করোনায় মধ্যবিত্তের চাপা কষ্ট

সুজন পোদ্দার :
করোনার সংক্রামণ প্রতিরোধে সকল মার্কেটসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। চলছে সাধারণ ছুটি। এই ছুটির মধ্যে গরীব, অসহায়-দুস্থদের মাঝে সরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।

কিন্তু মধ্যবিত্ত ও সীমিত আয়ের লোকদের কোন সহায়তা করা হচ্ছেনা। তাছাড়া এই শ্রেণির লোকজন কারো কাছে অভাব অনটনের কথাও মুখ ফুটে বলতে পারছেনা। অন্যদিকে অভাব অনটনের তাড়নায় ঋণের বোঝা বাড়ছে। এক পর্যায়ে তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এতে করে মধ্যবিত্ত ও সীমিত আয়ের লোকজন না পারছে অভাব অনটনের কথা বলতে, না পারছে কোন সহায়তা নিতে। যার ফলে ছুটির দিন যত গড়াচ্ছে মধ্যবিত্তদের চাপা কষ্ট ও কান্না তত বাড়ছে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সে কান্না ক্রমশ বাড়ছে।

প্রসঙ্গত, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে সারাবিশ্বে প্রায় ৮ লাখের অধিক আক্রান্ত হয়েছে, প্রাণ হারিয়েছে ৪৪ হাজার। এর মধ্যে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৫৬জন আক্রান্ত হয়েছে এবং ৬জন মৃত্যুবরণ করেছে। যার ফলে সারা দেশে গত ২৬ মার্চ থেকে ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে তা বাড়িয়ে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত প্রসারিত করা হয়েছে। এছাড়া সকল মার্কেট ও সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। যে কারণে দেশের প্রায় ৯০-৯৫ শতাংশ জনগণ বেকার হয়ে পড়েছে। এর ফলে গরীব, অসহায় দুস্থদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী বিরতণের ব্যবস্থা করা হয়। প্রথম দিকে সরকারীভাবে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে পরবর্তীতে ব্যক্তিগত ভাবে ও তা দেখা যায়।

মার্কেট সহ সব প্রতিষ্ঠান যখন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে তখন সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে মধ্যবিত্ত ও সীমিত আয়ের ব্যক্তিরা। কারণ মধ্যবিত্ত হওয়ার ফলে সহসাই তাদের সরকারী ও ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা করছেনা। অন্যদিকে চক্ষু লজ্জার কারণে এসব ব্যক্তিরা অভাব অনটনের কথা বলতে পারছে না। যেকারণে চরম দৈন্যদশার মধ্যে মধ্যবিত্ত পরিবারের বোবা কান্না যেন থামছেনা।

এরই মধ্যে সরকার কচুয়ার অসহায়দের বাড়ি বাড়ি খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন। জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে অনেকেই আগ্রহী হয়েও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছেন।

এদিকে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোফাচ্ছেল হোসেন খান তার ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাসে মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকদের কথা উল্লেখ করে লিখেন, কচুয়ার মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনেকে আছেন চক্ষু লজ্জার কারণে অভাব অনটনের কথা ও সহায়তা নিতে পারছেন না কিন্তু অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। এ রূপ ব্যক্তিদের জন্য আমাদের সহায়তার দরজা খোলা রইল। কারো প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করবেন। আমরা আপনাদের পাশে আছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মধ্যবিত্ত একজন ব্যক্তি জানায়, তিনি একটি দোকানে চাকরি করতেন। মাসে ৭ হাজার টাকা বেতন পেতেন তিনি। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সকল মার্কেট বন্ধ করে দেয়া হয়। এর ফলে তিনি এখন বেকার সময় পার করছেন। মাস শেষ হওয়ার আগেই এই ছুটি ঘোষণার ফলে পকেট প্রায় ফাঁকা। তাই ভীষণ বিপাকে পড়েছে এই ব্যক্তি। এখন কোন কূল কিনারা পচ্ছেনা। এলাকার মুদি দোকানে ঋণের বোঝা পাহাড় সমান হয়েছে।
সঞ্জয় নামের এক চাকরিজীবী বলেন, আমি একটি দোকানে চাকরি করে মাসে ১০ হাজার টাকা উপার্জন করতাম। কিন্তু এখন সকল মার্কেট বন্ধ ঘোষণা করায় বেকার হয়ে পড়েছি। আর অর্থকষ্টের কথা কাউকে বলতেও পারছিনা। সরকারী সহায়তাও নিতে পারছিনা। কারণ কখনো কারো কাছে হাত পাতিনি। তাই উভয় সংকটে পড়েছি। কাউকে বলতেও পারছিনা এই সংকট মোকাবেলাও করতে পারছিনা।

কাপড় ব্যবসায়ী নিত্য জানায়, বাকিতে ব্যবসা করছি। কম পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও এখন বাকির উপরে ব্যবসা পরিচালনা করছি। তাছাড়া মূলধনের পুরোটাই ব্যবসার পুঁজিতে লাগিয়েছি। এখন মার্কেট বন্ধ হওয়ার ফলে কোন টাকা নেই। এই অবস্থায় সংসার কি করে চলবে বুঝতে পারছিনা। ব্যবসায়ী হওয়ার ফলে কারো কাছে সাহায্য চাওয়াও সম্ভব না। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছি।

জানা গেছে, মধ্যবিত্ত ও সীমিত শ্রেণির আয়ের ব্যক্তিরা উপার্জনের টাকা দিয়ে সংসার চালায়। এর মধ্যে অধিকাংশের পক্ষে কোন সঞ্চয় করা সম্ভব হয়না। কোন রকমে খেয়ে পুড়ে দিন কাটায় এসব শ্রেণির ব্যক্তিরা। এর মধ্যে মরার উপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধের খড়গ। কারণ এই অবস্থায় তারা ভীষণ অর্থকষ্টে দিনাতিপাত করছে। কিন্তু কাউকে মুখ ফুটে এই অর্থকষ্টের কথা বলতে পারছেনা। আবার সাহায্য সহযোগিতাও নিতে পারছেনা।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)