চাঁদপুরের ৪ শতাধিক নারী-পুরুষ ঘর ছাড়া! উদ্ধার ২ শতাধিক

শরীফুল ইসলাম :

চাঁদপুরে সামাজিক অবক্ষয়ের ঘটনায় বাড়ছে নিখোঁজের সংখ্যা। শিশু, বিবাহিত নারী ও কলেজ শিক্ষার্থী নিখোঁজের ঘটনায় ইতিমধ্যে থানায় চার শতাধিক ডায়েরি করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। সামাজিক অবক্ষয় রোধে শিক্ষা প্রতষ্ঠানের পাশাপাশি পরিবারের লোকজনদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সুধী সমাজ।

আহমদ উল্লাহ তানভীর। চাঁদপুর সরকারি কলেজের মাস্টার্সে অধ্যায়নরত এই শিক্ষার্থী পরিবারের সাথে অভিমান করে কয়েক মাস যাবত নিখোঁজ রয়েছে। তানভীরের খোঁজ না পেয়ে পরিবারের লোকজনের সময় কাটছে দুশ্চিন্তায়। নিখোঁজ তানভীরের পিতা আব্দুল মতিন বলেন, আমার ছেলে মাস্টার্স পাশ করার পড়ে কোন চাকরি পাচ্ছিল না। আমি তার মা ও বোন বিভিন্ন সময় তাকে চাকরির জন্য বলতাম। এই নিয়ে আমার ছেলে মানসিক দুশ্চিন্তায় থাকতো। হঠাৎ করে সে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও তার খোঁজ পাইনি। ছেলে বাড়ি ছাড়ার পর, তার মা দুশ্চিন্তায় মারা যায়। আমার জানা মতে তার সাথে কারো সম্পর্ক নেই। আমরা এখনো তার অপেক্ষায় আছি।

চাঁদপুর সদরের মহামায়া এলাকার মনসুর বলেন, দুই মাস হয়েছে বিয়ে করেছি। বিয়ের কিছুদিন পরই সে কলেজে আসা যাওয়া করতো। হঠাৎ করে কলেজে যাওয়ার পর সে আর বাড়ি ফিরে আসেনি। তার সাথে ওই এলাকার এক ছেলেও সম্পর্ক ছিল। আমাদের মতো অনেকেরই এই সমস্যা রয়েছে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য মতে, চাঁদপুরে সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী নিখোঁজের ঘটনায় চার শতাধিক সাধারন ডায়েরি করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। নিখোঁজ ডায়েরিগুলোর মধ্যে পরকিয়া ও প্রেম-ভালবাসা এবং পারিবারিক কলহে ঘর ছাড়ার সংখ্যই বেশি। সামাজিক অবক্ষয় রোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের পাশাপাশি পরিবারের লোকজনদের এগিয়ে আসা বলে মনে করছেন সুশীল সমাজ।

নিখোঁজের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘর ছেড়েছে কথিত প্রেমিক যুগল ও পারিবারিক কলহে। উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণি সোস্যাল মিডিয়ায় পরিচয়, অত:পর প্রেম ভালোবাসা, সবশেষে ঘর ছেড়ে পালানোদের সংখ্যা বেশি। পিছিয়ে নেই পরকিয় প্রেমিকরা। স্বামী বিদেশ কিংবা পেশাগত কাজে ব্যাস্ত এ সুযোগে স্ত্রী পালিয়ে যায় অন্য পুরুষের সাথে, এদের সংখ্যাও কম নয়। তবে নিয়মিত নিখোঁজ ডায়রিতে রয়েছেন মানসিক ভারসাম্যহীন, বৃদ্ধা ও শিশুররা।

চাঁদপুর সরকারি কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ইয়াহ ইয়া খান বলেন, শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ সময় পরিবারের সদস্যদের সাথে কাটায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে এ ব্যাপারে পরিবারের লোকজনের অধিক সচেতন হতে হবে। তারা কোথায় যায়, কার সাথে মিশে। তাদের বিষয়ে আমাদেরকে অবগত করা প্রয়োজন।

চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশ বলেন, ইদানিং দেখা যাচ্ছে তরুণ সমাজ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করেই শুনা যায় তাদের খুঁজে যাওয়া যাচ্ছে না। একাধারে দুইটি প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, পরিবার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ছেলে-মেয়েরা ব্যাপক একটা সময় পরিবারের কাছে সময় ব্যায় করে। ওই সময় তাদের মধ্যে কোন পরিবর্তন আসছে কিনা, তা লক্ষ রাখতে হবে। তাদের পরিবর্তন গুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জানাতে হবে, যাতে তাদের উপর মনিটরিং রাখা যায়। শিক্ষার্থীদের অবক্ষয় রোধ করা না গেলে, তা দেশের জন্য বড় ধরনের হুমকি স্বরূপ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুর রশিদ বলেন, ছেলে-মেয়েদের ঘর ছাড়ার মূল কারণ সামাজিক অবক্ষয় এবং সোস্যাল মিডিয়া। এসব ক্ষেত্রে অভিভাবক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আরো সচেতন হতে। চলতি বছরে জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চাঁদপুর সদর মডেল থানায় ৪০০ এর বেশি নিখোঁজ ডায়েরি হয়েছে। এর মধ্যে উদ্ধার হয়েছে দুই শতাধিক। বাকিগুলো তদন্তাধীন রয়েছে।

শেয়ার করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)