নিজস্ব প্রতিনিধি :
পাঁচ-ছয় বছর আগে হাফেজি পড়ানোর জন্য চট্টগ্রামের একটি মাদরাসায় ভর্তি করানো হয় জোবায়ের হোসেনকে। ওই মাদরাসার এক শিক্ষক শাসন করতে গিয়ে তার মাথায় আঘাত করেন। এতে তার মাথায় সমস্যা তৈরি হয়। ওই সময় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা করার পর কয়েক বছর ভালো ছিল।
গত কয়েক দিন আগে তার সেই সমস্যা আবার দেখা দেয়। হারিয়ে ফেলেন মানসিক ভারসাম্য। গত এক সপ্তাহ ধরে একটি গাছের সঙ্গে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। অর্থের অভাবে জোবায়েরের উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছে না তার পরিবার।
জোবায়ের হোসেন চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার চাংপুর গ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে। বাবা দুলাল মিয়া চট্টগ্রামে দিনমজুরের কাজ করেন। তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। যার মধ্যে জোবায়ের তৃতীয়। সংসারের বড় দুই ছেলে ওমর ফারুক (৩০) ও নবীর হোসেন (২৫) বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছেন। বর্তমানে তারাও চট্টগ্রামে বাস করেন। বাড়িতে মায়ের সঙ্গে জোবায়ের ও মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস (১৬) থাকেন।
জোবায়ের মা মর্জিনা বেগম জানান, জোবায়ের বিভিন্ন সময় ঘরের আসবাবপত্র ভেঙে ফেলেন। রাস্তাঘাট দোকানপাটে গিয়ে অনেকের গায়ে আঘাত করে এবং বিভিন্ন দোকানের মালামাল এখানে সেখানে ছুড়ে ফেলে দেন। একা মায়ের পক্ষে সারাক্ষণ তাকে দেখে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। এ জন্য তাকে ঘরের বাইরে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখার সিদ্ধান্ত নেন মা।
তিনি বলেন, রাতে ছেলের পায়ে শিকল ও হাত বাঁধা অবস্থায় ঘরে ঘুমানোর ব্যবস্থা করি। কিন্তু ছেলের এমন অবস্থায় মা হয়ে আমি নিজেও সারারাত ঘুমাতে পারি না। কারণ, কখন সে কি করে বসে এই দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। আমি গরীব মানুষ। আমার স্বামী চট্টগ্রামে দিনমজুরের কাজ করেন। ঠিকমতো সংসার চালানো আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। ছেলের চিকিৎসা করব কীভাবে? তাকে উন্নত চিকিৎসা করার সামর্থ্য আমাদের নেই। কান্নাজড়িত কণ্ঠে মর্জিনা বেগম ছেলের চিকিৎসায় বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেন।
এ বিষয়ে বিতারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসহাক শিকদার বলেন, বিষয়টি আমি অবগত ছিলাম না। আপনার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। তবে মানসিক ভারসাম্যহীন জোবায়েরের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা আমি গ্রহণ করার চেষ্টা করব।