তালহা জুবায়ের :
ভরা মৌসুমেও ইলিশের দেখা নেই চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে। কাঙ্খিত ইলিশ না পেয়ে হতাশ জেলেরা। এর প্রভাব পড়েছে দেশের অন্যতম বড় ইলিশের বাজার চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছ ঘাটে। শুধু স্থানীয় নদীর মাছই নয়, দক্ষিণাঞ্চলের ইলিশের আমদানীও কমেছে আসঙ্কাজনক ভাবে।
আমদানী কম থাকায় সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে ইলিশ। সাধারণ সময়ের চেয়ে প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১শ’ থেকে ২শ’ টাকা বেশি দরে। ইলিশের আমদানী কম থাকায় হতাশ ক্রেতা-বিক্রেতারা। যদিও ইলিশ গবেশকরা বলছেন, অচিরেই এই দূরাবস্থা কেটে যাবে। জেলেদের জালে ধরা দেবে রূপালী ইলিশ।
যদিও ইলিশের এই ভরা মৌসুমে ব্যাপক পরিমানে ইলিশের আমদানী হতো বিগত সময়ে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে হাটাচলা করাই দুস্কর হয়ে পড়তো। সকাল থেকে রাত অবদী মাছ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটতো ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের। কিন্তু এখনকার চিত্রটা পুরোটাই এর উল্টো।
শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বড়স্টেশন মাছ ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, মাছের আমদানী অনেক কম। অধিকাংশ ব্যবসায়ীর আড়তেই ছিলনা ইলিশ। আড়ৎদার ও শ্রমিকরা অনেকটা অলস সময় কাটাচ্ছিলেন।
ইলিশ ব্যবসায়ী আকবর আলী, মো. বিপ্লব ও সম্রাট হোসেন বলেন, এখন ইলিশের ভরা মৌসুম। কিন্তু বাজারে ইলিশের আমদানী নেই বললেই চলে। এই সময়টাতে অন্যান্য বছরে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার মন ইলিশ আমদানী হতো।
কিন্তু বর্তমানে ইলিশ আমনাদী হচ্ছে ৩শ’ থেকে ৪শ’ মন মাত্র। এর ফলে ইলিশের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে কিছুটা। বর্তমানে হাতিয়া, সন্দীপ, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর থেকে কিছু ইলিশ চাঁদপুরে আমদানী হচ্ছে। তবে যেই পরিমানে আমদানী হচ্ছে চাহিদা তার কয়েক গুন বেশি রয়েছে। ভরা মৌসুমে ইলিশ আমদানী না হলে আমাদের অনেক লোকসান গুনতে হবে।
বিক্রেতারা জানান, বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলের ১ কেজি সাইজের ইলিশ প্রতি কেজি ৯শ’-সাড়ে ৯শ’ টাকা, ৮শ’ থেকে ৯শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ সাড়ে ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা এবং ৪শ’ থেকে ৫শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকায়। চাঁদপুরের স্থানীয় নদীর ইলিশ প্রকারভেদে ১শ’ থেকে ২শ’ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ঢাকা ও কুমিল্লা থেকে ইলিশ কিনতে আসা ক্রেতা আসাদুজ্জামান ও আ. রব জানান, চাঁদপুর ইলিশের জন্য বিখ্যাত। তাই চাঁদপুরে এসেছি ইলিশ কিনতে। কিন্তু এসে দেখি ইলিশের আমদানী অনেক কম। দামও প্রতি কেজিতে কয়েকশ’ টাকা বেশি চাচ্ছে বিক্রেতারা। এই ভরা মৌসুমেও ইলিশ সাধারণ ক্রেতাদের নাগালে নেই।
এদিকে চাঁদপুরের পুরানাবাজার ও হরিনা ফেরিঘাট এলাকার জেলেরা জানান, প্রতিদিন ইলিশের সন্ধানে নদীতে যাচ্ছে তারা। কিন্তু ইলিশের দেখা মিলছে না খুব একটা। সারা দিনে জাল বেয়ে যেই পরিমান ইলিশ পাচ্ছে তা দিয়ে তাদের খরচের টাকা তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। এতে করে পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়ছে তারা।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিছুর রহমান বলেন, নদীতে অমাবশ্যা ও পূর্ণিমার উপর ভিত্তি করে জোয়ার-ভাটায় প্রভাব পড়ে। ভরা পূর্ণিমা বা অমাবশ্যার সময়টাকে বলে ভড়াকাতাল। আর ভরা পূর্ণিমা ও অমাবশ্যার মাঝামাঝি সময়টাকে বলে মরাকাতাল। মরাকাতালের সময়টাতে নদীতে জোয়ার-ভাটার প্রভাব কম থাকে।
তিনি বলেন, বর্তমানে মরাকাতাল চলছে। তাই মাছ কিছুটা কম পাচ্ছে জেলেরা। তবে আর কিছুদিন পরেই ভরা পূর্ণিমাতে ইলিশে জেলেদের জাল ভরে উঠবে বলে আশা করি। তাছাড়া নদীর বিভিন্ন স্থানে ডুবোচর ও দূষণের ফলে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে ইলিশের মৌসুমেও জেলেরা তাদের কাঙ্খিত ইলিশ পায় না বলে জানান তিনি।
নিয়ম মেনে নদী শাসন ও দূষণরোধ করতে পারলে চাঁদপুরেও কাঙ্খিত ইলিশ পাবে জেলেরা। বিগত বছরগুলোর ন্যায় এবছরও ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন তিনি।