নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুর জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভা রোববার বিকেলে কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। এ ভার্চুয়াল সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সভার শুরুতেই জেলা প্রশাসক চাঁদপুরের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরেন। এ সময় জেলা প্রশাসক মন্ত্রীকে অবহিত করে বলেন, চাঁদপুরে করোনা পরিস্থিতি তেমন একটা উন্নতি এখনো দেখা যায়নি। আক্রান্তের হার আজ কিছুটা কমলেও আবার বেড়ে যাচ্ছে কাল । সবাই যদি সম্মিলিতভাবে এগিয়ে না আসে তাহলে পরিস্থিতির উন্নতির হবে না।
জেলা প্রশাসক বলেন, আমাদের প্রশাসনের অনেক ম্যাজিস্ট্রেট, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। পুলিশসহ বিভিন্ন দফতরের লোকজন আক্রান্ত হচ্ছেন। তারপরও আমরা রাত-দিন চেষ্টা করে যাচ্ছি একে দমাতে। প্রশাসন কাজ করছে । তিনি বলেন, করোনা প্রতিরোধে ৮৯টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যানকে প্রধান করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৮৯টি কমিটি গঠন দিয়েছি। পৌরসভাগুলোতেও কমিটি করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকার দলের হয়েও কিছু কিছু লোকজন এখনো সচেতনতামূলক কর্মকান্ডে মনে হচ্ছে উদ্বুদ্ধ হতে পারছেন না। অংশ নিতে চাইছেন না। জেলা প্রশাসক বলেন, এই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা তাদের পাশে পেতে চাই। সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যদি কাজে নামি তাহলে তা সুন্দর হয়।
জেলা প্রশাসকের এ কথা শুনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, আমি আগেও বলেছি- এ ধরনের অপকর্ম বরদাস্ত করা হবে না। যারা এসব করে তাদের আইডি স্ক্রীনশর্ট করে রেখে দিন। এরা কখনো দলের কোন কর্মী বা নেতা হতে পারেন না।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন- এই তিনজনের করোনা ছাড়াও রাষ্ট্রের অন্য কাজগুলো সম্পাদন করতে হয়। তিনি বলেন, তাদের পাশে থেকে সম্মিলিতভাবে বা নিজেরা কাজ করে যেতে হবে। প্রয়োজনে স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করে দলের লোকদের কাজ করতে হবে। এ ব্যাপারে আমি আগামীকাল আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অন্যান্যদের সাথে কথা বলবো।
সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্যাহ শিক্ষামন্ত্রীকে চাঁদপুরের করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করে বলেন, জুলাই মাসের গত ১৮ দিনে ১৭ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এখন এক ঘরে একজন আক্রান্ত হলে অন্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। তিনি বলেন, আইসোলেশন ওয়ার্ডে বেড সংখ্যা কম ছিল। সবগুলো হাসপাতালেই বেড বাড়িয়েছি।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রতিটি হাসপাতালে কমপক্ষে আরও ২০টি বেড বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে ২৫০ শয্যার হাসপাতালের ১৫০টি বেডকেই করোনা রোগীদের চিকিৎসার্থে ছেড়ে দিতে হবে। এক্ষেত্রে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে যেসব সাধারণ রোগী ভর্তি হয়েছেন তাদেরকে অন্য বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে স্থানান্তর করার ব্যবস্থা করুন।
মন্ত্রী বলেন, আপনাদের আইসিইউ সরঞ্জামাদি এসেছে এবং অন্যসব সরঞ্জামাদি পেতে যদি দেরি হয় তাহলে সেটি আমাকে জানান। প্রয়োজনে আমরা আমাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তা ব্যবস্থা করে দিব। যা যা আপনাদের নেই কিন্তু এখনই প্রয়োজন এবং যা যা আছে তার একটি তালিকা আমাকে দ্রুত পাঠানোর ব্যবস্থা করুন।
মন্ত্রী বলেন, ঢাকায় রোগী না পাঠিয়ে স্থানীয়ভাবেই চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা রাখুন। খুব গুরুতর না হলে ঢাকা বা অন্য কোন জায়গায় করোনার রোগী পাঠানো ঠিক না। এখন যে পরিস্থিতি এসেছে নিজেদের স্থানে নিজেরাই ব্যবস্থাগুলো করতে হবে। শিক্ষামন্ত্রীকে জানানো হয়, অক্সিজেন প্ল্যান্ট থেকে রোগীরা ঈদের পরই অক্সিজেন পাবেন। এছাড়া আবুল খায়ের গ্রুপ পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করছেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আবারও বলছি সচেতনতার কোন বিকল্প নেই। প্রশাসনকে তিনি বলেন, আগামী লকডাউনে সরকারি বিধি-নিষেধ মানাতে যতোটা কঠোর হওয়া দরকার সেটিই আপনারা হবেন। সব মিলে সবাইকে চেষ্টা করে যেতে হবে এই মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, কোনরকম দায়িত্বহীন কথাবার্তা সহ্য করা যাবে না। আপনারা সবাই ভালো থাকবে- এটিই আমার প্রত্যাশা।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ, পৌর মেয়র মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল, ২৫০ শয্যার সরকারি জেনারেল হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাবিব উল করিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, পৌরসভার প্যানেল মেয়র ফরিদা ইলিয়াছ প্রমুখ।
এছাড়া এই ভার্চুয়াল সভায় সংযুক্ত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।