করোনাকালকে কাজে লাগিয়ে চাঁদপুরের দুই বোন এখন বিসিএস ক্যাডার

শরীফুল ইসলাম :
বিসিএসে সাফল্য পেতে নানা প্রতিঘাত বাধা-বিপত্তি সহ্য করতে হয়। দিন, সপ্তাহ, মাস এমনকি বছরের পর বছর পরিশ্রম করতে হয়। এরপরই আসে সাফল্য। আর সেই চেষ্টা-পরিশ্রম বৃথা যায়নি একই মায়ের দুই কন্যা সন্তান গুলে জান্নাত সুমি ও জান্নাতুন নাঈম খুশবুর। এবার ৪১তম বিসিএস-এ একসাথে দুই বোন জয় করেছেন বিসিএস পরীক্ষাকে।

তারা দুই বোন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার মকিমাবাদ এলাকার বাসিন্দা। তাদের বাবা মো. এয়াকুব মিয়া বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। মা রুপিয়া বেগম গৃহিনী। এর মধ্যে গুলে জান্নাত সুমি শিক্ষা ক্যাডারে, তার ছোট বোন জান্নাতুন নাঈম খুশবু কৃষি ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন।

গুলে জান্নাত সুমি ২০০৭ সালে হাজীগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ২০০৯ সালে হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১০-১১ সেশনে রাজনীতি বিজ্ঞানে স্নাতক ও একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেন।

অনুভূতি প্রকাশ করে গুলে জান্নাত সুমি বলেন, আমার বড় বোন জাহানারা ফেরদৌসী সুইটি অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও চাকরি করতো। সবার থেকে আমি একটু রাগি। সবার মতামতের বাইরে গিয়েই দূরে গিয়ে ভর্তি হই। তবে আমার বাবা আমাকে অনেক উৎসাহ দিতেন। এছাড়া আমার বড় বোন, দুলাভাইও আমাকে সাপোর্ট করেন। আমার ছোট বোন আমার পড়াশোনা দেখে উৎসাহ পায়। সেও আমার মত হতে চেষ্টা করে।

সুমি বলেন, ২০১৬ সালে প্রথম ৩৮তম বিসিএস দিয়ে আমার বিসিএস যাত্রা শুরু হয়। ৩৮তম বিসিএসে আশানুরূপ ফল না পেয়ে স্বপ্ন পূরনের জন্য পুনরায় নতুন উদ্যোমে বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি শুরু করি। মূলত আমরা করনোনাকালীন পুরো সময়টা কাজে লাগিয়েছি। দুইবোন একাসাথে পড়াশোনা করেছি। যাতে একজনের ভুল, আরেকজন ধরিয়ে দিতে পারে। পুরো সময়ে ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে দুই বোন বিয়েও করিনি। আমাদের দুই বোনের মধ্যে হতাশা ছিল কিন্তু কেউ কাউকে বুঝতে দেইনি। দুইজনেই খুব টেনশন ছিলাম, একজনের বিসিএস হলে আরেকজনের হবে কিনা। সব শেষে আমরা দুইজন একসাথে সাফল্য অর্জন করেছি। আমি যেহুতু শিক্ষা ক্যাডার, আমার শিক্ষা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে। আমার প্রত্যাশা সুযোগ এবং যোগ্যতা থাকলে সবারই চেষ্টা করা উচিত। তবে বিসিসি শুধু জীবন নয়। জীবনের সুখে থাকাটাই বড় বিষয়।

গুলে জান্নাত সুমির ছোট বোন জান্নাতুন নাঈম খুশবু ২০১১ সালে হাজীগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫, ২০১৩ সালে হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচসএসসি, ২০১৪-১৫ সেশনে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে।

জান্নাতুন নাঈম খুশবু বলেন, দীর্ঘ সময়ের এই পথ চলায় পরিবার ও সহকর্মীদের সাপোর্ট পেয়েছি। আমি আর আমার বোন দুজনই টার্গেট রেখে পড়াশোনা করেছি। আমরা খুব শৃঙ্খলা এবং সিডিউল মেনে পড়াশোনা করতাম। বেশি রাত জাগতাম না। আবার ভোরে ফজরের নামাজ পড়ে পড়া শুরু করতাম। দুইজনেই একসাথে ছিলাম।

খুশবু আরও বলেন, ২০১৯ সালে ৪১তম বিসিএস এর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলে তখন আমি সদ্য গ্রাজুয়েট। অনেক কিছু না বুজেই বিসিএসএ আবেদন করি। ২০২০ সালে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হবার কথা থাকলেও করোনা মহামারির জন্য তা পিছিয়ে যায়। আর সেই সুযোগটাই আমরা নিয়েছি। পুরো সময়টা পড়াশোনার মধ্যে পার করেছি। আমাদের বড় বোন, আমাদের টেনশন দেখে বলতো, আমাদের দায়িত্ব নিবে। আমরা যাতে কোন চাপ না নেই।আল্লাহর রহমতে দুইবোন প্রিলি-রিটেন পাস করি।

শেয়ার করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)