কচুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান শিশিরকে প্রধান আসামী করে থানায় মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক :
কচুয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান শিশিরসহ ৩জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতসহ মোট ১৮জনের বিরুদ্ধে কচুয়া থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। রোববার শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নূরে আলমকে মারধরের ঘটনায় এই মামলা দায়ের করা হয় ।

রোববার দুপুরে কচুয়া শহীদ স্মৃতি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনের কাজ পরিদর্শনে গেলে প্রকৌশলী নূরে আলমের উপর এই হামলা চালানো হয়। কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা দীপায়ন দাসের উপস্থিতিতে এই হামলার ঘটনা ঘটে। পরে নূরে আলমকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

এই ঘটনায় আহত প্রকৌশলী নূরে আলম রোববার কচুয়া থানায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহজাহান শিশিরকে প্রধান আসামি করে ৩জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতসহ ১৮জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

প্রকৌশলী নূরে আলম জানান, রোববার কচুয়া শহীদ স্মৃতি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনের কাজের জন্য কিছু পাথর আসে। ওই পাথরগুলোর বিষয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ আসে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে আমি সেখানে যাই। যদি পাথরের মান ভাল না হয়, তাহলে রিজেক্ট করে দিবো এবং ঠিকাদারকে পাথরগুলো ফেরৎ নিয়ে যেতে বলবো। সে কারেণ সেখানে যাওয়া।

তিনি বলেন, আমি ঘটনাস্থলে যাওয়ার পূর্বে ইউএনও সাহেবের কাছে উনার কার্যালয়ে যাই। উনার সাথে কথা বলে, উনাকে নিয়ে কাজের কাছে যাই। সেখানে গিয়ে পাথরগুলো যাচাই করছি, এমন সময় হঠাৎ করে উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান শিশির কোন কথা না বলেই অতর্কিত হামলা চালায়। প্রথমে ইউএনও সাহেবের উপর হামলা চালায়। তিনি (ইউএনও) মুখের মাস্ক খুলার কারণে তাকে না মেরে আমার উপর হামলা চালায় এবং তার লোকজন দিয়ে আমাকে মারধর করে।

তিনি অভিযোগ করেন- হামলার সময় চেয়ারম্যান বলে, ‘দড়ি আন, তাকে বেধে রাখবো।’ পাশে থাকা লোকজন বলে- ‘তিনি তো প্রকৌশলী, উনাকে মারছেন কেন?’ তখন চেয়ারম্যান তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গাল মন্দ করতে থাকে। আবারও আমাকে বাঁশ দিয়ে মারধর করে। পরে আমি আতংকিত হয়ে পড়ি এবং কচুয়া উপজেলা হাসপাতালে না গিয়ে চাঁদপুরে এসে সরকারি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেই।

বিষয়টি আমি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এই ঘটনায় সোমবার কচুয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

প্রকৌশলী নূরে আলম জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬ তলা ভীত বিশিষ্ট কচুয়া শহীদ স্মৃতি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের কাজ চলছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অনন্ত ট্রেডার্স (জেবি) এই কাজ করছে।

চাঁদপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ফাহিম ইকবাল জানান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী নুরে আলম ঘটনাটি আমাকে জানিয়েছেন। বিষয়টি আমি তাৎক্ষণিক ইউএনও’র কাছে জানি এবং ঘটনার সত্যতা পাই। পরে বিষয়টি চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাদের নির্দেশমত আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপায়ন দাস শুভ বলেন, ঘটনাটি আমরা সামনেই ঘটেছে এবং সেখানে উপস্থিত ছিলাম। তবে ওই প্রকৌশলীকে যেভাবে মেরেছে তাতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো অবস্থা হয়নি।

এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাজাহান শিশির বলেন, আসলে কাজের মান নিম্ন হওয়ায় আমি বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিতে সেখানে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফিরে আসার সময় কিছু ছেলে প্রকৌশলীর উপর হামলা করে। আমি তখন তাদের গিয়ে থামাই। পরিস্থিতি কিছুটা ঘোলাটে হওয়ায় আমি স্থানীয় ছেলেদের সরিয়ে দিতে গিয়ে উভয় পক্ষকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেই। এতে যদি কোনো অপরাধ হয়ে থাকে, তাহলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।

চেয়ারম্যান জানান, বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য যেই ধরনের উপকরণ তথা পাথর, বালুসহ অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে, তার মান ভালো হয়। কাজের মান ভালো করার জন্য আমি পরিদর্শনে আসা প্রকৌশলীকে অনুরোধ জানিয়েছি।

কচুয়া থানার ওসি মো. ওয়ালী উল্যাহ বলেন, এই ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)