চাঁদপুরের ওয়াসিম হত্যা মামলা : আরিফের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী

কামাল হোসেন খান :
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার নয়াকান্দি শিকিরচর গ্রামের ওয়াসিম হত্যা মামলার প্রধান আসামী বালু মিজান (৪৫) ও আরিফ হোসেন (৩৫)কে রোববার রাতে তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে ঢাকা থেকে আটকের পর মঙ্গলবার চাঁদপুরের আদালতে প্রেরণ করা হয়।

পুলিশ তাদের ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন। এর মধ্যে আদালতে আরিফ হোসেন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। আদালত ২ আসামীকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। বালু মিজানের রিমান্ড শুনানী আগামীকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে।

মতলব উত্তর থানার চৌকস অফিসার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আফসার ও এসআই হাবীবসহ থানা পুলিশ ঢাকা’সহ আশপাশের বিভিন্ন স্থানে ৪৮ ঘন্টা অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে আটক দুই আসামী বালু মিজান ও আরিফ হোসেন কে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে চাঁদপুর কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রাথমিক জিঙ্গাসাবাদে তারা এ হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই আফসার জানান। মঙ্গলবার এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন থানার ওসি নাসির উদ্দিন মৃধা।

মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নাসির উদ্দিন মৃধা বলেন, গত ৩০ জুলাই রাতে মোবাইলে ডেকে এনে ওয়াসিম নামের যুবককে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। পরদিন সকালে বাড়ির পাশের খাল থেকে রক্তমাখা লাশ উদ্ধার করা হয়। এটি ছিল একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড।

হত্যাকান্ডের পরের দিন আটক বালু মিজান ও আটক তার ভাই আরিফ, আজাদ ও করিম এই ৪জনকে আসামী করে হত্যা মামলা করা হয়। ঘটনার পর থেকে আসামীরা পলাতক ছিলো। তাদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত ছিল।

ওসি আরো জানান, ঘটনার পর থেকে তারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান পরিবর্তন করে। মোবাইল ট্যাকিং এর মাধ্যমে দীর্ঘ ৪৮ ঘন্টা অভিযান পরিচালনা করে অবশেষে হত্যা মামলার প্রধান দুই আসামীকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। বাকী দুই আসামীদের গ্রেফতারের জন্য টিম বাইরে এখনও কাজ করছে। খুব শীঘ্রই বাকী আসামীদেরকে আমরা ধরতে সক্ষম হবো।

তিনি বলেন, অপরাধ করলে কেউ পার পায় না। ধরা তাকে পরতেই হবে। আমরা চেষ্টা করেছি আসামীদের আটক করার। অনেক চেষ্টার পর সক্ষম হয়েছি। প্রাথমিকভাবে তারা এ হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেছে। আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। আমরা চাই, এ হত্যাকান্ডের সর্বোচ্চ বিচার হউক।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আফসার জানান, ওসি নাসির উদ্দিন মৃধার নির্দেশনায় দীর্ঘ ৪৮ ঘন্টা বিরামহীন অভিযানের পর ওয়াশিম হত্যা মামলার প্রধান দুই আসামীকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। এ হত্যাকান্ডের পর থেকেই তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত ছিল। আসামীরা পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৩০ জুলাই রাতে মতলব উত্তরের নয়াকান্দি শিকিরচর গ্রামে আপন চাচাতো ভাই ওয়াসিমকে পূর্ব বিরোধের জের ধরিয়া আটক দুই আসামী বালু মিজান বেপারী, আরিফ বেপারী ও তার অপর দুই ভাই মিলে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে।

পরদিন সকালে ওয়াসিমের লাশ উদ্ধার করে মতলব উত্তর থানা পুলিশ। ওই দিনই ওয়াসিমের মা বাদী হয়ে মিজানুর রহমান ওরফে বালু মিজানকে প্রধান আসামি করে ৬জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। ঘটনার পর থেকেই আসামিরা পলাতক ছিল।

নিহতের স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার জানায়, রাতে ওয়াসিম ঘরেই ছিল। রাত ১২টার পর তার ফোনে কল আসে, সে (ওয়াসিম) ঘর থেকে বের হওয়ার সময় জানতে চাইলে বলে মিজান ভাই আমাকে ফোন দিছেন কথা শোনার জন্য। এর কিছুক্ষণ পর ওয়াসিমের নম্বরে ফোন দিলে মোবাইল বন্ধ পাই। সারা রাতেও তিনি ঘরে ফেরেননি। সকালে আজাদ এসে ওয়াসিমের খোঁজ করে।

বালু মিজান আটক হওয়ার স্বস্তি প্রকাশ করে নিহত ওয়াসিমের বোন জামাই স্বাধীন মিয়া বলেন, একে একে সকল আসামী আটক হবে। মূল আসামী আটক করতে পারায় পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)