কবির হোসেন মিজি :
চাঁদপুরের পুরানবাজারে বসতঘর নিয়ে দ্বন্দ্বে পারিবারিক কলহকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের এসিড নিক্ষেপে শরীর জলসে গিয়ে মৃত্যুশয্যায় রয়েছেন সীমা ঘোষ (৩৫) নামের এক অসহায় গৃহবধূ। গত সোমবার (গত ২৪ এপ্রিল) সকালে পুরানবাজার ঘোষপাড়া এলকায় এমন অমানবিক ঘটনা ঘটে। আহত সীমা ঘোষ ওই এলাকার অধির ঘোষের স্ত্রী।
আহত সীমা ঘোষ ও প্রতিবেশীরা জানায়, একই এলাকার প্রতিবেশী দিলীপ সূত্রদের সাথে অধীর ঘোষের বসতঘর নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরত চলে আসছিল। এ নিয়ে প্রায়ই তাদের উভয়পক্ষের অনেক ঝগড়াঝাটি হতো। ঘটনার দিন সকালে অধীর ঘোষ বাইরে বেরিয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দিলীপ সূত্রধর, অধীর ঘোষের সাথে বিভিন্ন কথা উঠিয়ে ঝগড়া জড়িয়ে পড়েন।
অন্যান্য প্রতিবেশীরা এবং আহতের পরিবারের লোকজনরা জানান, এই ঝগড়ার ফাঁকেই দিলীপ সূত্রধরের স্ত্রী স্মৃতি সূত্রধর ও তার ছেলে লিমন সূত্রধর ফুটানো পানির সাথে এসিড মিশিয়ে সুযোগ বুঝে জানালা দিয়ে আহত সীমা ঘোষের শরীরে এসিড নিক্ষেপ করেন। এতে তার বুক ও স্পর্শকাতর স্থানসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ফোসকা পড়তে থাকে। যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন সীমা ঘোষ।
প্রতিপক্ষের এমন অমানবিক কর্মকান্ডের শিকার হয়ে সিমা ঘোষ যন্ত্রণায় কাতরাতে দেখে প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য চাঁদপুর সরকারি জেনারেল (সদর) হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু তার বুকের স্পর্শকাতরস্থানসহ শরীরের অধিকাংশ জায়গা পুড়ে যাওয়ায় কর্মরত চিকিৎসকরা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দিয়ে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষণিক ঢাকায় প্রেরণ করেছেন।
এদিকে সীমা ঘোষের পরিবার অসহায় হওয়ায় আর্থিক সংকটে ওইদিন তাকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি বলে গত ৪ দিন ধরে পুরানবাজার ঘোষপাড়া তার নিজের বসতঘরে শুয়ে যন্ত্রণায় কাটিয়েছেন। পরে তাদের এমন অসহায়ত্বের কথা চিন্তা করে পাড়া-প্রতিবেশীরা বিভিন্নজনের কাছ থেকে টাকা উঠিয়ে সর্বশেষ গতকাল শনিবার (২৯ এপ্রিল) তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যান।
এ বিষয়ে এসিড নিক্ষেপকারী দিলীপ সূত্রধরের পরিবারের সাথে কথা বলতে চাইলে তাদেরকে বাসায় পাওয়া যায়নি। বাসায় গিয়ে দেখা যায়, পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা তাদের বাসা-বাড়িতে তালা লাগিয়ে গাঢাকা দিয়েছেন।
এদিকে এমন অমানবিক ঘটনাকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ধামাচাপা দিতে প্রভাবশালী দিলীপ সূত্রধরের পক্ষ হয়ে একটি চক্র থানায় দৌঁড়ঝাঁপ দিতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মালেক শেখের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমিও এমন ঘটনা শুনেছি। তবে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমিও চাই আইনি প্রক্রিয়ায় সঠিক তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক।
এ বিষয়ে চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (অফিসার ইনচার্জ) মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ জানান, এমন ঘটনার বিষয় আমরা অবগত হয়েছি। আইনি প্রক্রিয়া চলছে। ক্ষতিগ্রস্তরা মামলা দিলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।