বার্মা ও সাগরের নিম্নমানের স্বাদহীন ইলিশ চাঁদপুরের বলে বিক্রি!

অনলাইনে ইলিশ ব্যবসা জমছে : নাম লিখিয়েছে কিছু প্রতারকও

নিজস্ব প্রতিবেদক :
রং-রূপে-স্বাদে-গুণে অনন্য চাঁদপুরের ইলিশ। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে ইউরোপ-আমেরিকায়ও এই ইলিশের কদর। চাঁদপুরের ইলিশ ভ‚বনখ্যাত। সারাদেশেও সমাদৃত চাঁদপুরের ইলিশ। চাঁদপুরের এই ইলিশ শত শত বছর ধরেই দেশ-বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে ইলিশ রপ্তানী নিষিদ্ধ হলেও দেশের নানা প্রান্তে তা নিয়মিত পাঠাচ্ছে ব্যবসায়ীরা।

পেশাদার মাছ ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি এবার কিছু অনলাইন উদ্যোক্তাও ইলিশের ব্যবসায় নাম লিখিয়েছেন। তারা সফলতাও দেখতে শুরু করেছেন। অনলাইনে ইলিশ ব্যবসায় ক্রেতাদের সাড়া দেখে কিছু প্রতারকও এখন এই ব্যবসায় নেমেছে। তারা বার্মা ও সাগরের নিম্নমানের ইলিশ চাঁদপুরের বলে চালিয়ে দিচ্ছে। এতে চাঁদপুরের ইলিশের সুনাম নষ্ট হচ্ছে, আস্থা ও বিশ্বাস হারাচ্ছে ভিন জেলার ভোক্তারা।

করোনাকালে তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে চাঁদপুরের ইলিশ সারাদেশে বাজারজাত শুরু করেছেন কিছু তরুণ উদ্যোক্তা। ফেইসবুক ও ওয়েবসাইট খুলে আগ্রহীদের কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে চাঁদপুরের ইলিশ পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। কুরিয়ার সার্ভিস ও ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির মাধ্যমে ১-২ দিনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে চাঁদপুরের ইলিশ। অনলাইনের এই ইলিশ বাণিজ্যে অনেক ক্রেড়া সাড়া দিচ্ছেন। এর প্রভাব পড়েছে চাঁদপুরের ইলিশের দামেও। ফলে ইলিশ দাম এবার অন্য বছরের তুলনায় বেশি।

তবে এই সুযোগে কিছু অসাধু লোক অনলাইনে ইলিশ ব্যবসায় নেমে প্রতারণা শুরু করেছেন। তারা চাঁদপুরের ইলিশ বলে কম দামের নি¤œমানের সাগরের ও বার্মা থেকে আসা ইলিশ বেশি দামে বিক্রি করছে। এসব ইলিশের স্বাদ নেই বললেই চলে। সাগর ও বার্মা থেকে আসতে আসতে এসব মাছ অনেক নরম হয়ে যায়। গ্রাহকের বাসায় পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় পঁচার অবস্থা হয়। এতে চাঁদপুরের ইলিশের প্রতি ভোক্তাদের আস্থা, বিশ্বাস ও আগ্রহ কমে যাচ্ছে। বিষয়টি এখনি প্রতিরোধ করা না গেলে চাঁদপুরের ইলিশের সুনাম অনেকাংশে দুর্নামে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাটে ২০১৬ সালের ২৩ নভেম্বর প্রথম ‘অনলাইন ইলিশ বাজার’ কার্যক্রম চালু করেন চাঁদপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক আব্দুস সবুর মন্ডল। তার বিশ্বাস ছিল, এই অনলাইন ইলিশ বাজারের মাধ্যমে পছন্দের ইলিশ মাছ খুব সহজেই হাতের নাগালে পাবেন ক্রেতারা। কিন্তু ব্যবসায়ীদের অসহযোগিতায় সেই অনলাইন ইলিশ বাজার চালুর সাথে সাথেই কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।

তখনকার সেই উদ্যোগ বাস্তবায়ন না হলেও করোনা পরিস্থিতিতে চলতি ইলিশ মৌসুমের শুরুতেই অনলাইন ও ফেসবুক গ্রুপে ইলিশ বিক্রি বেশ জমেছে। অনেকেই ফেসবুকে গ্রুপ/একাউন্ট খুলে সারাদেশে ইলিশ বিক্রি করছেন। সব মিলে প্রতিদিন অনলাইনে অর্ডার পেয়ে বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয় কমপক্ষে ১০ মণ করে ইলিশ। আকার ভেদে প্রতিদিন দাম উঠা-নামা করছে বাজার দর অনুযায়ী।

উল্লেখ্য, চাঁদপুরের মৎস্য আড়তে এখন লোকাল (স্থানীয়) ইলিশ বলে যেসব ইলিশ বিক্রি হচ্ছে সেগুলোর অধিকাংশ লক্ষ্মীপুর, হাতিয়া, সন্দীপ, বরিশাল, ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা। চাঁদপুরের নদীতে ইলিশের আকাল থাকায় লোকাল ইলিশ আড়তে নেই বলেই চলে। স্বাদ কাছাকাছি থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের এসব ইলিশকেই চাঁদপুরের ইলিশ বলে স্থানীয় আড়তে বিক্রি করা হচ্ছে। এখন প্রতিদিন ১০-২০টি ট্রাকে করে দক্ষিণাঞ্চল থেকে শত শত মন ইলিশ এনে চাঁদপুরে বিক্রি করা হচ্ছে। সেখানকার ৫০০-৬০০ টাকা কেজি দরের ইলিশ চাঁদপুর বড়স্টেশন আড়তে এনে বিক্রি করা হয় ৮০০-১০০০ টাকা দরে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, সবার পক্ষে ইলিশ চেনা কঠিন। এর সমাধান পাওয়াও কঠিন। অন্য অঞ্চলের ইলিশ চাঁদপুরের ইলিশ বলে সবাই চালিয়ে দেয়। তবে এক্ষেত্রে চাঁদপুরের সুনাম রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক হয়ে কাজ করতে হবে। ক্রেতাদেরও যাচাই-বাছাই করে ইলিশ কিনতে হবে।

জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান বলেন, যদি ফেসবুক পেইজ ও গ্রুপে কেউ ইলিশ কিনে প্রতারিত হন তাহলে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। সেই সঙ্গে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে অভিযোগ করতে পারেন। যেহেতু মুক্তবাজার অর্থনীতি তাই ডিজিটাল প্লাটফর্মের বিষয়ে হুট করে কোনো কিছু নির্ধারণ করা ঠিক হবে না।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)