতিশোধ”
মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে সরাসরি ৩২ নম্বরের নিজ বাড়িতে গেলেও তাকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। তিনি পরে ৩২ নম্বর সড়কে বসে মিলাদ ও দোয়া করেন।

এমনিভাবে স্বজন হারানোর বুক ভরা বেদনা বুকে চেপে রেখে শেখ হাসিনা পিতার মতোই মাথা উঁচু করে দাঁড়ালেন নির্ভয়ে। গত ৪০ বছর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীনতার নেতৃত্ব দানকারী দলটিকে দেশের এক নম্বর এবং অপ্রতিদ্বন্দ্বী দল হিসাবে গড়ে তোলেন। তিনটি মিলিটারি রেজিম ও একটি হাফ মিলিটারি ও স্বাধীনতা বিরোধী জামাত জিয়া-এরশাদ-খালেদা মইনুদ্দিন কে মোকাবিলা করে ২১ বছর পর পুনরায় আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রক্ষমতায় প্রতিষ্ঠা করেন। কেবল স্বৈরাচারের মুকাবেলা নয় সাথে সাথে বৈরী মিডিয়াকেও মোকাবেলা করতে হয়েছে। এখনো করতে হচ্ছে। বৈরী মিডিয়া এজন্যই বললাম কিছু কাগজে সব সময় খালেদা জিয়াকে উপরে তুলে শেখ হাসিনাকে নিচে দিতেন। তারা ভাবতেন এতে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব দুই নম্বরে চলে যাবে। খালেদা জিয়া হোটেলে বসে আন্দোলন পর্যবেক্ষণ করতেন। অথচ পরদিনের কিছু কাগজে দেখা যেত খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আন্দোলন চলছে।

এমনকি তাকে পিতার মতোই শারীরিকভাবে নিশ্চিহ্ন করার জন্য ২০ বার তার ওপর হামলা হয়। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবনে দুই দফা গুলি, রাসেল স্কয়ারে বৃষ্টির মত গুলী বোমা, বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলা করে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল, চট্টগ্রামেও একইভাবে গুলি চালিয়ে অনেক লোককে হত্যা করা হয়েছে, এছাড়া নাটোর, জামালপুরে গুলি, কোটালীপাড়ায় ৮৬ কেজি দুই মাইন পোতা হয়েছিল। এমনভাবে মাইন দুটি পাতা হয়েছিল যেখানে হেলিকপ্টার নামবে সেখানে একটি এবং আরেকটি হেলিপ্যাড থেকে গাড়ি করে যেখানে নামবেন অর্থাৎ গাড়ি থেকে যেখানে পা রেখে নামবেন সেখানে আরেকটি ৮৬ কেজি মাইন পোতা হয়েছিল। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অশেষ কৃপায় মাইন গুলো শেখ হাসিনা কোটালীপাড়া যাবার আগেই চিহ্নিত এবং অপসারিত করা হয়। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে যে ১৩ টি গ্রেনেড ছোড়া হয়েছিল বা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল তার মধ্যে যে গ্রেনেডটি শেখ হাসিনা যে ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করছিলেন সেই ট্রাকের নিচে পড়লেও বিস্ফোরিত হয়ে নি। এ যেনো পরওয়ার-দেগারে-আলম ফেরেশতা পাঠিয়ে গ্রেনেডটি অকেজো করে দিয়েছিলেন। এটি বিস্ফোরিত হলে ট্রাকসহ শেখ হাসিনা ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতেন। ঠিক একইভাবে কোটালীপাড়া মাইন বিস্ফোরিত হলে হেলিকপ্টারসহ উড়ে যেতেন। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড গুলো বিস্ফোরিত হয়েছিল সেগুলো পাকিস্তানি আর্জেস গ্রেনেড যা কোনো সিভিলিয়ানের হাতে থাকেনা।

এই গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা করা হয় জিয়া খালেদার পুত্র তারেক রহমানের লুটপাটের কেন্দ্র হাওয়া ভবনে। এইসব প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত মুফতি হান্নানের জবানবন্দি অনুযায়ী মাওলানা তাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি (তৎকালীন ছাত্রদলের সভাপতির ভাই) পাকিস্তান থেকে এনে সরবরাহ করেছিল। মিলিটারি জিয়া ছিলেন নিষ্ঠুর ঠান্ডা মাথার খুনি, কালো চশমা পড়তেন কার দিকে তাকাচ্ছেন বোঝা যেত না। খালেদা-তারেকও কম যাননা। খালেদা ওই গ্রেনেড হামলার সঠিক তদন্ত টিম পর্যন্ত করেননি। শেখ হাসিনা নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন এবং সেই গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়। এটি খালেদা জিয়ার মন্তব্য। কেমন নিষ্ঠুর মন্তব্য যে গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আইভি রহমানসহ ২৩ জন দলীয় নেতা-কর্মী নিহত হন অন দ্যা স্পট এবং প্রায় চারশত নেতাকর্মী গ্রেনেডের ইসপ্লিষ্টারে আহত হন।

ইসপ্লিষ্টারের যন্ত্রণা সয়ে সয়ে কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুর রাজ্জাক, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ, শ্রী সুরঞ্জিত সেন গুপ্তসহ অনেকেই ইন্তেকাল করেন। ওবায়দুল কাদের, জাহাঙ্গীর কবির নানক, বাহাউদ্দিন নাসিমসহ নেতা-নেত্রী আজও গ্রেনেডের যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন। বহু নারী নেত্রী রীতিমতো পঙ্গুত্বের জীবন-যাপন করছেন। মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনা তাদের দেখছেন। সেদিন শেখ হাসিনারও এক কানের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অবশ্য খালেদা জিয়া তখনকার প্রধানমন্ত্রী জজ মিয়া নাটক যেমন করেছেন তেমনি একজন বিচারপতিকে দিয়ে লোক দেখানো ওয়ান ম্যান ইনকোয়ারি কমিশন করেন।

ভদ্রলোক সম্ভবত খালেদা-তারেকের চেয়েও বড় বিএনপি বা নিজামী-মুজাহিদের চেয়েও বড় আলবদর ছিলেন, যে তিনি রিপোর্ট দিয়েছিলেন ভারত থেকে এসে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল।
এই গেল একদিক। আরেক দিক হলো শেখ হাসিনাকে যখন গ্রেফতার করা হলো এবং সংসদ ভবনের পাশে সাব-জেল করে রাখা হলো তখন একদল নেতার আবির্ভাব ঘটল যারা সংস্কারের নামে নেত্রীকেই রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তারা চেনা নেতা। সম্প্রতি গণভবনে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক শেষে লবিতে কেন্দ্রীয় নেতা খ ম জাহাঙ্গীর ও ডাঃ দীপু মনির মধ্যে এক রাউন্ড বসচা হয়ে গেল। দীপু মনি খ ম জাহাঙ্গীর কে বলেছিলেন আপনারাতো সংস্কারবাদী। খ ম জাহাঙ্গীর পাল্টা জবাব দিলেন এজন্যই আমরা সংস্কার চেয়েছিলাম।

শেখ হাসিনা এই সব প্রতিকূলতা মোকাবেলা করেই দল এবং রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। কোভিড-১৯ বা করোনার অদৃশ্য ছোবল সকল ক্ষেত্রে অগ্রযাত্রাকে স্লথ করলেও থামিয়ে দিতে পারেনি। ৭৩ বছর বয়সে এখনো তিনি যে পরিমাণ কাজ করেন অতন্দ্রপ্রহরীর মত সবদিকে তার দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকে এবং যেখানে যা দরকার সঙ্গে সঙ্গে তার ব্যবস্থা করেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো পিতার মতোই তিনি বাংলাদেশকে ভালোভাবে চেনেন।

এ লেখার ইতি টানতে চাই প্রিয় নেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিনে আরেকবার শুভেচ্ছা জানিয়ে। পরম করুনাময়ের কাছে প্রার্থনা করি নেত্রী সুস্থ থাকুন দীর্ঘায়ু হোন। বাংলাদেশের জন্যই তাকে আমাদের প্রয়োজন।

ঢাকা – ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০
লেখক : এমপি।
সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় প্রেসক্লাব।
ইমেইল – balisshafiq@gmail.com

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)