নিউইয়র্কে বিশ্ব নেতাদের মহামিলনের প্রস্তুতি : প্রধানমন্ত্রীর অপেক্ষায় প্রবাসীরা

আন্তর্জাতিক তথা বিশ্ব প্রতিষ্ঠান জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসতে শুরু করেছেন। জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্যরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল এতে অংশ নিতে যাচ্ছে। এর ফলে কার্যত বিশ্ব নেতাদের আরেক দফা বার্ষিক মহামিলনমেলা হতে যাচ্ছে নিউইয়র্ক শহরে।

নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটনে অবস্থিত জাতিসংঘের সদর দপ্তরে গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে বহু দেশের প্রতিনিধি দলের পূর্ণাঙ্গ কিংবা আংশিক সদস্যরা নিউইয়র্ক এসে পৌঁছেছেন। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে অধিবেশনের মূল পর্ব তথা উচ্চ পর্যায়ের বিতর্ক পর্ব শুরু হতে যাচ্ছে। শেষ মুহূর্তে রাষ্ট্র/সরকারপ্রধান ও প্রতিনিধি আসার মাত্রা অনেক বেড়েছে। ১৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই অংশগ্রহণকারী সবাই এখানে চলে আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

এবারের জাতিসংঘ অধিবেশন চলবে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এই অধিবেশনে যোগ দিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান, রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি দলের সদস্য, মিডিয়াকর্মী, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দসহ হাজার হাজার অংশগ্রহণকারী এখন নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। সম্মেলন এলাকা ম্যানহাটনের হোটেল-মোটেলে ব্যাপক বিদেশীদের অবস্থান।

এ কারণে হোটেল-মোটেলের ভাড়া বেড়েছে কয়েকগুণ। তারপরও অধিকাংশ হোটেলে এখন আর সিট খালি নেই। বাধ্য হয়ে লোকজন নিউইয়র্কের অন্যান্য প্রশাসনিক অঞ্চল (বারো) ব্রুকলিন, দ্য ব্রংক্‌স, কুইন্‌স এবং স্ট্যাটেন আইল্যান্ডে ভিড় করছেন। তবে ম্যানহাটনের মতো অন্য অঞ্চলেও প্রায় সমান তালে বেড়েছে হোটেল-মোটেলের ভাড়া।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত আটলান্টিক মহাসাগর তীরবর্তী একটি বন্দর শহর নিউইয়র্ক। এই শহরের ম্যানহাটন বরোর টার্টল বে এলাকায় জাতিসংঘের সদর দপ্তর অবস্থিত। ৭৮তম সাধারণ অধিবেশন উপলক্ষে পুরো এলাকাটি এখন কয়েক দফার নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা হয়েছে। সদর দপ্তর সংলগ্ন রাস্তাগুলোতে যানবাহন চলাচল সীমিত করা হয়েছে। কিছু সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধের প্রস্তুতি চলছে। অধিবেশনের মূল পর্ব শুরু হলে অনেক রাস্তা বন্ধ করে সেখানে শুধুমাত্র অংশগ্রহণকারী, আমন্ত্রিত ও অনুমোদিত ব্যক্তিদেরই প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হবে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে পৌঁছার কথা রয়েছে। ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা ত্যাগ করবে প্রতিনিধি দলটি। যুক্তরাজ্যে স্বল্প সময়ের যাত্রাবিরতি করে ১৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসবেন প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল। প্রধানমন্ত্রীর অপেক্ষায় এখন প্রবাসী বাংলাদেশী ও এখানকার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী-সমর্থকরা।

বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিয়ে ২২ সেপ্টেম্বর সাধারণ বিতর্ক পর্বে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য দিবেন। পাশাপাশি প্রতি বছরের মতো এ বছরও সাধারণ বিতর্ক পর্ব চলাকালীন বেশ কিছু উচ্চ পর্যায়ের সভা, কোভিড-১৯ অতিমারির ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের সভা এবং বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নিতে পারেন।

সূত্র আরো জানায়, জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার প্রধানরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় আয়োজিত অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সেখানেও যোগ দিতে পারেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী এবং শ্রীলংকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের (ইউএনজিএ৭৮) এবারের প্রতিপাদ্য ‘রিবিল্ডিং ট্রাস্ট অ্যান্ড রিইগনিটিং গ্লোবাল সলিডারিটি : অ্যাক্সিলারেটিং অ্যাকশন অন দ্য ২০৩০ এজেন্ডা অ্যান্ড ইটস সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস টুওয়ার্ডস পিস, প্রসপারিটি, প্রোগ্রেস অ্যান্ড দ্য সাসটেইনেবিলিটি ফর অল’।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরকে ঘিরে সাজসাজ রব বিরাজ করছে শহরটির বাংলাদেশি অধ্যুসিত এলাকা জ্যাকসন হাইটস ও জ্যামাইকায়। প্রধানমন্ত্রীকে নাগরিক সংবর্ধনা দিতে প্রস্তুতি চলছে। ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে জ্যাকসন হাইটস এলাকাটি। প্রতিদিনই চলছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর সভা-সমাবেশ।

স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি এয়ারপোর্টে ১৭ সেপ্টেম্বর রোববার জড়ো হবেন কয়েক হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দুপুর ১টায় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। এসময় বাইরে আনন্দ মিছিল করবেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা। একই দিন বিকেল ৫টায় ম্যানহাটন মেরিয়ট দরবার হলে নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

নিউইয়র্কে সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি চলাকালে শেখ হাসিনা ম্যানহাটন লটোপ্যালেচ হোটেলে অবস্থান করবেন। ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন যাবেন তিনি। সেখান থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর রওয়ানা হবেন লন্ডনের উদ্দেশ্যে।

শেয়ার করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)